বেনজির চড়া সুর প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের গলায়। ছবি: রয়টার্স।
নতুন বছর খুব ভাল ভাবে শুরু হল না পাকিস্তানে। জোরদার ধাক্কা দিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। নতুন বছরে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রথম টুইট পাকিস্তানের জন্য ‘প্রথম অভিজ্ঞতা’ হয়ে উঠল। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যা লিখলেন টুইটারে, পাক-মার্কিন দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ইতিহাসে ততটা কড়া বয়ান নজিরবিহীন। পাকিস্তান সম্পর্কে আমেরিকা বা আমেরিকা সম্পর্কে পাকিস্তান, কোনও তরফ থেকেই এত কড়া বয়ান ইতিপূর্বে শোনা যায়নি। ১ জানুয়ারি ২০১৮ অতএব মাইলফলক হয়ে রইল এই দুই দেশের সম্পর্কের ইতিহাসে। বলাই বাহুল্য, এই মাইলফলক পাকিস্তানের পক্ষে খুব একটা স্বস্তিদায়ক নয়।
অবধারিত ছিল এই পরিস্থিতি। গোটা পৃথিবীতে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াই চলছে। সেই লড়াইয়ের এক পৃষ্ঠভূমি যেমন মধ্য এশিয়া, আর এক রণক্ষেত্র তেমনই হল পাকিস্তান নিজে। মধ্য এশিয়ার দেশগুলিতে রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম চলছে টানা কয়েক বছর ধরে। পাকিস্তানকে এই সংগ্রামটা শুরু করতে বলা হয়েছিল আরও অনেক আগেই। অর্থ, অস্ত্র, প্রযুক্তি— সবই জোগানো হয়েছিল পাকিস্তানকে। জোগানো হচ্ছিল এক দিন আগে পর্যন্তও। কিন্তু আর জোগানো হবে কি না, সে নিয়ে এখন ঘোর সংশয়ে ইসলামাবাদ। পাকিস্তান বিপুল অঙ্কের সহায়তা নিয়েছে আমেরিকার কাছ থেকে, বিনিময়ে দিয়েছে শুধুই মিথ্যাচার ও প্রতারণা— লিখেছেন ট্রাম্প। অনেক হয়েছে, আর বরদাস্ত নয়— এমন বার্তাও দিয়ে দিয়েছেন ট্রাম্প। ফলশ্রুতি কী হতে চলেছে, তা পাকিস্তান ভালই জানে। বিপুল অঙ্কের মার্কিন অনুদান বন্ধ হয়ে গেলে কী হবে, তাও পাকিস্তানের জানা। অতএব, অধিকতর দুর্দিনের কাউন্টডাউন শুরু হয়ে গিয়েছে।
সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন
পাকিস্তান যে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসের অন্যতম আঁতুড়ঘর, সে কথা ভারত অনেক দিন আগে থেকেই গোটা বিশ্বকে বোঝানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মঞ্চে বার বার তথ্যপ্রমাণ পেশ করে ভারত দেখিয়েছে, পাকিস্তান হল জঙ্গি তৈরির কারখানা। বেশ কিছু বছর ধরে আমেরিকা-সহ গোটা বিশ্ব সে কথা উপলব্ধিও করছে। তাই বার্তাটা প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার আমল থেকেই দেওয়া শুরু হয়েছিল পাকিস্তানকে। কিন্তু সে বার্তার গুরুত্ব বুঝে নিয়ে সময়োচিত পদক্ষেপ করতে পাকিস্তানও সম্পূর্ণ ব্যর্থ। অতএব যা হবার তাই হল। মার্কিন প্রেসিডেন্টের কণ্ঠে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যে স্বর শোনা গেল, তা ভারতের কণ্ঠস্বরের চেয়ে কোনও অংশে মৃদু নয়।
আরও পড়ুন: আর নয়, ‘প্রতারক’ পাকিস্তানকে হুমকি ট্রাম্পের
এই রকম একটা বার্তার অপেক্ষাতেই ছিল ভারত যেন। পাক সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে দীর্ঘ লড়াই ভারতের। কিন্তু সে লড়াইয়ে ভারত ছিল একা। আন্তর্জাতিক মহলকে পাকিস্তানের আসল রূপটা দেখানো খুব জরুরি হয়ে পড়েছিল। অবশেষে গোটা বিশ্বই চিনতে শুরু করেছে পাকিস্তানকে। দীর্ঘ দিনের ঘনিষ্ঠ পাক-মিত্র আমেরিকাও অত্যন্ত নজিরবিহীন ভাষায় পাকিস্তানকে আক্রম করেছে। এই পরিস্থিতি পাকিস্তানের পক্ষে যতটা অস্বস্তিকর, ভারতের পক্ষে ততটাই স্বস্তিদায়ক।
অখণ্ড স্বস্তির ক্ষণ অবশ্য আসেনি এখনও। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কাঙ্খিত বার্তাটা এসেছে। কিন্তু এ বার্তায় সাড়া দিতে পাকিস্তান যদি অক্ষম হয়, তা হলে কোন দিকে গড়ায় পরিস্থিতি, সে এখনও দেখার বিষয়। বিশ্বের বৃহত্তম সামরিক শক্তি আমেরিকাও পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কঠোরতম অবস্থান নেওয়ার ইঙ্গিত দিতে শুরু করেছে ঠিকই। কিন্তু আর এক বৃহত্ শক্তি চিন এখনও পর্যন্ত সন্ত্রাস নিয়ে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেওয়ার ইঙ্গিত দেয়নি। অতএব, সন্ত্রাসের পরিকাঠামো নির্মূল করতে এখনও অনেকটা পথ পাড়ি দিতে হবে। কিন্তু যতটা পথ পাড়ি দেওয়া গেল, সেও নেহাত্ কম নয়। অতএব নতুন বছরের প্রথম দিন যতটা বড় ধাক্কা দিল পাকিস্তানকে, ততটাই সদর্থক হয়ে ধরা দিল ভারতের জন্য। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে গোটা বিশ্বের কণ্ঠস্বর আরও তীব্র হবে ক্রমশ। সে কথা যদি এই মুহূর্তে বুঝে নিতে পারে ইসলামাবাদ, তা হলে ১ জানুয়ারির এই ধাক্কা অদূর ভবিষ্যতে সদর্থক হয়ে ধরা দিতে পারে পাকিস্তানের কাছেও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy