Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
International news

আর কিন্তু সময় নেই, খুব দ্রুত ঐক্যবদ্ধ হতে হবে সভ্য পৃথিবীকে

এ কোন যুদ্ধ? নিরীহ, নিরপরাধ, নিরস্ত্র মানুষকে বার বার বলি দিয়ে কোন লক্ষ্যে পৌঁছনো যাবে? কার স্বার্থে এ যুদ্ধ হচ্ছে? প্রত্যেক আঘাতে অজস্র প্রাণহানি ঘটিয়ে কোন উদ্দেশ্য সাধিত হবে?

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ২৪ মে ২০১৭ ০৫:০৯
Share: Save:

এ কোন যুদ্ধ? নিরীহ, নিরপরাধ, নিরস্ত্র মানুষকে বার বার বলি দিয়ে কোন লক্ষ্যে পৌঁছনো যাবে? কার স্বার্থে এ যুদ্ধ হচ্ছে? প্রত্যেক আঘাতে অজস্র প্রাণহানি ঘটিয়ে কোন উদ্দেশ্য সাধিত হবে? এমন ভয়ঙ্কর আঘাতে বার বার মানবজাতিকে রক্তাক্ত করে মানবতার কোনও কল্যাণ সাধিত হতে পারে না। ম্যানচেস্টারের এই জঘন্য হত্যালীলারচক্রী যারা, তার মানবজাতির সবচেয়ে বড় শত্রু, সভ্যতার সর্বাপেক্ষা ঘৃণিত প্রতিপক্ষ।

সভ্যতার সুদীর্ঘ ইতিহাসে এত বড় সঙ্কটকালের সম্মুখীন মানবসভ্যতা আগে কত বার হয়েছে, বলা কঠিন। সন্ত্রাস কোনও সাম্প্রদায়িক সঙ্কট নয়, রাজনৈতিক সঙ্কট নয়, কোনও সাম্রাজ্যবাদী সঙ্কট নয়। সন্ত্রাস হল মানবজাতির মধ্যে এখনও বেঁচে থাকা বর্বরতা এবং অসভ্যতা থেকে জন্ম নেওয়া এক সঙ্কট। সন্ত্রাস হল মানবতার সঙ্কট। এ পৃথিবী তথা এ মানব সভ্যতা মাত্সন্যায় দেখেছে নানা প্রান্তে, নানা সময়ে। এ পৃথিবী তথা এ সভ্যতা দাস প্রথা দেখেছে। সাদা-কালোয় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ দেখেছে, সাম্রাজ্যবাদের আগ্রাসী থাবা দেখেছে, দুটো সংহারক বিশ্বযুদ্ধ দেখেছে, আণবিক বোমার করাল গ্রাস দেখেছে। সে সবও মানবতার সঙ্কটই ছিল, ছিল সভ্যতার মর্মোপলব্ধি করতে না পারার সঙ্কট। কিন্তু সন্ত্রাসবাদ সে সব ফেলে আসা সঙ্কটের ব্যাপ্তিকে অনেকখানি ছাপিয়ে গিয়ে, আরও দীর্ঘায়িত সময়কাল জুড়ে, মানবতার উপর যেন আরও প্রলম্বিত ছায়া ফেলছে। নিভিয়ে দিতে চাইছে সভ্যতার যাবতীয় আলো।

রাতের ম্যানচেস্টারে জীবনের জয়গান চলছিল, তার মাঝে আচমকা মৃত্যুর উল্লাস নামানো হয়েছে। ঝরে গিয়েছে অনেকগুলো তরতাজা প্রাণ, জীবনের অপরিসীম অপচয় হয়েছে। আমেরিকার অরল্যান্ডোতেও ছবিটা এই রকমই ছিল। ফ্রান্সের প্যারিস বা নিসেও তৈরি হয়েছিল এমনই দৃশ্যপট। বেলজিয়ামের ব্রাসেলসে, ভারতের মুম্বইতে, আমেরিকার নিউইয়র্কে, বাংলাদেশের ঢাকায়, ব্রিটেনের লন্ডনে— একই ছবির পুনরাবৃত্তি দেখা গিয়েছে নানা সময়ে।

জীবনের এই মর্মান্তিক অপচয়ের মাধ্যমে কিন্তু কোনও ভাবেই কোনও মহৎ গন্তব্যে পৌঁছনো সম্ভব নয়। মৃত্যু আর রক্তক্ষয়ের এই উৎসবকে সংগ্রাম নামে ডাকে সন্ত্রাসবাদীরা। কিন্তু তাতে সংগ্রাম শব্দের অপব্যাখ্যা হয় মাত্র। সন্ত্রাসবাদীরা নিজেরাও জানে না, তারা কোন গন্তব্যে পৌঁছতে চায়। তারা দিশাহীন, তাদের হামলাও দিশাহীন। লড়াই কার বিরুদ্ধে? স্পষ্ট নয়। নাশকতার লক্ষ্য কারা? নির্দিষ্ট নয়। সম্বল শুধু দিশাহীন আঘাত, কাঙ্ক্ষিত শুধু রক্ত আর রক্ত। ‘যুদ্ধে’ যাদের হাতিয়ার হয় এই চরম চূড়ান্ত অন্যায়, তাদের লক্ষ্যটাও যে অন্যায়ই সে নিয়ে বিন্দুমাত্র সংশয় নেই।

সন্ত্রাস আসলে অশুভের প্রতীক, অকল্যাণের প্রতীক। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইটাও হল অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে শুভ শক্তির লড়াই। এ লড়াই কিন্তু আমাদের জিততেই হবে। সভ্যতার ইতিহাস সাক্ষী, মানবতার যাবতীয় সঙ্কট আমরা উতরে গিয়েছি এ যাবৎ। সন্ত্রাস হয়তো আরও বড় সঙ্কট হয়ে দেখা দিয়েছে। কিন্তু বিশ্ব মানবতার বিপুল শক্তি তার চেয়ে অনেক বড়। দরকার শুধু ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ। আমরা নিশ্চয়ই সে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারব। কিন্তু খেয়াল রাখতে হবে, সময়টা বড্ড কমে আসছে। প্রতিরোধে একত্রিত হতে এ বার একটু পা চালিয়ে এগোতে হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE