Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Editorial News

পর্রীকর আপনিও! স্তম্ভিত হতে হয়

স্তম্ভিত হতে হয়! অন্যতম শীর্ষ সাংবিধানিক পদাধিকারীর বিচারবুদ্ধি দেখে বিস্মিত হতে হয়। আমাদের সমাজে পুরুষতান্ত্রিক অসহিষ্ণুতা উল্লেখযোগ্য মাত্রায় অস্তিত্বশীল। তার প্রতিফলন রাজনীতিকদের একাংশের কথাবার্তায় বা কাজকর্মে টেরও পাওয়া যায়।

মনোহর পর্রীকরের মুখ থেকে এমন একটা নারীবিদ্বেষী কথা কখনও শুনতে হবে, অনেকেই সম্ভবত তা আশা করেননি। ছবি: সংগৃহীত।

মনোহর পর্রীকরের মুখ থেকে এমন একটা নারীবিদ্বেষী কথা কখনও শুনতে হবে, অনেকেই সম্ভবত তা আশা করেননি। ছবি: সংগৃহীত।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০০:৩১
Share: Save:

আবার সেই অসহিষ্ণুতা, কিন্তু অন্য একটা রূপ ধরে। এত দিন দেখছিলাম ধর্মীয় বা সাম্প্রদায়িক অসহিষ্ণুতা, এ বার দেখলাম পুরুষতান্ত্রিক অসহিষ্ণুতা। যে রাজনীতিককে ঈষৎ প্রগতিশীল এবং আধুনিকমনস্ক হিসেবে চিনত দেশ, সেই মনোহর পর্রীকর মেয়েদের বিয়ার-পান বা মদ্যপান নিয়ে বিরক্তি তথা উদ্বেগ তথা আতঙ্ক প্রকাশ করে বসলেন। তিনি যে আর সহিষ্ণু থাকতেও পারছেন না, তাও অকপটেই যেন স্বীকার করলেন।

স্তম্ভিত হতে হয়! অন্যতম শীর্ষ সাংবিধানিক পদাধিকারীর বিচারবুদ্ধি দেখে বিস্মিত হতে হয়। আমাদের সমাজে পুরুষতান্ত্রিক অসহিষ্ণুতা উল্লেখযোগ্য মাত্রায় অস্তিত্বশীল। তার প্রতিফলন রাজনীতিকদের একাংশের কথাবার্তায় বা কাজকর্মে টেরও পাওয়া যায়। কিন্তু সময়ের ছন্দে ধীরে ধীরে এই সব প্রবণতা বিলীন হয়ে যাওয়ার কথা। হচ্ছে যেন উল্টোটা। পুরুষতান্ত্রিকতা, গোঁড়ামি, কট্টর সাম্প্রদায়িকতা, অসহিষ্ণুতা ইত্যাদি থেকে মুক্ত হিসেবে আমরা চিনতাম যে রাজনীতিকদের, তাঁরাও যেন কেমন সময়ের প্রবাহের বিপ্রতীপে পা ফেলতে শুরু করছেন। গোয়ার মুখ্যমন্ত্রী মনোহর পর্রীকরের মুখ থেকে এমন একটা নারীবিদ্বেষী কথা কখনও শুনতে হবে, অনেকেই সম্ভবত তা আশা করেননি।

মদ্যপানে বিপদ রয়েছে, সে কথা অনস্বীকার্য। মদ্যপানের বিপদ সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট সতর্কীকরণও রয়েছে। স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সেই সব সতর্কীকরণকে গুরুত্ব দেওয়া অবশ্যই খুব জরুরি। কিন্তু স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সতর্কীকরণ শুধু নারীর জন্য রয়েছে, পুরুষের জন্য নেই, এমন তো নয়। মদে নারীর বিপদ আর পুরুষের উন্নতি, এমন তো নয়। কিন্তু মনোহর পর্রীকর পুরুষের মদ্যপান নিয়ে ততটা উদ্বিগ্ন নন, যতটা আতঙ্কিত তিনি নারীর মধ্যে বিয়ার-পানের ক্রমবর্ধমান প্রবণতায়।

সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

স্বাস্থ্য সংক্রান্ত কোনও প্রেক্ষিত থেকে যদি মন্তব্যটি করতেন গোয়ার মুখ্যমন্ত্রী, এ মন্তব্যকে সমর্থন করার আপ্রাণ চেষ্টা করা যেত। কিন্তু, গোয়া বিধানসভা আয়োজিত যুব সংসদ কর্মসূচিতে ভাষণ দিতে গিয়ে যখন সামাজিক প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণ করছিলেন পর্রীকর, তখনই তিনি মেয়েদের মধ্যে বিয়ার-প্রীতি বাড়া নিয়ে নিজের আতঙ্কের কথা জানালেন। স্বাস্থ্য সংক্রান্ত উদ্বেগ থেকে যে কথাগুলো বলেননি, সামাজিক প্রেক্ষিত থেকেই যে বলেছেন, তা স্ফটিকের চেয়েও স্বচ্ছ। মনোহর পর্রীকর, আপনার থেকে অন্তত প্রত্যাশিত ছিল না এ রকম মন্তব্য।

আরও পড়ুন
‘মহিলাদের দেদার বিয়ার খেতে দেখে খুব ভয় পাচ্ছি’

মেয়েদের মধ্যে বিয়ার-পানের ক্রমবর্ধমান প্রবণতা তাঁর সহিষ্ণুতার সীমা লঙ্ঘন করে যাচ্ছে— এমন মন্তব্যও করেছেন গোয়ার মুখ্যমন্ত্রী। পর্রীকর কি জানেন না, এই মন্তব্যের ফলশ্রুতি কী হতে পারে? তাঁর মতো প্রভাবশালী রাজনীতিক তথা একটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর এ হেন মন্তব্য পুরুষতান্ত্রিক আক্রোশকে কতখানি প্ররোচিত বা উৎসাহিত করতে পারে এবং তার জেরে মহিলাদের উপর কত রকমের বিপদ নেমে আসতে পারে, পর্রীকর সে বিষয়ে সচেতন কি নন? দায়িত্বশীল পদে বসে এমন দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য তিনি করলেন কী ভাবে? সহিষ্ণুতার সীমাটা যে আসলে তিনিই লঙ্ঘন করলেন, তা কি মনোহর পর্রীকর বুঝতে পারছেন? যদি বুঝতে পারেন, তা হলে ভুলটা শুধরে নিন। যদি বুঝতে না পারেন, তা হলে বুঝতে হবে পর্রীকরেরও গোড়ায় গলদ রয়েছে। যা আসলে গোঁড়ামির গলদ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE