নির্মল মাজি।—ফাইল চিত্র।
পারিষদ দল যে সর্বদাই বাবুর শতগুণে বলে থাকে, এ কথা প্রবাদপ্রতিম হয়ে উঠেছে। নির্মল মাজি আরও একবার তার প্রমাণ দিলেন, আপ্তবাক্যটাকে আরও বিশ্বাসযোগ্য করে তুললেন।
দেশের এবং দশের প্রতি কতটা দায়বদ্ধ থাকার কথা রাজনীতিকদের, নিজেদের বিশ্বাসযোগ্যতাকে কোন স্তরে উন্নীত করা রাজনীতিকদের কর্তব্য, সে প্রসঙ্গে যাচ্ছিই না। সে প্রসঙ্গে বিস্তর আলোচনা, বিতর্ক এবং বিতণ্ডা হয়েছে। ইতিবাচক কোনও ফল টের পাওয়া যায়নি। ‘দায়বদ্ধতা’ বা ‘বিশ্বাসযোগ্যতা’র মতো শব্দ অধিকাংশ রাজনীতিকদের কাছেই এ যুগে কয়েকটা কেতাবি কথা। বাস্তবে ওই ‘কেতাবিআনা’র প্রয়োগকে অপ্রয়োজনীয় বা অসম্ভব বলেই মনে করেন এখনকার সিংহভাগ রাজনীতিক। কিন্তু নির্মল মাজি তো শুধু রাজনীতিক নন। তিনি তো একজন চিকিৎসকও। দায়িত্বপূর্ণ এবং সেবাভিমুখী একটি পেশায় থেকে ডেঙ্গি প্রসঙ্গে এমন চূড়ান্ত অযৌক্তিক এবং দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য তাঁকে কতটা মানাবে, কথাগুলো বলার আগে তা একবার ভেবে নেওয়া উচিত ছিল নির্মল মাজির।
আরও পড়ুন: হু-র পরামর্শে রাজ্য কি কান দিচ্ছে, উঠছে প্রশ্ন
ডেঙ্গির প্রকোপ নিয়ন্ত্রণে রাজ্য প্রশাসনের ব্যর্থতা এবং সে ব্যর্থতা ঢেকে রাখার নিরন্তর অপপ্রয়াস ইতিমধ্যেই শোরগোল ফেলে দিয়েছে। ডেঙ্গির প্রকোপ আসলে বঙ্গজ নয়, প্রমোদসফরে ভিন্ রাজ্যে গিয়ে বাঙালিরা ডেঙ্গির মশার কামড় খাচ্ছেন এবং রোগাক্রান্ত হয়ে রাজ্যে ফিরছেন প্রশাসনের তরফে এমন তত্ত্ব খাড়া করার চেষ্টা আগেই হয়েছিল। কিন্ত খুব দৃঢ় ভঙ্গিতে নয়। বরং ঈষৎ মৃদু ভঙ্গিতেই সে তত্ত্ব সামনে আনার চেষ্টা হয়েছিল। তাতেই সমালোচনার ঝড় ওঠে, প্রশাসনও যেন ভিন্ রাজ্য থেকে ডেঙ্গি আসার তত্ত্বকে প্রতিষ্ঠা দেওয়ার পথ থেকে কিয়ৎ পিছু হঠে। কিন্তু নির্মল মাজি বুঝিয়ে দিলেন, সমালোচনার মুখে পড়ে প্রশাসন থমকে দাঁড়ালেও তিনি অদম্য। বুঝিয়ে দিলেন, প্রশাসনের খাড়া করা যে তত্ত্ব প্রায় সর্বস্তরে সমালোচিত হচ্ছে, শতগুণে এবং শতমুখে উচ্চারণ করে সে তত্ত্বকেই প্রতিষ্ঠা দেওয়ার চেষ্টা করতে তাঁর একটুও অস্বস্তি হয় না।
বাংলার বাইরে যাঁরা বেড়াতে যাচ্ছেন, তাঁরা অত্যন্ত অসতর্কতার পরিচয় দিচ্ছেন, আবর্জনার স্তূপের কাছাকাছি থাকছেন, মশারি ছাড়া ঘুমোচ্ছেন, মশার কামড় খাচ্ছেন, অসুস্থ হচ্ছেন, তার পরই বাক্স-প্যাঁটরা গুছিয়ে বাংলায় ফিরে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে যাচ্ছেন— নির্মল মাজির বক্তব্যের সারকথা এমনই। অত্যন্ত জোর দিয়েই কথাগুলো বলেছেন তিনি। প্রশ্ন হল, ভিন্ রাজ্যের মশারা তা হলে কি বেছে বেছে হাবরা, অশোকনগর, দেগঙ্গার ‘বাঙালির পর্যটকদেরই’ কামড়াচ্ছে? নাকি হাবরা, অশোকনগর বা দেগঙ্গার লোকজনই মূলত ভিন্ রাজ্যে বেড়াতে যাচ্ছেন? এ সব প্রশ্নের সদুত্তর নির্মল মাজির কাছে নেই বলেই আশা করা যায়। তবে উত্তর রয়েছে কি না, তা নিয়ে নির্মলবাবু নিজে খুব ভাবিত হবেন বলে মনে হয় না।
ডেঙ্গি তথা মশাবাহিত রোগের প্রকোপকে কেন্দ্র করে সাম্প্রতিক কালের সবচেয়ে বড় বিতর্কের মধ্যে রয়েছে রাজ্য সরকার। মোকাবিলার পথ খোঁজা সর্বাগ্রে জরুরি। কিন্তু প্রশাসন খুঁজছে চাপা দেওয়ার উপায়। পরিস্থিতি স্বাভাবিক কারণেই জটিলতর হচ্ছে। এতে রাজ্য সরকারের ভাবমূর্তি যে একটুও উন্নীত হচ্ছে না, সে কথা নবান্নের শীর্ষ মহলের বোঝা উচিত। চিকিৎসক হয়েও এক রাজনীতিক এমন মন্তব্য করছেন, যাকে প্রলাপ বলে ভুল হতে পারে। তাঁর বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ হয় না। কিন্তু এক চিকিৎসক হাসপাতালগুলির করুণ দশা এবং ডেঙ্গি মোকাবিলা পরিকাঠামোর অপ্রতুলতার কথা তুলে ধরে সাসপেন্ড হয়ে যান। এ কিন্তু বড়ই দৃষ্টিকটূ লাগে। এখনও যদি ভুলটা বুঝতে না পারে প্রশাসন, এখনও যদি ত্রুটি সংশোধনের কথা না ভাবে বিপদ কিন্তু আরও বাড়বে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy