Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪
Editorial News

এ অশ্রু আমরা রাখব কোথায়!

যে কোনও বৃহত্ আর্থ-সামাজিক এবং রাজনৈতিক ইস্যুতে প্রতিক্রিয়া দিতে দেখা গিয়েছে আমুল সংস্থার এই প্রতীকী চরিত্রকে।

ছবি : সৌজন্যে টুইটার।

ছবি : সৌজন্যে টুইটার।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ১৯ এপ্রিল ২০১৮ ০০:৫২
Share: Save:

ঘোর দুঃসময়ের আর এক সূচক। কাঁদতে দেখা গেল আমুল-কন্যাকে। এই রোদন যদি দুঃসময়ের প্রতীক হয়, তা হলে এমন দুঃসময় জাতির জীবনে আগে আর কখনও আসেনি। কারণ স্মরণাতীত কালে আমুল-কন্যাকে কাঁদতে দেখা যায়নি।

যে কোনও বৃহত্ আর্থ-সামাজিক এবং রাজনৈতিক ইস্যুতে প্রতিক্রিয়া দিতে দেখা গিয়েছে আমুল সংস্থার এই প্রতীকী চরিত্রকে। রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্ব থেকে বহু দূরে দাঁড়িয়ে বরাবরই নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন ঘটিয়েছে চরিত্রটি। কখনও জাতির বিবেক হিসেবে ধরা দিয়েছে সে, কখনও তার বার্তায় ধরা পড়েছে দেশবাসীর ভাবনার প্রতিফলন। কিন্তু যত বারই আমুল-কন্যা সামনে এসেছে, তত বারই সে হাসি ফুটিয়ে গিয়েছে মুখে মুখে। দেশ জুড়ে বা বিশ্ব জুড়ে চর্চিত কোনও বিষয়ের প্রেক্ষাপটে আমুল-কন্যার আবির্ভাব কখনও আমাদের চমকিত করেছে, কখনও আনন্দ দিয়েছে, কখনও একাত্ম বোধ করিয়েছে, কখনও নির্মল হাস্যরস উপহার দিয়েছে। দুগ্ধ সমবায় সমিতির ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর হয়ে ওঠা প্রতীকী চরিত্রটি আগে কখনও এ ভাবে ভারাক্রান্ত হয়নি, ভারাক্রান্ত করেওনি।

নির্জন, নিঃসঙ্গ এক পরিসর। পাথুরে, নির্দয় এক প্রান্তর তার মাঝে বসে দু’হাতে মুখ ঢেকে অঝোর ক্রন্দসী মেয়েটা। কেন কাঁদছে আমুল-কন্যা? কোথাও লেখা নেই, কোথাও কিছু বলা নেই। শুধু একটা সুপরিচিত এবং মন ছুঁয়ে যাওয়া পঙ্‌ক্তি— ‘জরা আঁখ মে ভর লো পানি।’ এই বিজ্ঞাপন যেন মেরুদণ্ডটা ধরে নাড়িয়ে দিয়েছে গোটা জাতিকে। যে মেয়ে সব সময় হাসত-হাসাত, যে শিশু বার বার উজ্জ্বল অস্তিত্ব নিয়ে ধরা দিত, সে আজ ম্লানমুখ, ত্রস্ত, ভারাক্রান্ত, অশ্রুসিক্ত। কোথায় এসে দাঁড়ালাম আমরা? এত নির্মম, এত বিপদসঙ্কুল করে তুললাম পৃথিবীটাকে! সদা-উজ্জ্বল শিশুকন্যাও আর মুখে হাসি ফুটিয়ে রাখতে পারছে না?

সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

কেন এ কান্না? স্পষ্ট করে কিছু লেখা নেই আমুলের বিজ্ঞাপনটায়। কিন্তু স্পষ্ট হতে বোধহয় আর কিছু বাকিও নেই। উন্নাও থেকে কাঠুয়া, কাঠুয়া থেকে সুরাত— যে পথে এগোচ্ছি আমরা, তাতে আর সুস্থ-স্বাভাবিক থাকা যাচ্ছে না। নির্ভয়ে, নিঃসঙ্কোচে, সানন্দে আর বাঁচা যাচ্ছে না। বার্তাটা এ রকমই।

আরও পড়ুন: মুখে হাসি নেই, কাঁদছে আমুল-কন্যা

একের পর এক ধর্ষণ, একের পর এক ভয়াবহ নির্যাতন! অমানবিক আখ্যা দিয়ে দায় ঝেড়ে ফেলার উপায় আর নেই। যারা ঘটাচ্ছে এ সব, তারা প্রত্যেকেই তো এই মানবজাতিরই। বার বার ঘটাচ্ছে, মানবাত্মার মুখে বার বার কালি ছিটিয়ে দিচ্ছে। কোনটা মানবিক, কোনটা অমানবিক, মানবিকতার সংজ্ঞাটা তা হলে কী, সংজ্ঞা কি বদলে যাচ্ছে? গুচ্ছ প্রশ্ন উঠে আসছে। আর সব উত্তর গুলিয়ে যাচ্ছে।

যে কবি এ বিশ্বকে শিশুর বাসযোগ্য করে যাওয়ার অঙ্গীকার করেছিলেন, এ দেশকে দেখলে আজ হয়ত ডুকরে উঠতেন তিনি! ঠিক যে ভাবে দু’হাতে মুখ ঢেকে অশ্রুজলে ভেসে যাচ্ছে আমুল বিজ্ঞাপনের শিশুকন্যা!

এই প্রতীকী অশ্রু, এই প্রতীকী বেদনা কিন্তু সমগ্র জাতির। প্রতি মুহূর্তে যেন কলঙ্কিত হচ্ছি আমরা। মুখ তুমি ঢেকো না শিশুকন্যা, মুখ বরং আমরা ঢাকি। এই অশ্রু আমরা কোথায় রাখব? আমাদের কাছে আজ উত্তর নেই সম্ভবত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE