Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
Private Hospitals

সংযত না হলে আরও বড় এবং আশাতীত বিপদ অপেক্ষায় রয়েছে

অপরিসীম দুঃসাহস? নাকি অদম্য লালসা? এই দু’য়ের কোনও একটা তো হতেই হবে। না হলে মুখ্যমন্ত্রীর কাছ থেকে অত্যন্ত কঠোর সতর্কবার্তা পাওয়ার রেশ গনগনে থাকতে থাকতেই সাত দিনে সাত লক্ষেরও বেশি বিল রোগীর পরিবারের হাতে ধরিয়ে দেওয়া সম্ভব নয়।

মোবাইলেই অ্যাপোলো কর্তৃপক্ষকে ধমক মদন মিত্রের। নিজস্ব চিত্র।

মোবাইলেই অ্যাপোলো কর্তৃপক্ষকে ধমক মদন মিত্রের। নিজস্ব চিত্র।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০২:৪৯
Share: Save:

অপরিসীম দুঃসাহস? নাকি অদম্য লালসা? এই দু’য়ের কোনও একটা তো হতেই হবে। না হলে মুখ্যমন্ত্রীর কাছ থেকে অত্যন্ত কঠোর সতর্কবার্তা পাওয়ার রেশ গনগনে থাকতে থাকতেই সাত দিনে সাত লক্ষেরও বেশি বিল রোগীর পরিবারের হাতে ধরিয়ে দেওয়া সম্ভব নয়।

জরুরি তলব দিয়ে বেসরকারি হাসপাতালগুলির শীর্ষকর্তাদের টাউন হলে হাজির করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সিংহ ভাগের জন্যই কঠোর বার্তা ছিল সরকার প্রধানের কণ্ঠে। সুনির্দিষ্ট ভাবে চিহ্নিত করে বিশেষ কয়েক জনকে কঠোরতর বার্তা দেওয়া হয়েছিল। তাঁদেরই অন্যতম ছিলেন অ্যাপোলো হাসপাতালের এক শীর্ষকর্তা। সেই ব্যক্তি আবার হুঁশিয়ারির মুখোমুখি হলেন। মুখ্যমন্ত্রীর কাছ থেকে আসেনি এ দিনের হুঁশিয়ারি। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর দলের অত্যন্ত পরিচিত মুখ মদন মিত্র গণমাধ্যমের ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে ফোন করে আবার সেই ব্যক্তিকেই ধমক দিলেন। এই দুর্গতি অবধারিত ছিল।

মদন মিত্র যা করলেন এবং যে ভঙ্গিতে করলেন, তা মোটেই বাঞ্ছনীয় নয়। তিনি সরকার নন, তিনি প্রশাসন নন, তিনি পুলিশ নন। কিন্তু একাধারেই তিনি জনগন, আইন ও প্রশাসনের প্রতিভূ হয়ে ওঠার চেষ্টা করলেন, বিচারের ভার নিজের হাতে তুলে নিলেন, রায়ও শুনিয়ে দিলেন। আইনের শাসন রয়েছে যে দেশে, সে দেশে এই চিত্র কাঙ্ক্ষিত নয়। এই ছবি সমর্থনযোগ্যও নয় কোনও ভাবেই। কিন্তু বেসরকারি হাসপাতালগুলির বিরুদ্ধে রোষ সাধারণ্যে যে পর্যায়ে পৌঁছেছে এবং মুখ্যমন্ত্রীর চরম-বার্তার কয়েক দিনের মধ্যেই যে ভাবে একটি বেসরকারি হাসপাতালের চরম অমানবিক মুখ আবার প্রকাশ্যে এসেছে, তাতে মদন মিত্রের আচরণ দেখে বহু মানুষ স্বাভাবিক ভাবেই বাহবা দিয়েছেন, হরষিত হয়েছেন, অকুণ্ঠ সমর্থন প্রকাশ করেছেন। রাজনীতিক হিসেবে এতে মদন মিত্রের উল্লসিত হওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। সহজে বাহবা কুড়নোর যে নতুন পথটির সন্ধান তিনি পেলেন, সে পথে আবার হাঁটার লোভ তিনি সংবরণ করতে পারবেন কি না, তা নিয়ে সংশয়ও যথেষ্টই রয়েছে। কিন্তু সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার স্বার্থে মদন মিত্রদের সংযত হওয়ার প্রয়োজনও রয়েছে।

সংযমের প্রশ্নই যখন উঠল, তখন আবার বলতে হচ্ছে, বেসরকারি হাসপাতালগুলিকে কিন্তু এ বার সংযত হতেই হবে। মুখ্যমন্ত্রীর স্পষ্ট বার্তাটি পাওয়ার পর থেকেই সংযমটা দেখা যাবে বলে অনেকেই আশা করেছিলেন। কিন্তু সে আশায় জল ঢেলে একটি হাসপাতাল ইতিমধ্যেই দেখিয়ে দিল, অবাধ মুনাফাবাজির যে সাম্রাজ্য গড়ে উঠেছে দীর্ঘ দিন ধরে, কারও কথাতেই সে সাম্রাজ্যকে সর্বৈব জলাঞ্জলি দেওয়া সহজ নয়। হাসপাতালগুলোর এই মানসিকতার কারণেই কিন্তু মদন মিত্র অতি-সাংবিধানিক হয়ে উঠে করতালি কুড়নোর অবকাশ পেলেন। এই মুহূর্তে সংযত না হলে আরও বড় এবং আশাতীত বিপদ অপেক্ষায় রয়েছে। পোড় খাওয়া হাসপাতাল ব্যবসায়ীরা সে অশনি-সঙ্কেতটা অন্তত পড়তে পারছেন বলে আশা করা যায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Anjan Bandyopadhyay News Letter Madan Mitra
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE