বিরোধী আসনে বসিবার সময় যে বিলগ্নিকরণ এবং বিদেশি বিনিয়োগ চক্ষুশূল ছিল, প্রধানমন্ত্রীর কুর্সিতে অধিষ্ঠিত হইলে তাহাকেই কেন উন্নয়নের মূল সড়ক বোধ হইতে থাকে, সেই প্রশ্নটি করিয়া নরেন্দ্র মোদীকে বিব্রত না করাই বিধেয়। সিঙ্গল ব্র্যান্ড রিটেলে ১০০ শতাংশ বিদেশি বিনিয়োগ অথবা এয়ার ইন্ডিয়ায় ৪৯ শতাংশ বিদেশি লগ্নিতে সম্মতি দেওয়ার ন্যায় সিদ্ধান্তগুলি করিতে প্রায় চার বৎসর সময় লাগিল কেন, সেই প্রশ্নটিও উহ্য রাখাই মঙ্গল। আপাতত, কেন্দ্রীয় সরকারের সাধুবাদ প্রাপ্য। বহু দিন যাবৎ বকেয়া পড়িয়া থাকা কিছু জরুরি সংস্কারের সিদ্ধান্ত করিবার জন্য। কিছু প্রশ্ন তবুও থাকিবে। যেমন, খুচরা বিপণনের ক্ষেত্রে সিঙ্গল ব্র্যান্ড রিটেল ১০০ শতাংশ বিদেশি লগ্নির ছাড়পত্র পাইলেও মাল্টি ব্র্যান্ড রিটেলের সেই সৌভাগ্য হইল না কেন? এয়ার ইন্ডিয়ায় ৪৯ শতাংশ বিদেশি লগ্নির সিদ্ধান্তটির গায়ে কেন অহেতুক জাতীয়তাবাদের নামাবলি চড়াইয়া দেওয়া হইল? তবে, প্রশ্নগুলির পাশাপাশি একটি সম্ভাবনাও থাকিবে। নরেন্দ্র মোদীর আমলে ভারতে বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণ বাড়িয়াছে। ইউপিএ আমলে এক বৎসরে সর্বাধিক প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ আসিয়াছিল ২০১৩-১৪ অর্থবর্ষে— ৩,০০০ কোটি ডলারের সামান্য বেশি। ২০১৬-১৭ সালে ভারতে এই লগ্নির পরিমাণ দাঁড়াইয়াছে ৬,০০০ কোটি ডলার। আশা করা চলে, বর্তমান সংস্কার-সিদ্ধান্তের পর এই বিনিয়োগ আরও বাড়িবে।
ভারতীয় অর্থনীতির জন্য এই সংস্কার অতি জরুরি ছিল। নির্মাণ ক্ষেত্রের কথাই ধরা যাউক। সিদ্ধান্ত হইয়াছে, এই ক্ষেত্রে অতঃপর ১০০ শতাংশ বিদেশি বিনিয়োগকে ছাড়পত্র দেওয়া হইবে। বেশ কিছু দিন যাবৎ ভারতে নির্মাণ ক্ষেত্রটি ধুঁকিতেছিল। নোটবাতিলের সিদ্ধান্তের পর তাহা আরও বেহাল হয়। ফলে, এই ক্ষেত্রটিতে নূতন লগ্নির গুরুত্ব প্রচুর। এয়ার ইন্ডিয়ার বিলগ্নিকরণে বিদেশি বিনিয়োগের দরজা খুলিবার সিদ্ধান্তটিও জরুরি। বিশেষত, বর্তমান অর্থবর্ষে বিলগ্নিকরণের মাধ্যমে যে আয় হইবে বলিয়া অর্থ মন্ত্রকের আশা ছিল, বাস্তবে তাহার এক-তৃতীয়াংশও এখনও হয় নাই। বিদেশি লগ্নিকারীদের জন্য দরজা খুলিয়া দিলে এয়ার ইন্ডিয়ার বিলগ্নিকরণ সরকারের হাতে অতি জরুরি কিছু টাকার সংস্থান করিতে পারে। সংস্থার ২৬ শতাংশ অংশীদারি সরকারের হাতে রাখিয়া দেওয়ার সিদ্ধান্তটিও বিচক্ষণ। সাম্প্রতিক অতীতে এয়ার ইন্ডিয়া বিপুল ক্ষতিতে চলিয়াছে। এখন তাহার যে দাম পাওয়া যাইবে, বেসরকারি পুঁজির হাতে পড়িয়া সংস্থার স্বাস্থ্যোদ্ধার হইলে ভবিষ্যতে সে তুলনায় দাম বাড়িবার সম্ভাবনা যথেষ্ট। হাতে থাকা ২৬ শতাংশ তখন বেচিলে আর্থিক লাভই হইবে বলিয়া আশা করা চলে।
এই জরুরি সংস্কারগুলির সিদ্ধান্ত যে দিন ঘোষিত হইল, সে দিনই একটি ভিন্ন উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী খেদ প্রকাশ করিয়াছেন যে তিনি সংস্কারের পথে হাঁটিলেও লোকে খুশি হয় না। নরেন্দ্র মোদী যে সংস্কারের কথা বলিতেছিলেন, সেটি জিএসটি। পরোক্ষ কর কাঠামোর এই সংস্কারটি আজ না হউক পরশুর পরের দিন করিতেই হইত। কার্যত গোটা দুনিয়াই জিএসটি-র পথে হাঁটিতেছে। কিন্তু, যদি সম্পূর্ণ দিশাহীন ভাবে প্রবর্তিত হয়, তবে কোনও অতি জরুরি সংস্কারও তীব্র সমালোচনার কারণ হইতে পারে। জিএসটি-র ক্ষেত্রে তাহাই ঘটিয়াছে। সাত বৎসরের অধিক সময় অপেক্ষা করিবার পর শেষ অবধি জিএসটি চালু হইয়াছে। কিন্তু, তাহার প্রতি পদে এত ভুল, এত বিভ্রান্তি যে এই সংস্কারের চোটে ব্যবসাই বন্ধ হইবার জোগাড়। আশা করা যায়, গুজরাত নির্বাচনের প্রচারপর্বেই প্রধানমন্ত্রী বুঝিয়াছেন যে সংস্কার জরুরি, কিন্তু আরও জরুরি তাহার যথার্থ পন্থা। বর্তমান সংস্কারগুলি তাহারই উদাহরণ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy