হাওয়াইতে, সকল বাসিন্দার সেলফোনে সকাল আটটা দশ-এ মেসেজ আসিল এই মর্মে: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই রাজ্যটির দিকে ব্যালিস্টিক মিসাইল ধাইয়া আসিতেছে, এই মুহূর্তে নিরাপদ আশ্রয় গ্রহণ করুন। বহু মানুষ ছুটিতে লাগিলেন, কেহ আর্তনাদ করিলেন, কেহ তাঁহার শিশুদের স্কুল হইতে আনিবেন, না সেই সময়টুকুও পাইবেন না, সেই দোলাচলে ভুগিতে লাগিলেন, কেহ ফোনে শেষ বারের জন্য আত্মীয়ের সহিত কথা বলিতে আকুল হইলেন। সব মিলাইয়া ‘শেষের সে দিন ভয়ংকর’ বাচক পরিস্থিতি। কোনও বাস যাত্রীদের লইয়া যাইল একটি কংক্রিট বাংকারে, সে স্থানে আবার ফোনের সিগনাল মেলা অসম্ভব। স্কুলে শিক্ষকরা ছাত্রছাত্রীদের জিমনাসিয়াম-এ জড়ো করিয়া ভাবিতে লাগিলেন, ইহা কি যথেষ্ট নিরাপদ? আটত্রিশ মিনিট পরে জানানো হইল, সতর্কীকরণটি ছিল ভুল। ‘হাওয়াই ইমার্জেন্সি ম্যানেজমেন্ট এজেন্সি’র এক কর্মচারী একটি ভুল বোতাম টিপিয়া দেওয়ায়, এই কাণ্ড হইয়াছিল। হাওয়াই এমনিতেই উৎকণ্ঠায় রহিয়াছে, গত বৎসর ডিসেম্বর হইতেই সেইখানে মাসিক যুদ্ধবিমান-মহড়া চলিতেছে, উচ্চগ্রামে সাইরেন-ধ্বনিসহ। আমেরিকার রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প ও উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রপ্রধান কিম জং উন পস্পরের প্রতি পারমাণবিক যুদ্ধের হুমকি হানিবার পরেই এই ব্যবস্থা। যেখানে সকলেই ভাবিতেছে যুদ্ধ লাগিতেই পারে, এবং সকলেই জানে এমন যুদ্ধ লাগিলে সার্বিক ধ্বংসের সম্ভাবনা, সেখানে এই একটি মেসেজে যে বহু লোকের হৃদ্রোগ বাধিয়া যায় নাই, ইহাই বিস্ময়ের।
অবশ্য এই ধরনের ভুল হইতে একটি গোটা যুদ্ধই বাধিয়া যাইতে পারে। দীর্ঘ আটত্রিশ মিনিট তো লোকে ভাবিতেছিলেন, ইহা সত্য। যদি উচ্চপদস্থ কিছু অবিমৃশ্যকারী মানুষও এমনটিই ভাবিতেন, এবং একটি ফিরতি-ক্ষেপণাস্ত্র ছাড়িয়া দিতেন উত্তর কোরিয়ার পানে, তাহা হইলেই পৃথিবীর সর্বনাশ সমুৎপন্ন হইত। ১৯৮৩ সালে কোরিয়ার একটি বিমান সোভিয়েট আকাশসীমায় ঢুকিয়া পড়ায়, সেটিকে মার্কিন গুপ্তচর-বিমান ভাবিয়া গুলি করিয়া বিনাশ করা হয়। ইহার পর, এই ঘটনাকে সোভিয়েটের পক্ষে অনিচ্ছাকৃত ভুল বলিয়া মানিয়া লইতেই আমেরিকা সহজে সম্মত হয় না এবং প্রায় যুদ্ধের সম্ভাবনা দেখা দেয়। পৃথিবীতে বহু দেশের পরস্পরের প্রতি সন্দেহ ও তীব্র বিদ্বেষের বাতাবরণে যদি অকস্মাৎ একটি ভুল ও প্ররোচক তথ্য পরিবেশিত হয়, তাহা পূর্বপ্রস্তুত বারুদস্তূপে স্ফুলিঙ্গবৎ। এই প্রেক্ষিতে আগ্রাসী কোনও সিদ্ধান্ত-কর্তা নিজ দেশকে রক্ষা করিতে অতি ব্যাকুল হইলে, সামূহিক ধ্বংস বিচিত্র নহে। ইহাও বুঝিতে হইবে, প্রবল উন্নত ক্ষেপণাস্ত্র-আক্রমণের ক্ষেত্রে, প্রত্যাঘাত হানিতে চাহিলে, সিদ্ধান্ত লইবার সময়ও অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত। ইদানীং জ্ঞাপন-প্রযুক্তিও উন্নত হইয়া, বিপদ বর্ধিত হইয়াছে। একটি সুইচ ভুল টিপিলেই সকলকে মুহূর্তে আতঙ্কিত করা যাইতেছে। সমস্ত মানুষ একযোগে অসহায় দিগ্বিদিকজ্ঞানশূন্য হইলে, সমষ্টিগত ত্রাসের সংক্রমণ প্রশাসনকেও বিহ্বল করিয়া তুলিতে পারে। বিজ্ঞান আমাদের দিয়াছে তড়িৎক্রিয়া, কিন্তু সহজ করিয়াছে হিস্টিরিয়া। হয়তো ‘আমার সুইচ তোর সুইচ অপেক্ষা বড়’ এই বালকোচিত অহং ঘোষণা হইতে স্বল্প বিরত থাকিয়া, কাহার সুইচ ঠিক লোকের হস্তে সুরক্ষিত, তাহা লইয়া মাথা ঘামাইলে পৃথিবী সুস্থিত হয়!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy