Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
সম্পাদকীয় ১

Rig বেদ

ছিল ভোট-চুরি, হইয়াছে ভোট-ডাকাতি। বামফ্রন্ট তথা সিপিআইএম-এর যে সম্পদরা তাঁহাদের সুদীর্ঘ শাসনকালে ভোট তছরুপ করিবার ‘বৈজ্ঞানিক’ কৌশলগুলিকে ক্রমশ উন্নত হইতে উন্নততর করিয়া তুলিয়াছিলেন, তাঁহারা আজ নিশ্চয়ই স্তম্ভিত। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলটি তাঁহাদের সেই সৃষ্টিকে অবিশ্বাস্য উচ্চতায় পৌঁছাইয়া দিয়াছেন।

শেষ আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০১৫ ০০:২২
Share: Save:

ছিল ভোট-চুরি, হইয়াছে ভোট-ডাকাতি। বামফ্রন্ট তথা সিপিআইএম-এর যে সম্পদরা তাঁহাদের সুদীর্ঘ শাসনকালে ভোট তছরুপ করিবার ‘বৈজ্ঞানিক’ কৌশলগুলিকে ক্রমশ উন্নত হইতে উন্নততর করিয়া তুলিয়াছিলেন, তাঁহারা আজ নিশ্চয়ই স্তম্ভিত। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলটি তাঁহাদের সেই সৃষ্টিকে অবিশ্বাস্য উচ্চতায় পৌঁছাইয়া দিয়াছেন। দুর্জনে বলিবে, অতলে নামাইয়াছেন, কিন্তু তৃণমূল নেত্রী অবশ্যই তাহাতে কান দিবেন না। প্রথমে কলিকাতা এবং তাহার পরে রাজ্যের আরও একানব্বইটি পুরসভার নির্বাচন চোখে আঙুল দিয়া দেখাইয়া দিল, গণতান্ত্রিক নির্বাচন নামক বস্তুটিকে আপাদমস্তক কলুষিত করিয়া আপন ক্ষমতা এবং দাপট নিরঙ্কুশ রাখাই তাঁহার প্রথম ও প্রধান লক্ষ্য। পশ্চিমবঙ্গের বিবিধ নির্বাচনে শাসক দলের যে আচরণ উত্তরোত্তর প্রকট হইয়া উঠিতেছে, তাহাকে আর দুর্নীতি বা বিকৃতি বলিবার অর্থ হয় না, ইহা এক সর্বগ্রাসী দৌরাত্ম্য। সারদা কেলেঙ্কারির মতোই ইহাও এক লুণ্ঠন। গণতন্ত্রের মহালুণ্ঠন। এই ডাকাতির তদন্ত ও প্রতিকার করিবে, তেমন সিবিআই আজও জন্মায় নাই।

বিবাদ, সংঘর্ষ, গুলি, বোমা, রক্তপাত, মৃত্যু ইত্যাদির যে প্লাবন পুরভোটে দেখা গেল এবং সম্ভবত তাহার উত্তরকাণ্ডেও দেখা যাইবে, তাহা অবশ্যই ক্ষমতার এই দুরাচারের সহিত জড়িত। কিন্তু এই অশান্তি দুরাচারের একটি লক্ষণমাত্র, কখনওই একমাত্র লক্ষণ নয়। বস্তুত, শাসকদের অন্যায় যেখানে কিছুটা বাধার সম্মুখীন, অশান্তির সৃষ্টিও সেখানেই: সেই বাধা বিরোধী রাজনীতির শিবির হইতেই আসুক অথবা ক্ষমতাসীন দলের বিবিধ দ্বন্দ্বমুখর গোষ্ঠী হইতে। এই কারণেই সংঘর্ষের মানচিত্রে উত্তর চব্বিশ পরগনা উজ্জ্বল। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নির্বাচনী দুরাচার সংঘটিত হয় বিনা রক্তপাতে, বিনা সংঘাতে, বিনা প্রতিবাদে। উপর হইতে কোনও অশান্তির চিত্র সেখানে দেখা যায় না, বোঝা যায় না, পরিব্যাপ্ত শান্তিকল্যাণের আবহে ভোট তছরুপ হইয়া যায়। ভোটার তালিকা ধরিয়া ধরিয়া সেই সূক্ষ্ম জালিয়াতির প্রযুক্তি সক্রিয় হয়, তাহার সহিত যুক্ত হয় ভয় দেখাইবার গূঢ় মন্ত্রণা। ইহাকে সন্ত্রাস বলিয়া চেনা যায় না, কিন্তু ইহাও অবশ্যই সন্ত্রাস। সম্যক ত্রাস। সেই ছবি উন্মোচনের সম্ভাবনা রোধ করিতে ভোট-সন্ত্রাসীরা সাংবাদিকদের উপর চড়াও হয়। বিরোধী রাজনৈতিক দল অধিকাংশ এলাকাতেই দুর্বল, অক্ষম, সংগঠনহীন। তাহারা যথেষ্ট প্রতিবাদ বা প্রতিরোধ গড়িয়া তুলিতে পারে না। দুরাচার চরমে ওঠে।

কিন্তু প্রশাসন? পুলিশ? নির্বাচন কমিশন? উত্তর সহজ। পুলিশ প্রশাসন শাসক দলের কুক্ষিগত। তাহাদের উপরমহল হইতে নিম্নস্তর অবধি সর্বত্র একটি মন্ত্রের আধিপত্য: আপনি কিছু দেখেন নাই। যে রাজ্যের রাজধানীতে পুরভোটের তাণ্ডবে পুলিশ গুলিবিদ্ধ হইবার বেশ কিছুক্ষণ পরে নগরপাল বলেন, তিনি কিছু শোনেন নাই, সেখানে কে কাহার ভরসা করিবে? কোথাও কোথাও পুলিশের কোনও কোনও কর্তা বা কর্মী বিবেক এবং দায়িত্ববোধ পুরোপুরি বিসর্জন দিতে পারেন নাই, অতএব তাঁহাদের মার খাইতে হইয়াছে। কোথাও বা, হয়তো নিতান্ত চক্ষুলজ্জাবশতই, তাঁহারা দুঃশাসন বাহিনীকে করজোড়ে সংযত হইবার জন্য মিনতি করিয়াছেন, তাহারা সেই আবেদন ফুৎকারে উড়াইয়া দিয়াছে। আর নির্বাচন কমিশন? এই নির্বাচন পরিচালনার ভার যাহার হাতে ছিল? সমগ্র ভোটপর্বে তাহার আচরণ দেখিয়া মীরা পাণ্ডে নিশ্চয়ই দীর্ঘশ্বাস ফেলিয়াছেন। সৃষ্টিসুখের উল্লাসে সতত আমোদিত মুখ্যমন্ত্রী পশ্চিমবঙ্গে গণতন্ত্রের মহাসংক্রান্তি লইয়া একটি যাত্রাপালা নামাইতে পারেন। বিবেকের ভূমিকায় শ্রীযুক্ত সুশান্তরঞ্জন উপাধ্যায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE