দিন বদলাইতেছে। পশ্চিমবঙ্গের কিছু এলাকায় সাধারণ ঘরের বধূ ও কন্যারা মার্শাল আর্টসের জগতে প্রবেশ করিতেছেন। কেহ তাইকোন্ডো-র প্রশিক্ষণ লইতেছেন, কেহ ক্যারাটে শিখিতেছেন, কেহ বা অন্য কিছু। এই ধরনের শারীরিক কসরতের অনুশীলন ক্রমশ ছড়াইয়া পড়িতেছে সমাজে। এই অনুশীলন শরীর মজবুত করিবার সহিত আত্মবিশ্বাস এবং মানসিক দৃঢ়তা বাড়াইতে সাহায্য করে। আশা করা যায়, ইহাতে মেয়েদের সাহস বাড়িবে, এই চর্চা তাঁহাদের নিত্যজীবনের বিভিন্ন বিপদআপদ এবং মানসিক ঝড়-ঝাপটার সহিত জুঝিতে সহায়তা করিবে। বৃহত্তর লাভ: তাঁহারা বিভিন্ন ক্ষেত্রে নিজেদের ভূমিকা প্রসারের কথা, উত্তরণের কথা ভাবিবেন। যে আত্মবিশ্বাস ও মানসিক জোর এই প্রশিক্ষণ হইতে লাভ করিবেন, তাহা জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রয়োগ করিতে পারিবেন। বাড়তি পাওনা: এই প্রশিক্ষণের সময়টুকু হয়তো-বা তাঁহাদের দৈনন্দিন একঘেয়েমি হইতে মুক্তির সময়ও বটে। অন্তত দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার তাইকোন্ডো-শিক্ষার্থী মেয়েরা অনেকেই তাহা বলিতেছেন। এই মুক্তিবোধ মূল্যবান বইকি।
কেবল একটি প্রশ্ন: এই শিক্ষা স্বাভাবিক আত্মবিকাশের তাগিদে, না কি অস্বাভাবিক আশঙ্কার তাড়নায়? অনেকেই হয়তো মার্শাল আর্টস শিখিতছেন, কারণ শিখিবার ‘প্রয়োজন’ রহিয়াছে। নিজেকে সম্ভাব্য ধর্ষণ হইতে, লাঞ্ছনা হইতে, অসম্মান হইতে রক্ষা করিবার প্রয়োজন। সেই প্রয়োজনের উৎসে রহিয়াছে এক ধরনের আতঙ্কও। ধরিয়াই লওয়া হইতেছে, কোনও না কোনও দিন, কোনও না কোনও সময় প্রতিটি মেয়ে অসম্মানের শিকার হইতেই পারেন। সেই আশঙ্কা উত্তরোত্তর বাড়িতেছে। সমাজ আর নিরাপত্তার যথেষ্ট আশ্বাস দিতে পারিতেছে না। যে কসরত, এত দিন বলা হইত, শিখিয়া রাখিলে ভাল, ক্রমশ যেন বলা হইতেছে তাহা ‘শিখিতেই হইবে’। যাহা হইতে পারিত আত্মবিকাশের পথ, তাহা যেন হইয়া উঠিতেছে এক ধরনের বাধ্যবাধকতা। সকলের ক্ষেত্রে না হউক, অনেকের ক্ষেত্রে। এমন পরিণতি ভয়ের।
ভয় হয় অন্য কারণেও। আত্মরক্ষার ভার অতঃপর মেয়েদেরই হাতে ন্যস্ত করিয়া প্রশাসন হাত না ধুইয়া লয়! বলিতে না শুরু করে, মার্শাল আর্টস তো শেখানো হইতেছেই, আবার আলাদা করিয়া সুরক্ষার ভার লইতে হইবে কেন? এমনকী কৈফিয়ত চাহিয়া না বসে— বাকি মেয়েরাও নিজেদের সুরক্ষার্থে কোনও একটি কসরত শিখিতেছেন না কেন— নিজেদের রক্ষা করা তো নিজেদেরই কর্তব্য! ইদানীং প্রশাসনের আচরণ দেখিলে এমন আশঙ্কা হওয়া অস্বাভাবিক নহে। মেয়েরা আত্মরক্ষা নিশ্চয়ই করিতে পারে। সে-জন্য যদি তাহারা শারীরিক কসরত শেখে, তাহাতেও আপত্তির প্রশ্ন নাই। কিন্তু তাহাতে প্রশাসনের দায়িত্ব এক আনাও কমে না। সেই দায়িত্ব অস্বীকার করিবার পরিণাম কী হইতে পারে, তাহা এই মুহূর্তের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দিকে চাহিলেই স্পষ্ট হয়। বিশ্বের সর্বাপেক্ষা শক্তিশালী দেশের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁহার দেশে কলেজে বিদ্যালয়ে অহরহ গুলিচালনার দাপট সামলাইবার জন্য শিক্ষকদের হাতে বন্দুক তুলিয়া দিবার পরামর্শ দিয়াছেন! তাইকোন্ডো নিশ্চয়ই বন্দুক অপেক্ষা নিরাপদ, কিন্তু প্রশাসনের দায় এড়াইবার মানসিকতা, মার্কিন দুনিয়ায় হোক অথবা ভারতে, কিছু কম ভয়ঙ্কর নহে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy