Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪
সম্পাদকীয় ২

কাঁটালি কলা

রক্তে টান পড়িয়াছে? ভয় নাই, পুলিশ আছে। সরকারি কর্তাদের নির্দেশ, রক্তের সংকট কাটাইতে রাজ্যের থানাগুলিতে শিবির করিয়া রক্ত সংগ্রহ করিতে হইবে।

শেষ আপডেট: ২৪ মে ২০১৭ ০০:২৪
Share: Save:

রক্তে টান পড়িয়াছে? ভয় নাই, পুলিশ আছে। সরকারি কর্তাদের নির্দেশ, রক্তের সংকট কাটাইতে রাজ্যের থানাগুলিতে শিবির করিয়া রক্ত সংগ্রহ করিতে হইবে। ইহা এক বৃহত্তর সংকটের ইঙ্গিত। রাজ্যে সরকারি ব্লাড ব্যাঙ্কের সংখ্যা চৌষট্টি। জেলা ও মহকুমা হাসপাতাল তো বটেই, গ্রামীণ হাসপাতাল এবং ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলিতেও ব্লাড ব্যাঙ্ক রহিয়াছে। এতগুলি প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা থাকিতেও কেন বিকল্প ব্যবস্থার প্রয়োজন? রক্ত সংগ্রহে তাহারা ব্যর্থ কেন? সম্প্রতি কাঁথি মহকুমা হাসপাতাল প্রমাণ করিয়াছে, উদ্যোগ ও সাংগঠনিক দক্ষতা থাকিলে রক্তের অভাব হইবে না। সংবাদে প্রকাশ, ব্লাড ব্যাঙ্কের পাঁচ কর্মীর উদ্যোগেই ইহা সম্ভব হইয়াছে। ইহাদের চার জনই অস্থায়ী কর্মী, নাই মেডিক্যাল অফিসার, নার্স, করণিক। কিন্তু ওই পাঁচ কর্মী নিজেদের কর্তব্য বিস্মৃত হন নাই। এলাকার সকল রক্তদান শিবিরের উদ্যোক্তাদের তালিকা করিয়াছেন, তাঁহাদের সহিত যোগাযোগ রাখিয়া, শিবিরের দিন স্থির করিয়া নিয়মিত রক্ত সংগ্রহ করিয়াছেন। ইহার জন্য সূক্ষ্ম দক্ষতার প্রয়োজন হয় নাই। কেবল কর্তব্যের প্রতি অনুগত থাকিলেই সময়মতো যথেষ্ট রক্ত সংগ্রহ করা সম্ভব।

কাঁথি যাহা পারে, আরও উন্নত পরিকাঠামো লইয়াও বড় বড় হাসপাতালগুলি তাহা কেন পারে না? যদি তাহা ব্লা়ড ব্যাঙ্কের কর্মীদের ব্যর্থতা হয়, তবে তাহাদের কৈফিয়ৎ তলব করা প্রয়োজন। যদি তাহা যথেষ্ট কর্মী বা সরঞ্জামের অভাবে হয়, তবে স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদের জবাবদিহি করিতে হইবে। সকল হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির সহিত কোনও এক জনপ্রতিনিধি যুক্ত রহিয়াছেন। তাঁহারও কি এ বিষয়ে দায় নাই? প্রতি বৎসরই গ্রীষ্মে রক্তের আকাল হয়। অথচ যথেষ্ট সময় নিয়া পরিকল্পনা করিলে সংকট এড়ানো সম্ভব। রক্তদাতার অভাব নাই। রাজ্যে রক্তদান আন্দোলনের ঐতিহ্য রহিয়াছে। কিন্তু কখনও রক্ত সংগ্রহের জন্য সরকারি হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ দল পাওয়া যায় না বলিয়া শিবির বাতিল হয়। কখনও যথাযথ সংরক্ষণ ব্যবস্থার অভাবে সংগৃহীত রক্ত ফেলিয়া দিতে হয়। এমন অব্যবস্থাই রক্ত সংকটের কারণ। পুলিশ দিয়া তাহার কিনারা হইবে না।

বস্তুত থানায় রক্তসংগ্রহের শিবির করিলে হিতে বিপরীত হইবার আশঙ্কা থাকে। পুলিশের সংখ্যা কম, কাজ অসংখ্য। অবরোধ তুলিতে, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ করিতে, পূজার ভিড় সামলাইতে, রাজনৈতিক সভা চালাইতে, সকল কাজে ভরসা পুলিশ। নৈমিত্তিক কাজ সারিতে তাহার নিত্য দিনের কর্তব্যে ফাঁক রহিয়া যায়। তাহার বিপদ কম নহে। পুলিশ ‘ভেরিফিকেশন’-এ বিলম্ব হইলে চাকরি পাকা হয় না, হাতে পাসপোর্ট পাইতে দেরি হয়। তদন্তে দেরি হইলে চার্জশিট দাখিল হয় না, মামলা ফাঁসিয়া যায়। অভিযুক্তকে আদালতে হাজির করিবার পুলিশ না মিলিলে জামিন হয় না। মামলার দিন পুলিশ সাক্ষ্য দিতে উপস্থিত না থাকিলে বিচার পিছাইয়া যায়। অভিযুক্ত ও অভিযোগকারী, দু’পক্ষকেই তাহার মূল্য চুকাইতে হয়। অথচ কখনও পোলিয়ো শিবির, কখনও ফুটবল প্রতিযোগিতা, কখনও পথশিশুদের সাক্ষরতা, পুলিশের কর্তব্য দীর্ঘ হইতেছে। সর্বঘটে কাঁটালি কলার ন্যায় পুলিশকে সর্বত্র ব্যবহার বন্ধ হউক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

police Duty Blood Donation Camp
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE