প্রতীকী ছবি।
কে নিয়া যাহা পারিয়াছে, ভারত তাহা পারিল না। ভারত অপেক্ষা দরিদ্র হইয়াও আফ্রিকার এই দেশটি স্যানিটারি ন্যাপকিনের উপর কর মকুব করিয়াছে বহু দিন। অতি সম্প্রতি তাহা করিয়াছে মরিশাস। ভারত স্যানিটারি ন্যাপকিনের উপর বারো শতাংশ জিএসটি ধার্য করিয়াছে। ‘ভ্যাট’-এর বিধি অনুসারে যাহা ছিল ছয় শতাংশ। এই সিদ্ধান্তের ব্যাখ্যা কঠিন। খাদ্য ও জীবনদায়ী ঔষধের ন্যায় ঋতুকালে ব্যবহার্য ন্যাপকিনও এক অত্যাবশ্যক পণ্য। কারণ, তাহা পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখিয়া মেয়েদের স্বাস্থ্য সুরক্ষিত করে। অথচ একবিংশ শতকের ভারতেও ইহা আবশ্যক মনে করে না সরকার। আজও ভারতের ঋতুমতী মেয়েদের অষ্টআশি শতাংশই স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার করিতে পারে না। ইহা মেয়েদের অবমাননা। স্বাস্থ্যব্যবস্থার সংকটও। সাবেকি উপায় অবলম্বন করিয়া অপরিচ্ছন্নতা-জনিত সংক্রমণে ভুগিতে থাকে মেয়েরা। বিভিন্ন রাজ্যে নানা সমীক্ষায় দেখা গিয়াছে, তরুণী মেয়েদের মধ্যে যোনিপথের সংক্রমণের হার পঞ্চাশ শতাংশেরও বেশি। অধিকাংশ মেয়েই লজ্জা ও সংকোচের কারণে, এবং খরচ এড়াইতে, চিকিৎসকের নিকট যায় না। ঋতুকালে অপরিচ্ছন্নতা যে সংক্রমণের একটি প্রধান কারণ, তাহাও স্বীকৃত। কেবল স্বাস্থ্য নহে, মেয়েদের শিক্ষার সহিতও স্যানিটারি ন্যাপকিনের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ। সাবেকি পদ্ধতি যথেষ্ট সুরক্ষা দিতে পারে না বলিয়া কিশোরী মেয়েরা ঋতুকালে স্কুল এড়াইয়া যায়। মাসে চার-পাঁচ দিন পড়াশোনা নষ্ট হইয়া যায়। সরকার অবিচল, উদাসীন।
প্রতিবাদের মুখে পড়িয়া সরকার যুক্তি দিয়াছে, পণ্যটি প্রস্তুত করিতে যে যে বস্তু লাগে, তাহার কোনটির উপর কত কর ধার্য হইয়াছে, তাহার ফর্দ করিয়াছে সরকার। অতঃপর তাহাদের বক্তব্য, কর কমাইলে দেশীয় উৎপাদকদের ক্ষতি হইয়া যাইতে পারে। তাহারা আমদানিকৃত পণ্যের সহিত প্রতিযোগিতায় আঁটিতে পারিবে না। অহো, কী ভয়ানক আশঙ্কা! এক দিকে দেশের সাড়ে পঁয়ত্রিশ কোটি ঋতুমতী মেয়ের স্বাস্থ্য-শিক্ষা-স্বাচ্ছন্দ্য, অপর দিকে কতিপয় উৎপাদকের লাভে ঘাটতি। ইহার কোনটি প্রাধান্য পাইবে? যে উপায়ে সরকার কন্ডোমের উপর কর মকুব করিয়াছে, ব্যবসায়িক স্বার্থের চিন্তা করে নাই, সেই রূপেই স্যানিটারি ন্যাপকিনের কর মকুব করিতে পারিত। ব্যবসায়ীর ক্ষতি পূরণ করিবার বহু উপায় সরকারের হাতে রহিয়াছে। মেয়েদের ক্ষতি করিয়া স্বদেশি ব্যবসা টিকাইবার যুক্তি অচল, এমনকী হাস্যকর।
ভারতের প্রবল পিতৃতান্ত্রিক ব্যবস্থায় মহিলাদের সম্মান বা স্বাচ্ছন্দ্য কখনওই গুরুত্ব পায় নাই। আজও পাইতেছে না। অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশগুলির তুলনায় আর্থিক বৃদ্ধির হারে অগ্রসর হইয়াও মহিলা ও শিশুদের উন্নয়নে ভারত পিছাইয়া, সেই সত্য বার বার সম্মুখে আসিয়াছে। ঋতুকালে পরিচ্ছন্নতার প্রসঙ্গেও তাহা ফের প্রকাশ পাইল। ইন্দোনেশিয়ায় স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহারের হার আশি শতাংশ, চিন ও তাইল্যান্ডে পঞ্চাশ থেকে ষাট শতাংশ, কেনিয়াতে ত্রিশ শতাংশ। ইহাদের পাশে ভারতের স্থান নির্ণয় করিতেও লজ্জা হয়। বারো শতাংশ জিএসটি নিশ্চিত করিল— সেই লজ্জাজনক ছবিতে সহসা পরিবর্তন আসিবে না। এই মহান দেশের মেয়েদের সুদিন আসে নাই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy