পরম্পরা বহাল। পুর নির্বাচনটাও অবাধ হল না। হিংসা, আগুন, ছাপ্পা, বুথ দখল, বিরোধী এজেন্টদের বসতে না দেওয়া, ইভিএম ছিনতাই— দিনভর এমনই সব ছবি ঘোরাফেরা করল পুরসভা নির্বাচনকে ঘিরে। কোনও নির্বাচনই কি অবাধে হবে না এ রাজ্যে? প্রশ্নটা নতুন নয়। একটা করে নির্বাচন আসে, পেরিয়ে যায়, প্রশ্নচিহ্নটা আরও বড় হয়।
নির্বাচনে হিংসার এই প্রবণতাটা আসলে আমাদের রাজনৈতিক রক্তে মিশে গিয়েছে। ভোট এলেই পশ্চিমবঙ্গকে যে পরিমাণ হিংসার সাক্ষী হতে হয়, অন্য কোনও রাজ্যকেই ততটা হিংসাত্মক ঘটনাপ্রবাহের মধ্যে দিয়ে যেতে হয় না সম্ভবত। রাজনৈতিক মানসে সর্বগ্রাসী দখলদারির প্রবণতাই এ সবের কারণ। একের পর এক নির্বাচনে জয় এলেও এ রাজ্যে বিজয়ী শক্তি সন্তুষ্ট হয় না। নিরঙ্কুশ কর্তৃত্বকে আরও নিরঙ্কুশ করা, আগের চেয়েও বেশি দখলদারি কায়েম করা, প্রতিপক্ষকে নিঃশেষে কোণঠাসা করে দেওয়া— ভোটের তাৎপর্য এ রাজ্যে এমনই অনেকটা।
গণতন্ত্রে ভোটযুদ্ধ থাকেই, তাকে ঘিরে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মধ্যে সংঘাতও থাকে। কিন্তু সে হল দুই বা ততোধিক মতাদর্শের মধ্যে সংঘাত, দুই বা ততোধিক ইস্তেহারের মধ্যে সংঘাত। গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়া কোনও অর্থেই শাসক আর বিরোধীর মধ্যে অগণতান্ত্রিক কুস্তির বা রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের মঞ্চ নয়।
দখলদারির মানসিকতা নিয়ে যাঁরা নির্বাচনে নামেন, তুমুল বলপ্রয়োগ এবং হিংসায় সওয়ার হয়ে যাঁরা রাজনৈতিক কর্তৃত্বকে আরও কণ্টকহীন করে তোলার চেষ্টা করেন, তাঁরা বুঝতে পারেন না যে আসলে তাঁরা নিজেদের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎকে আরও কণ্টকাকীর্ণই করে তুলছেন। অবৈধ ভাবে একের পর এক নির্বাচন দখল করলে রাজনৈতিক কর্তৃত্ব আরও মজবুত হবে বলে যাঁরা ভাবছেন, তাঁরা কিন্তু আদ্যন্ত ভ্রান্ত ধারণার মধ্যে রয়েছেন। এই দখলদারি রাজনৈতিক জমিকে শক্ত করতে পারে না, রাজনৈতিক ভিত্তিভূমিতে ক্ষয় ধরিয়ে দেয় বরং।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy