Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Newsletter

অধিকারের সীমাটা লঙ্ঘন করা স্বাস্থ্যকর নয়

একের পর এক সামরিক অভ্যুত্থানের ধাক্কা সামলাতে সামলাতে ক্লান্ত পাকিস্তান ও বাংলাদেশের গণতন্ত্র। কত দিন গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বহাল থাকবে, আদৌ একটানা বহাল থাকবে কি না, সে বিষয়ে সম্ভবত খুব নিশ্চিতও থাকতে পারে না ভারতের এই দুই প্রতিবেশী রাষ্ট্র।

বিপিন রাওয়ত। —ফাইল চিত্র।

বিপিন রাওয়ত। —ফাইল চিত্র।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০০:০৭
Share: Save:

সেনাবাহিনী গণতান্ত্রিক পরিসরে নাক গলালে ফলাফল যে ইতিবাচক হয় না, ভারতের পশ্চিমের ও পূর্বের প্রতিবেশীরা তার সাক্ষ্য বহন করছে। আর সশস্ত্র বাহিনী এবং গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হলে এবং নিজেদের জন্য নির্দিষ্ট লক্ষ্ণণরেখাটার কথা খেয়াল রাখলে আশপাশের প্রতিকূলতা যে সুসংহত রাষ্ট্রীয় কাঠামোয় কোনও নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে না, ভারত তার সাক্ষ্য বহন করছে। ভারতের সেনাপ্রধান বিপিন রাওয়ত কি সে সত্য উপলব্ধি করেছেন? সংশয়ের যথেষ্ট অবকাশ তৈরি হচ্ছে।

একের পর এক সামরিক অভ্যুত্থানের ধাক্কা সামলাতে সামলাতে ক্লান্ত পাকিস্তান ও বাংলাদেশের গণতন্ত্র। কত দিন গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বহাল থাকবে, আদৌ একটানা বহাল থাকবে কি না, সে বিষয়ে সম্ভবত খুব নিশ্চিতও থাকতে পারে না ভারতের এই দুই প্রতিবেশী রাষ্ট্র। রাষ্ট্রীয় কাঠামোয় সামরিক বাহিনীর অস্বাভাবিক প্রভাব এবং সাংবিধানিক সীমারেখা লঙ্ঘন করে যাওয়ার প্রবণতাই এই অনিশ্চয়তার কারণ। কিন্তু এই দুই দেশের মাঝে ভারতের ছবিটা বরাবরই অন্য রকম থেকেছে। দিন যত গিয়েছে, ভারতে গণতন্ত্রের ভিত ততই মজবুত হয়েছে। গণতান্ত্রিক কাঠামোকে সযত্নে রক্ষা করার স্বার্থে সেনাবাহিনী এবং রাজনৈতিক নেতৃত্ব পরস্পরের পরিপূরক হয়েছে এ দেশে। কিন্তু সামরিক বাহিনী আর রাজনৈতিক নেতৃত্ব যে নিজেদের এক্তিয়ার সম্পর্কে অত্যন্ত সচেতন ভারতে, সেই ধারণায় জোর ধাক্কা দিয়ে দিলেন জেনারেল বিপিন রাওয়ত। অল ইন্ডিয়া ইউনাইটেড ডেমোক্র্যাটিক ফ্রন্ট (এআইইউডিএফ) নামের একটি রাজনৈতিক দল সম্পর্কে যে মন্তব্য সেনাপ্রধান রাওয়ত করলেন, তাতে দশকের পর দশক ধরে সযত্নে লালিত লক্ষ্ণণরেখাটা খুব দৃষ্টিকটূ ভাবে লঙ্ঘিত হল।

এআইইউডিএফ দলটির জনভিত্তি কী ভাবে বেড়েছে, কতটা অস্বাভাবিক গতিতে বেড়েছে, অসমের জনবিন্যাস পরিবর্তনের সঙ্গে তার কী সম্পর্ক রয়েছে, দেশের নিরাপত্তা এতে কী ভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে— বিশ্লেষণ করেছেন ভারতের সেনাপ্রধান। দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা বিশ্লেষণ করার অধিকার সেনাপ্রধানের নিশ্চয়ই রয়েছে। কিন্তু সংবিধান সম্মত ভাবে গঠিত এবং নির্বাচন কমিশন স্বীকৃত একটি রাজনৈতিক দলের প্রসার দেশের নিরাপত্তার পক্ষে ইতিবাচক, না নেতিবাচক, তা বিচার করার অধিকার সামরিক বাহিনীর প্রধানের নেই। অন্য যে দেশেই থাক, ভারতে অন্তত নেই।

আরও পড়ুন: সেনাপ্রধানের মন্তব্য ‘রাজনৈতিক বা ধর্মীয়’ উদ্দেশ্যে নয়, দাবি সেনার

বিতর্কিত মন্তব্য আগেও করেছেন জেনারেল বিপিন রাওয়ত। কখনও তাঁর মন্তব্যে বিদেশ মন্ত্রক অপ্রস্তুতে ফেলেছে, কখনও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের অস্বস্তির কারণ হয়েছেন তিনি, এ বার তিনি যে মন্তব্য করলেন, তা দেশের গোটা গণতান্ত্রিক কাঠামোটার জন্য অস্বস্তিকর।

সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

জেনারেল বিপিন রাওয়ত যে নিজের এক্তিয়ার ছাড়িয়ে গিয়েছেন, তা নিয়ে কোনও সংশয় নেই। তিনি না বুঝে সীমাটা লঙ্ঘন করলেন, নাকি বুঝেশুনেই এমন মন্তব্য করলেন, প্রশ্ন তা নিয়েই।

যদি না বুঝে এই মন্তব্য করে থাকেন জেনারেল রাওয়ত, তাহলে উদ্বেগের যথেষ্ট কারণ রয়েছে। অত্যন্ত দায়িত্বশীল এবং গুরুত্বপূর্ণ একটি পদের অধিকারী এখন তিনি। এত গুরুত্বপূর্ণ পদে বসেও কেউ যদি বুঝতে না পারেন যে, কোন মন্তব্য উচিত এবং কোনটা অনুচিত, তাহলে পদাসীন হওয়ার যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠে যায়।

আর জেনারেল বিপিন রাওয়ত যদি বুঝেশুনেই করে থাকেন অনাকাঙ্খিত মন্তব্যটা, যদি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে নিজের অধিকারের সীমা লঙ্ঘন করে থাকেন, তাহলে বিপদ আরও বেশি। সামরিক বাহিনীর কর্তারা কখনও এ দেশে নিজেদের সাংবিধানিক অধিকারের বাইরে গিয়ে সক্রিয়তা দেখানোর চেষ্টা করেননি। জেনারেল রাওয়তের এই আচরণ অতএব নজিরবিহীন। শুধু নজিরবিহীনই নয়, সেনাপ্রধানের এই অতি সক্রিয়তা গণতন্ত্রের পক্ষে কোনও সুলক্ষণও নয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE