Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
National news

অখণ্ড ভারতের যে ছবিটা নিয়ে আমাদের যাবতীয় স্বপ্ন, সেটা থাকবে তো?

দেশভক্তি এবং রাষ্ট্রপ্রেমের প্রিজমে যদি দেখা যায় সব কিছুকে, তা হলে বাকি রঙগুলোকে অস্বীকার করা যায় বেশ, পৃথিবীটাকে দেখা যায় সাদায় বা কালোয়।

আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জয়ের পর পাকিস্তান। ছবি: সংগৃহীত।

আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জয়ের পর পাকিস্তান। ছবি: সংগৃহীত।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ২১ জুন ২০১৭ ০৩:১০
Share: Save:

কখনও সময় আসে, যখন যুক্তিকে পিছনে ফেলে অন্ধ আবেগ কাজ করে সর্বতোভাবে। সেই আবেগে যদি জাতীয়তাবাদের রঙ লাগিয়ে দেওয়া যায়, তখন আপামরের কাছে প্রশ্নাতীত ভঙ্গিতে পেশ করাটা বেশ সহজ হয়ে যায়। দেশভক্তি এবং রাষ্ট্রপ্রেমের প্রিজমে যদি দেখা যায় সব কিছুকে, তা হলে বাকি রঙগুলোকে অস্বীকার করা যায় বেশ, পৃথিবীটাকে দেখা যায় সাদায় বা কালোয়।

এর একটা সুবিধা রয়েছে। সপ্তরঙের এই বাস্তব জগত্ থেকে বায়বীয় সাদা-কালোর জগতে যদি ফেলে দেওয়া যায়, তা হলে সত্য থেকে যতই দূরে থাকা যাক না কেন, গ্রহণযোগ্য ভাবে তুলে ধরা যায় অন্তত অনেকেরই কাছে। এই সাদা-কালোর জগতে প্রশ্ন করা যায় না, প্রশ্ন করাটা সেখানে দেশদ্রোহিতার সামিল। অতএব, এই নিয়মটি মেনে মধ্যপ্রদেশের বিজেপি সরকার রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে ১৫ জনকে গ্রেফতার করেছে। তাঁদের ‘অপরাধ’ নাকি গুরুতর! ভারত-পাকিস্তান ক্রিকেট ম্যাচ চলাকালীন তাঁরা পাকিস্তান দলকে সোল্লাসে সমর্থন জানিয়েছিলেন এবং বাজিও ফাটিয়েছিলেন। কঠোর প্রশাসন, দ্রুত সিদ্ধান্ত, এবং দ্রুততর রূপায়ণে গ্রেফতার হওয়া এই ১৫ জন আপাতত জেলে।

কিন্তু তবু নিরীহ প্রশ্নটি রয়ে গেল। যেহেতু, মধ্যপ্রদেশ শিবঠাকুরের আপন দেশ নয়, এবং সেখানে একুশে আইন বলবত্ নেই, তবে নির্দিষ্ট কী কারণে এই যুবকেরা রাষ্ট্রদ্রোহী হয়ে গেলেন? ভারতীয় ক্রিকেট দলের (যা বিসিসিআই-এর অধীন এবং এর সঙ্গে ভারত সরকারের কোনও সম্পর্ক নেই) প্রতিদ্বন্দ্বী কোনও ক্রিকেট দলকে সমর্থন করা কি বেআইনি? অসাংবিধানিক? সম্পূর্ণ বেসরকারি ভাবে নিয়ন্ত্রিত আন্তর্জাতিক এক টুর্নামেন্টে ভারতকে কেউ যদি সমর্থন না করেন, সোশ্যাল মিডিয়ার যূথবদ্ধ শাণিত আক্রমণে তাঁকে ধরাশায়ী করা যেতে পারে হয়ত, কিন্তু আইন ঠিক কোন পথে হাতকড়ি পরাবে?

মুশকিলটা হল, যাঁরা এই হাতকড়িটা পরাচ্ছেন, তাঁরাও জানেন, ধোপে টিকবে না ওই শৃঙ্খল। জেনেও করছেন তাঁরা, কারণ দেশপ্রেম ও জাতীয়তাবাদের মৌতাতের এই সার্বিক আবহেই তো এটা করা যায়। এবং প্রশ্নাতীত ভাবেই করা যায়। বরং প্রশ্ন তুললে দেশদ্রোহী তকমা লাগিয়ে দেওয়া যায়। এই আবহেই গড়ে তুলতে হয় ভয়ের পরিবেশ। ভিন্ন সুর শুনলেই সেখানে রাষ্ট্রের দণ্ড হাজির হবে। তৈরি করতে হবে ঘৃণার পরিবেশ। দেশের নামে যখন ঘৃণাপ্রকাশটাও হয়ে ওঠে বেশ একটা ফ্যাশন।

এক অখণ্ড ভারতের যে ছবিটাকে নিয়ে আমাদের যাবতীয় স্বপ্ন, সেটা থাকবে তো?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE