সাত পুরসভাতেই জয়জয়কার তৃণমূলের। ফাইল চিত্র।
পুর নির্বাচন সমাধা, অত্যন্ত স্পষ্ট ফলাফল, সব পুরসভায় শাসক দলের বিপুল জয়, বিরোধীরা ধরাশায়ী।
ভারতীয় গণতন্ত্রে যে ধাঁচের নির্বাচনী বন্দোবস্ত প্রচলিত রয়েছে, সেই বন্দোবস্তের আয়নায় তৃণমূল দলের অসামান্য সাফল্যই ধরা পড়ছে। অতএব তৃণমূলকে সাধুবাদ জানাতেই হচ্ছে। কিন্তু নির্বাচনের এই ফলাফল গণতন্ত্রের আকাশে সিঁদুরে মেঘটাও দেখিয়ে দিয়ে যাচ্ছে।
যে সাতটি পুরসভায় নির্বাচন হয়েছে, তার সবক’টিতেই রাজ্যের শাসক দলের জয় হয়েছে, এটুকু বললে বস্তুত কিছুই বলা হয় না। তৃণমূলের যে বিপুল জয় এই নির্বাচনে সূচিত হয়েছে, ওয়ার্ডের পর ওয়ার্ডে শাসকের জয়ের যে ব্যবধান দেখা গিয়েছে, বুথের পথে বুথে বিরোধী পক্ষকে যতটা ‘দরিদ্র’ মনে হয়েছে, তা বাম জমানার শেষ দিককার স্মৃতি উস্কে দিয়েছে। অনিল বসু-সুশান্ত ঘোষদের যে নির্বাচনী ‘প্রতাপ’ সে আমলে দেখা যেত, এই পুর নির্বাচনেও সেই ‘প্রতাপ’-এর ছায়া বেশ স্পষ্ট। সিঁদুরে মেঘের অস্তিত্বটা সেই কারণেই আরও বেশি করে দৃশ্যমান হয়ে উঠছে।
নির্বাচনী ফলাফলের এই ধাঁচ আসলে একটা সূচক। জয়ের তাগিদ ক্রমে দখলদারির প্রবণতায় রূপান্তরিত হচ্ছে কি না, বুঝিয়ে দেয় এই সূচক। বাম জমানায়ও এই রকম নির্বাচনী ফলাফলের সাক্ষী হতে হয়েছে বাংলাকে। জনভিত্তির উপর বিশ্বাস যত কমছিল, ভোটের বুথ নিয়ন্ত্রণে আনার তাগিদ ততই বাড়ছিল। তাতে জয়ের ব্যবধান দিন দিন চোখ ধাঁধিয়ে দিচ্ছিল বটে, কিন্তু পায়ের তলার মাটিটা দ্রুত বেগে দুর্বল হচ্ছিল। পরবর্তী বিপর্যয়ের আখ্যান নতুন করে শোনানো অপ্রয়োজনীয়। প্রয়োজনীয় হল একটা প্রশ্ন তোলা— বাংলার বর্তমান শাসকরা কি পূর্ববর্তী শাসকদের সেই ভুল থেকে কোনও শিক্ষা নেবেন? নাকি ‘যেমন চলছে চলুক না’-র স্রোতে আলতো করে গা ভাসিয়ে ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি তরান্বিত করবেন?
উত্তর পাওয়া বাংলার জন্য জরুরি। কিন্তু উত্তরটা খোঁজা রাজ্যের বর্তমান শাসকদের জন্য আরও বেশি জরুরি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy