Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪
প্রবন্ধ ২

লড়াইটা একসঙ্গে করা চাই

মানব পাচার রোধে ভারত-মার্কিন উদ্যোগ বিষয়ে লিখছেন কলকাতায় নিযুক্ত মার্কিন কনসাল জেনারাল ক্রেগ হলমর্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের অংশীদারি বিশ্বের কঠিনতম সমস্যারও মোকাবিলা করতে পারে। অত্যাধুনিক যে আন্তর্জাতিক অপরাধচক্র মানব পাচার থেকে বিপুল মুনাফা লুটছে তার মোকাবিলায় দু’দেশের যৌথ নেতৃত্ব জরুরি। এর জন্য প্রশাসন, বিচার বিভাগ, সমাজকল্যাণ দফতর, শিক্ষা, কূটনৈতিক, গোয়েন্দা বিভাগ এবং বাণিজ্য মন্ত্রককে একযোগে তৎপর হতে হবে।

ক্রেগ হল
শেষ আপডেট: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০০:১৩
Share: Save:

মর্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের অংশীদারি বিশ্বের কঠিনতম সমস্যারও মোকাবিলা করতে পারে। অত্যাধুনিক যে আন্তর্জাতিক অপরাধচক্র মানব পাচার থেকে বিপুল মুনাফা লুটছে তার মোকাবিলায় দু’দেশের যৌথ নেতৃত্ব জরুরি। এর জন্য প্রশাসন, বিচার বিভাগ, সমাজকল্যাণ দফতর, শিক্ষা, কূটনৈতিক, গোয়েন্দা বিভাগ এবং বাণিজ্য মন্ত্রককে একযোগে তৎপর হতে হবে।

বাধ্যতামূলক শ্রমদান এবং দেহব্যবসার জন্য ভারত থেকে পুরুষ, নারী ও শিশু অন্যত্র পাচার হয়, আবার পাচার হয়ে ভারতেও আসেন বহু মানুষ। বস্তুত ভারত এই পাচারের সংযোগ পথ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। হাজার হাজার অনিয়ন্ত্রিত নিয়োগকারী সংস্থা শিশু ও প্রাপ্তবয়স্কদের মিথ্যে চাকরির টোপ দিয়ে দেহব্যবসায়, বাড়ির কাজে এবং ইচ্ছার বিরুদ্ধে শ্রমদানে বাধ্য করে। ভারতে ইটভাটা, চালকল, কৃষি এবং এমব্রয়ডারি শিল্পে এই ধরনের জবরদস্তি শ্রমিক নিয়োগের সমস্যা সবচেয়ে বেশি। একেবারে পিছিয়ে পড়া বর্গের নারী ও নাবালিকাদের অবস্থাই সবচেয়ে বিপজ্জনক।

এই আন্তর্জাতিক সমস্যার মোকাবিলায় বিশ্বের তাবৎ দেশকে একসঙ্গে আধুনিক মানব পাচার বিরোধী আইন করতে হবে এবং আইন ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করে তুলতে হবে। ব্যবসায় শ্রমিকের জোগান পৃথিবীর যে প্রান্ত থেকেই আসুক, কাউকে যেন ইচ্ছার বিরুদ্ধে শ্রম দিতে বাধ্য করা না হয়, ব্যবসা মালিকরা তা সুনিশ্চিত করতে দায়বদ্ধ থাকবেন। সুখবর এটাই যে, বহু দায়িত্বশীল সংস্থা এই প্রেক্ষিতে নিজেদের মান উন্নত করে চলেছে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বলেছেন, ‘যা আমাদের সর্বজনীন মানবতার চরম অবমাননা তা নিয়ে প্রত্যেকেরই ভাবা উচিত। ... আমি মানব পাচারের অবিচার আর ভয়াবহতার কথা বলছি, যার সঠিক নাম: আধুনিক ক্রীতদাস প্রথা।’

২০১৫ সালে মার্কিন সরকার মানব পাচার মোকাবিলার জন্য পৃথিবী জুড়ে বিভিন্ন সাহায্যকারী সংগঠনকে আর্থিক অনুদান এবং সমবায় চুক্তি বাবদ এক কোটি ৮০ লাখ ডলার দিয়েছে। ভারত সহ নির্দিষ্ট কয়েকটি দেশে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মানব পাচার রোধ, সুরক্ষা এবং আইনগত প্রক্রিয়া সংক্রান্ত বিষয়ে মোট ২৭টি প্রকল্পের মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কাজ করে চলেছে বেশ কয়েকটি অ-সরকারি ও আন্তর্জাতিক সংগঠন।

কলকাতার মার্কিন কনসুলেট জেনারেল কিছু বছর ধরে মানব পাচারের বিষয়টি নিয়ে সমাবেশের আয়োজন করে আসছে। কলকাতায় ২০১২ সালে দু’টি সমাবেশের পরে ২০১৩’য় গুয়াহাটিতে তৃতীয় ও চতুর্থটি হয়েছে গত বছর রাঁচিতে। এই উদ্যোগ স্থানীয় ও আঞ্চলিক স্তরে মানব পাচার বিরোধী ব্যক্তি ও সংগঠনের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অংশীদারির উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। এই সব সমাবেশ মানব পাচার মোকাবিলায় সক্রিয় বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংগঠনের সংযোগকে আরও মজবুত করেছে।

পঞ্চম আন্তর্জাতিক সমাবেশটি আয়োজিত হচ্ছে আগামী কাল ও পরশু, ১২ ও ১৩ ফেব্রুয়ারি পশ্চিমবঙ্গের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর শিলিগুড়িতে। গত এক দশক যাবৎ নাবালিকা কন্যা পাচারের অন্যতম উৎস ও গন্তব্যস্থল হয়ে উঠেছে এই শহর। সমাবেশের প্রধান লক্ষ্য নারী ও নাবালক, নাবালিকাদের বঞ্চনা ও শোষণ প্রতিরোধে এবং পাচার হওয়া মানুষের সুরক্ষায় মজবুত ও সুসমন্বিত অংশীদারি গড়ে তোলা। যোগ দেবেন প্রতিবেশী দেশগুলির প্রতিনিধিরাও। থাকবেন সরকারি আধিকারিকবৃন্দ এবং অ-লাভজনক ক্ষেত্র, বিদেশি দূতাবাস ও নানা সংগঠনের প্রতিনিধিরা, এই সমস্যা নিয়ে ভাবনাচিন্তা করেন এমন কয়েক জন সেলেব্রিটিও। শিলিগুড়ি সমাবেশের অন্যতম মুখ্য অভিমুখ হবে মানব পাচার প্রতিরোধে স্থানীয়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরে সরকার ও আইন-প্রয়োগকারী সংস্থাগুলির সঙ্গে সমন্বয়ের পথ মসৃণতর করে তোলা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই কর্মযজ্ঞে যোগ দেবার জন্য সমস্ত শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষকে আহ্বান জানাচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE