Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
সম্পাদকীয় ২

(অ)সমাপ্ত

ডোনাল্ড ট্রাম্প কি এই বাস্তবটি বুঝিতে পারিয়াছেন? বা চাহিয়াছেন? সম্ভবত নহে। তাঁহার ঘোষিত লক্ষ্য: আইএস’কে ধ্বংস করা, আমেরিকাকে পশ্চিম এশিয়ার রণভূমি হইতে সরাইয়া লওয়া এবং ইরানের ক্ষমতা খর্ব করা।

শেষ আপডেট: ১৮ জুলাই ২০১৭ ০০:৩৪
Share: Save:

ইরাকের মসুল শহর আইএস-এর কবল হইতে উদ্ধার হইয়াছে। তিন বৎসর আগে এই শহর দখল করিয়া আইএস নেতা আবু বকর আল-বাগদাদি ঘোষণা করিয়াছিল, ‘‘তোমরা আমার নিকট আইস, আমি তোমাদের নূতন ‘খিলাফত’ দিব।’’ আল-বাগদাদি সম্প্রতি নিহত, অথবা পলাতক। সিরিয়াতেও আইএস বিপর্যস্ত। তাহাদের খলিফা-সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন বিঘ্নিত। কিন্তু ত্রাস সঞ্চারের লক্ষ্য হইতে তাহারা চ্যুত হইয়াছে, এমন কথা মনে করিবার কারণ নাই। আল-কায়দা গোষ্ঠীও এক সময় প্রাবল্য হারাইয়াছিল, কিন্তু নিশ্চিহ্ন হয় নাই, বরং আফ্রিকায় বোকো হারাম, আফগানিস্তানে দি ইসলামিক স্টেট অব খোরাসান ইত্যাদি বিবিধ স্থানীয় জঙ্গি গোষ্ঠীর মাধ্যমে সন্ত্রাস বিস্তার করিয়াছে। বস্তুত, আইএস নিজ ঘাঁটিতে দুর্বল হওয়ার সময় হইতেই পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ ঘটাইয়া আপন শক্তি জানান দিয়াছে।

ডোনাল্ড ট্রাম্প কি এই বাস্তবটি বুঝিতে পারিয়াছেন? বা চাহিয়াছেন? সম্ভবত নহে। তাঁহার ঘোষিত লক্ষ্য: আইএস’কে ধ্বংস করা, আমেরিকাকে পশ্চিম এশিয়ার রণভূমি হইতে সরাইয়া লওয়া এবং ইরানের ক্ষমতা খর্ব করা। একই সঙ্গে এই তিন নীতি তিনি কী ভাবে রূপায়ণ করিবেন, ট্রাম্পকে সেই প্রশ্ন করিয়া লাভ নাই, তিনি ভাবিয়া কথা বলেন না, (অ)কাজ করিবার আগেও ভাবেন বলিয়া মনে হয় না। তিনি হয়তো মনে করিতেছেন, মসুল উদ্ধার হইয়াছে, সুতরাং পনেরোআনা কাজ শেষ, খুব বেশি হইলে, আর দুই-একখানি ‘সকল বোমার জননী’ বর্ষণ করিয়া বাকিটুকু সারিয়া ফেলিতে পারিবেন। এমন চিন্তা বাতুলতার নামান্তর, কিন্তু বাতুলতাই— এ যাবৎ— ট্রাম্প-ধর্ম। এই যুদ্ধ সহজে মিটিবার নহে। কিন্তু যদি বা মেটেও, পশ্চিম এশিয়ায় প্রকৃত সমাধান দূর অস্ত্। যুদ্ধ অপেক্ষা কূটনীতির পথ অনেক বেশি জটিল। পশ্চিম এশিয়াকে ভারসাম্যে ফিরাইয়া আনা অতি সুকঠিন। বিচক্ষণতার সহিত সেখানে পা ফেলিতে হইবে।

ডোনাল্ড ট্রাম্প সেই বিষয়ে দৃক্পাত না করিয়া বেমালুম উল্টো রথে চড়িয়া বসিয়াছেন। তাঁহার প্রথম কর্তব্য, পশ্চিম এশিয়ার বিভিন্ন দেশ ও তাহাদের বিভিন্নতর গোষ্ঠীর মধ্যে যথাসাধ্য ভারসাম্য আনিয়া আইএস এবং অন্যান্য সন্ত্রাসী শক্তির মোকাবিলায় তাহাদের সমবেত করা। বিশেষত, শিয়া-প্রধান ইরাকের সরকার চালনায় সুন্নিদের অন্তর্ভুক্ত করিতে না পারিলে স্থিতির সম্ভাবনা সুদূরপরাহত। এই কাজে ইরানকে সঙ্গে রাখা অত্যাবশ্যক। কিন্তু ট্রাম্পের আমেরিকা ইরানকে শত্রু বানাইতে বদ্ধপরিকর। পূর্ববর্তী প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বহু কাঠখড় পুড়াইয়া ইরানকে একটি পরমাণু চুক্তিতে আবদ্ধ করিয়াছিলেন, তেহরান ও ওয়াশিংটনের মধ্যে একটি কার্যকর সম্পর্ক নির্মাণের পথে সেই চুক্তি ছিল বড় পদক্ষেপ। ট্রাম্প উত্তরাধিকার সূত্রে তাঁহার পূর্বসূরির নিকট হইতে চুক্তিটি পাইয়াছিলেন, পশ্চিম এশিয়ার ভারসাম্য প্রতিষ্ঠায় যাহা একটি কার্যকর উপকরণ। কিন্তু এমন একটি সম্পদ হাতে পাইয়াই বেপরোয়া মার্কিন প্রেসিডেন্ট তাহা তছনছ করিতে উদ্যত। আমেরিকা যদি এই সময় ইরানের শক্তিকে খর্ব করিবার তাড়নায় চুক্তি বাতিল করিয়া নূতন নিষেধাজ্ঞা শানাইতে তৎপর হয়, তবে পশ্চিম এশিয়া কোন বিধ্বংসী পথে যাইবে, অনুমান করাও কঠিন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE