ফাইল চিত্র।
দেশজোড়া গেরুয়া তুফানের ঠিক বিপরীত মেরুতে সবেমাত্র একটা পাল্টা হাওয়া উঠতে শুরু করেছিল। একটা আবর্তের বক্ষস্থলে ক্রমে ক্রমে শ্বাসবায়ু সঞ্চারিত হচ্ছিল যেন। কিন্তু গেরুয়া তুফানটা এক আচম্বিত হানাদারিতে শুষে নিল সে প্রাণবায়ুর অনেকখানিই।
হঠাৎ খুব ছন্নছাড়া, হতশ্রী দেখাচ্ছে বিরোধী শিবিরটাকে। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনকে ঘিরে জাতীয় রাজনীতির চেহারাটা যে রকম দাঁড়াল, তাতে বৃহত্তর বিরোধী ঐক্যের প্রবক্তারা নিশ্চয়ই বেশ হতাশ। অত্যন্ত কুশলী পদক্ষেপ করেছেন নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহ। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের প্রার্থী হিসেবে যে দিন রামনাথ কোবিন্দের নাম ঘোষণা করেছিলেন বিজেপি সভাপতি, সে দিন বিরোধী শিবিরের প্রতিক্রিয়া মোটেই ইতিবাচক ছিল না। যে ভাবে কোবিন্দের নামে সিলমোহর দেওয়া হয়েছিল, তাতে সর্বসম্মতির কোনও চেষ্টা দৃশ্যমান ছিল না। কিন্তু সর্বসম্মত প্রার্থী দেওয়ার সদিচ্ছা সত্যিই বিজেপির ছিল কি না, সে বিতর্ক যদি এক পাশে সরিয়ে রাখা যায়, তা হলে এ কথা মানতেই হবে যে, রাইসিনায় রামনাথের প্রবেশ নিশ্চিত করতে ঘুঁটিগুলো অনবদ্য সাজিয়েছে মোদী-শাহ জুটি। বিরোধী ঐক্য এক ধাক্কায় ছত্রখান।
অবাধ্য তথা রাগী শরিক শিবসেনা বহু বছর পর রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিজেপির পাশে। গোটা এনডিএ ঐক্যবদ্ধ। বিহারে বিজেপি বিরোধী মহাজোটের মুখ যিনি, সেই নীতীশ কুমারের জেডি(ইউ) রামনাথ কোবিন্দকে সমর্থনের কথা ঘোষণা করে দিয়েছে। ওড়িশার শাসক নবীন পট্টনায়ক, তামিলনাড়ুর শাসক পলানীস্বামী একই পথে। বিস্ময় জাগিয়ে রামনাথ কোবিন্দের পাশে ডিএমকে-ও। বড় শরিক কংগ্রেসকে দক্ষিণী শরিকের পরামর্শ— রামনাথের বিরুদ্ধে প্রার্থী না দেওয়াই সমীচীন হবে। মায়াবতী, মুলায়মদের অবস্থানও প্রায় একই রকম।
অর্থাৎ, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনকে ঘিরে রাজনৈতিক সমীকরণ ইতিমধ্যেই যে জায়গায় পৌঁছে গিয়েছে, তাতে এনডিএ প্রার্থী রামনাথ কোবিন্দের বিপুল জয়ের সম্ভাবনা নিয়ে সংশয় খুব কমই। দিন কয়েক আগেও এই রামনাথ কোবিন্দের নাম কিন্তু সিংহভাগ ভারতবাসীর কাছে অচেনা ছিল। শুধু তাই নয়, কোবিন্দকে যে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রার্থী করা হবে, বিজেপির নেতৃস্থানীয়দের অধিকাংশের কাছেও সম্ভবত তা অজানা ছিল। দেশের সর্বোচ্চ সাংবিধানিক পদটির নির্বাচনে এমন এক প্রার্থীর জয় ভোটাভুটির অনেক আগেই প্রায় নিশ্চিত করে ফেলা কিন্তু কোনও ছোটখাটো রাজনৈতিক সাফল্য নয়।
পরিস্থিতিটা কিন্তু এত মসৃণ ছিল না বিজেপির পক্ষে। দেশের নানা প্রান্তে কৃষক অসন্তোষ এবং মন্দসৌরে কৃষকদের উপর গুলি চালনাকে কেন্দ্র করে বিরোধী ঐক্য জমাট বাঁধছিল আসমুদ্রহিমাচলে। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনকে ঘিরে বৃহত্তর বিরোধী মঞ্চ গড়ে তোলার প্রয়াস আরও আগে থেকে শুরু হয়েছিল এবং সে প্রচেষ্টা বেশ সুসংহত ভঙ্গিতেই এগোচ্ছিল। ক্ষমতার অলিন্দে তিন বছর কাটানোর পর মোদীর সরকার তথা বিজেপি বড়সড় প্রতিরোধের মুখে পড়তে চলেছে বলে মনে হচ্ছিল। বিজেপি রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের প্রার্থীর নাম ঘোষণা করার কয়েকটা দিনের মধ্যেই সব প্রতিরোধ যেন ধূলিসাৎ, বিরোধীর পালের হাওয়া কেড়ে নিয়ে এ নির্বাচনে যেন উত্তরপ্রদেশ বিধানসভা নির্বাচনের চেয়েও মসৃণ জয়ের পথে গেরুয়া শিবির। এই রাজনৈতিক কুশলতার প্রশংসা করতেই হচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy