Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
সম্পাদকীয় ২

গুজবের ডিম

গুজবের জবাব নাই। তাহার মহিমায় এক বার গণেশ দুধ খাইয়াছিল, এ বার প্লাস্টিকের ডিম আমদানি হইল। সত্য না তাহা মিথ্যা ওই জিজ্ঞাসে কোন জন? পাথরের মূর্তি কী করিয়া দুধে চুমুক দিতে পারে, সে প্রশ্ন কেহ করে নাই।

শেষ আপডেট: ০৪ এপ্রিল ২০১৭ ০০:০০
Share: Save:

গুজবের জবাব নাই। তাহার মহিমায় এক বার গণেশ দুধ খাইয়াছিল, এ বার প্লাস্টিকের ডিম আমদানি হইল। সত্য না তাহা মিথ্যা ওই জিজ্ঞাসে কোন জন? পাথরের মূর্তি কী করিয়া দুধে চুমুক দিতে পারে, সে প্রশ্ন কেহ করে নাই। কৃত্রিম ডিম প্রস্তুত করিবার প্রযুক্তি আবিষ্কৃত হইয়াছে কি না, সে প্রশ্নও বিচলিত করে নাই। সাধারণ ক্রেতা, মেয়র পারিষদ হইতে পুলিশ, সকলেই গুজবে ভাসিয়াছে। প্লাস্টিক ডিম বিক্রির অপরাধে চার ব্যবসায়ী গ্রেফতার অবধি হইয়া গিয়াছেন। এক অর্থে দুই দশক পূর্বে গণেশের দুধপানের অপেক্ষা সম্প্রতি নানা রাজ্যে কৃত্রিম ডিমের গুজব আরও মারাত্মক। ১৯৯৫ সালে ভারতে ইন্টারনেটের ব্যবহার এত ছড়াইয়া পড়ে নাই, বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের এত বৈচিত্র এবং এমন বিস্তারও ঘটে নাই। ফলে জনজীবনে কোনও কিছু ঘটিলে তৎক্ষণাৎ যথাযথ তথ্য যাচাই সহজ ছিল না। অন্যের কথার উপর নির্ভরশীলতা ছিল বেশি। এখন গণমাধ্যমের অভূতপূর্ব প্রসার ঘটিয়াছে, সেই সঙ্গে হাতে-ধরা মোবাইল ফোনটির মাধ্যমেই অনলাইনে যে কোনও সংবাদ বা তথ্য যাচাই করা যাইতে পারে। বিশেষত বৃহৎ শহরে তথ্য-বিচ্ছিন্নতার প্রশ্নই ওঠে না। প্লাস্টিকের ডিম কোথাও মিলিয়াছে কি না, ডিম কৃত্রিম উপায়ে আদৌ নির্মিত হইতে পারে কি না, সে তথ্য খুঁজিবার কোনও উপায়ই কি ছিল না?

চিনা ডিম, প্লাস্টিক ডিম বা রাসায়নিক ডিম সম্পর্কে উদ্বেগ-আশঙ্কা যে মিথ্যা প্রমাণিত হইয়াছে, সে বিষয়ে যথেষ্ট তথ্য ইতিমধ্যেই সংগৃহীত হইয়াছে। ইতিপূর্বে কেরলে রব উঠিয়াছিল, চিন হইতে আমদানিকৃত প্লাস্টিক ডিম বাজারে ছড়াইয়া গিয়াছে। জনমতের চাপে সেই সকল ডিমের বেশ কিছু নমুনা সরকারি পরীক্ষাগারে পাঠানো হইয়াছিল। দেখা গিয়াছে, তাহার সবই আদি ও অকৃত্রিম প্রাকৃতিক ডিম। কৃত্রিম উপায়ে ডিম তৈরি সম্ভব নহে, এমনকী স্বাভাবিক ডিমের অভ্যন্তরে বাহির হইতে কোনও কিছু প্রবিষ্ট করাও অসম্ভব, বার বার বলিয়াছেন বিশেষজ্ঞরা। দক্ষিণের রাজ্যগুলিতে যথেষ্ট ডিম উৎপাদন হয়, চিন বা অপর কোনও দেশ হইতেই তাহার আমদানির প্রয়োজন নাই, তেমন লাইসেন্স-ও কোনও ব্যবসায়ীর নাই। এই সকল তথ্যই প্রচারিত হইয়াছিল। প্লাস্টিকের অস্তিত্বের প্রমাণ হিসাবে যে লক্ষণগুলি দেখানো হইয়াছিল, যেমন ডিমের কুসুমটি অক্ষত না থাকা, বা সহজে ভাঙিয়া যাওয়া, বিশেষজ্ঞদের মতে তাহা ডিম সংরক্ষণ ও পরিবহণের কারণে ডিমের অভ্যন্তরীণ গঠনে পরিবর্তনের ফল।

এই সকল তথ্যই সহজলভ্য। কিন্তু কেহ তাহা খুঁজিয়া দেখে নাই। গণেশের দুগ্ধপানে তবু ভক্তের আবেগের একটি ভূমিকা আছে, যাহা তথ্য-যুক্তিকে সহজেই পরাহত করিয়া দেয়। কৃত্রিম ডিম লইয়া উদ্বেগ নিতান্ত জাগতিক বিষয়, তাহাতে আধিদৈবিক কোনও মাত্রা নাই। অতএব তথ্য খুঁজিবার আগ্রহ থাকিবার কথা। আমজনতার যদি তাহা না-ও থাকে, অন্তত পুলিশ-প্রশাসনের সে আগ্রহ থাকিবে, ইহা প্রত্যাশিত। তাহারাও যে গুজবের বশবর্তী হইয়া চার জন ব্যবসায়ীকে কেবল সন্দেহের বশে গ্রেফতার করিল, ইহা চরম নিন্দনীয়। নাগরিক অধিকারের কোনও মূল্য যে পুলিশ-প্রশাসনের নিকট নাই, অগ্রপশ্চাৎ চিন্তা না করিয়াই তাহারা নাগরিকের স্বাধীনতা খর্ব করিতে পারে, তাহা ফের প্রমাণিত হইল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Plastic Egg Rumor
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE