Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
সম্পাদকীয় ২

সুসংবাদ, কিন্তু...

উৎপাদন ক্ষেত্র হইতে ভাল বৃদ্ধির হারের সংবাদ পাওয়া গিয়াছে। তাহার একটি কারণ জিএসটি। বৎসরের প্রথম ত্রৈমাসিকে উৎপাদন সংস্থাগুলির লক্ষ্য ছিল, জিএসটি চালু হইবার পূর্বে গুদাম খালি করা।

শেষ আপডেট: ০২ ডিসেম্বর ২০১৭ ০০:২১
Share: Save:

টানা পনেরো মাস, অর্থাৎ পর পর পাঁচটি ত্রৈমাসিকে দেশের অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের বৃদ্ধির হার শুধুই কমিয়াছিল। গত ত্রৈমাসিকে তাহা দাঁড়াইয়াছিল ৫.৭ শতাংশে। তাহার আগের তিন বৎসরে আর্থিক বৃদ্ধির হার কখনও এতখানি নামিয়া যায় নাই। সেই প্রেক্ষিতে বর্তমান ত্রৈমাসিকের পরিসংখ্যান স্বস্তির সুবাতাস বহিয়া আনিল বলিলে অতি সামান্যই অত্যুক্তি হয়। ৬.৩ শতাংশ হারে বৃদ্ধি লইয়া অরুণ জেটলিরা দৃশ্যত সন্তুষ্ট। যে অর্থনীতি আপন বেগেই প্রায় ৮ শতাংশ হারে বাড়িতেছিল, কোনও আন্তর্জাতিক সংকট বা ধাক্কা ব্যতিরেকেই তাহাকে তলানিতে লইয়া যাইবার পর ফের খানিক বাড়াইতে সক্ষম হইলে উৎফুল্ল হওয়া শোভন কি না, এই প্রশ্নটি তাঁহাদের নিকট প্রীতিকর ঠেকিবে না। বরং, বিশেষজ্ঞদের সহিত গলা মিলাইয়া তাঁহারা বলিতে পারেন, উৎপাদন ক্ষেত্রে বৃদ্ধির হার হইতে স্পষ্ট, অর্থনীতি ক্রমে নোট বাতিলের ধাক্কা সামলাইয়া উঠিয়াছে। কিন্তু, ধাক্কাটি দেওয়ার আদৌ কী প্রয়োজন ছিল? অর্থমন্ত্রী জানাইয়াছেন, ভারত সাত হইতে আট শতাংশ হারে বৃদ্ধির কক্ষপথে পৌঁছাইবে এবং সেখানেই থাকিবে। সুসংবাদ, কারণ নোট বাতিলের চোটে গত এক বৎসর ভারত শুধু নামিয়াছে। প্রশ্ন হইল, সাত হইতে আট শতাংশের কক্ষে তো ভারত ছিলই। অর্থনীতি লইয়া ছেলেখেলা না করিলে বরং আরও উন্নতির সম্ভাবনা ছিল। অর্থনীতির স্বাস্থ্যোদ্ধারের কৃতিত্ব যদি জেটলিরা লইতে চাহেন, তবে এই বেলায় স্বাস্থ্যভঙ্গের দায়টিও স্বীকার করিয়া লওয়াই ভাল। নচেৎ, সত্যভাষণ হইবে না।

উৎপাদন ক্ষেত্র হইতে ভাল বৃদ্ধির হারের সংবাদ পাওয়া গিয়াছে। তাহার একটি কারণ জিএসটি। বৎসরের প্রথম ত্রৈমাসিকে উৎপাদন সংস্থাগুলির লক্ষ্য ছিল, জিএসটি চালু হইবার পূর্বে গুদাম খালি করা। অতএব, উৎপাদন অপেক্ষা বণ্টনের দিকেই জোর পড়িয়াছিল। বর্তমান ত্রৈমাসিকে স্বভাবতই খেলা পাল্টাইয়াছে। সংস্থাগুলি ফের উৎপাদন বাড়াইতে আরম্ভ করিয়াছে। তবে, এই বৃদ্ধির হার দেখিয়াই জিএসটি-র নেতিবাচক প্রভাব কাটিয়া যাওয়ার কথা ঘোষণা করিয়া দিলে পরে সেই কথা গিলিতে হইতে পারে। প্রকৃত ছবিটি কী দাঁড়ায়, তাহা দেখিবার জন্য অর্থবর্ষের শেষ অবধি অপেক্ষা করাই বুদ্ধিমানের কাজ হইবে। পদার্থবিদ্যার তত্ত্ব বলে, একেবারে তলানিতে পৌঁছাইলে ধাক্কা খাইয়া ফের উঠিয়া আসাই পদার্থের ধর্ম। সেই তত্ত্বটিকে মানিয়া চলিবার দায় অর্থনীতির নাই। অতএব, সতর্ক থাকা ভাল।

আরও একটি প্রশ্ন থাকিতেছে। জিএসটি চালু হইবার ফলে জাতীয় আয়ের হিসাব কষিবার পদ্ধতিতে কিছু পরিবর্তন করিতে হইয়াছে। যেমন, বাণিজ্য ক্ষেত্রের হিসাবটি কষিবার জন্য বিক্রয় করের পরিসংখ্যান দেখিয়া লওয়াই প্রথা। কিন্তু, এই ত্রৈমাসিকে তাহা সম্ভব হয় নাই, কারণ জিএসটি-র ফলে বিক্রয় কর বস্তুটিরই আর অস্তিত্ব নাই। অতএব, সরকারি পরিসংখ্যানবিদদের ঘুরপথে হিসাব কষিতে হইয়াছে। তাঁহারা পেট্রোলিয়াম পণ্যের অনুপাতে হিসাব কষিয়াছেন (এই গোত্রের পণ্য জিএসটি-র আওতার বাহিরে আছে)। কিন্তু, আন্তর্জাতিক বাজারে এই পণ্যের দাম চড়িতেছে। ফলে, বাণিজ্যের বৃদ্ধির যে হিসাব মিলিয়াছে, তাহা বাস্তবের তুলনায় বেশি হইতেই পারে। সেই হিসাব লইয়া বেশি উল্লসিত না হইলেই মঙ্গল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

national income GST
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE