Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
International news

আশ্বাস তো পাচ্ছি, কিন্তু ভরসা পাচ্ছি কোথায়?

সন্ন্যাসী আসেননি, এসেছিল তস্কর। জানা গেল, ভিক্ষা নেওয়ার ছলে অসাধু ব্যক্তি যে সব মূল্যবান সামগ্রী হাতিয়ে নিয়েছিল, সে সবই অনৈতিক কাজে ব্যবহৃত হয়েছে।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ২৩ মার্চ ২০১৮ ০০:১৪
Share: Save:

প্রকাশ্যে, সর্বসমক্ষে, সদর দরজা দিয়ে চোর এল সাধুবেশে। ধরাই গেল না ছদ্মবেশ। সাধু উদ্দেশ্যেই মূল্যবান সামগ্রী তুলে দেওয়া হল আগন্তুকের হাতে, অনেকটা যেন সন্ন্যাসীর ভিক্ষাপাত্রে অকাতরে দান। পরে জানা গেল, সন্ন্যাসী আসেননি, এসেছিল তস্কর। জানা গেল, ভিক্ষা নেওয়ার ছলে অসাধু ব্যক্তি যে সব মূল্যবান সামগ্রী হাতিয়ে নিয়েছিল, সে সবই অনৈতিক কাজে ব্যবহৃত হয়েছে।

ফেসবুক কাণ্ড অনেকটা এরকমই। ইউজারদের তথ্য ফাঁস নিয়ে প্রায় গোটা পৃথিবীতে হইচই শুরু হয়ে যাওয়ার পর মুখ খুলেছেন ফেসবুক সিইও মার্ক জুকেরবার্গ। তিনি দাবি করেছেন, তথ্য চুরি হয়নি, ফেসবুক কর্তৃপক্ষকে ভুল বুঝিয়ে হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে।

ধরে নেওয়া যাক, সত্যই বলছেন জুকেরবার্গ। ধরে নেওয়া যাক, ফেসবুক কর্তৃপক্ষ না চাইলে ইউজারদের ব্যক্তিগত তথ্যে অনাকাঙ্খিত উঁকি দেওয়ার ক্ষমতা কারও নেই। কিন্তু তাতেও কি উদ্বেগ কমে? আমার সম্পর্কে নানা তথ্য জমা পড়েছিল সোশ্যাল মিডিয়ার কর্তৃপক্ষের হাতে এক প্রান্ত দিয়ে। আমার অজান্তেই অন্য কোনও এক প্রান্ত দিয়ে, অন্য কারও হাতে পৌঁছে গেল সে সব। তা নাকি আবার অত্যন্ত অনৈতিকভাবে ব্যবহৃতও হল। আমার উদ্বেগ তাহলে কমবে কী ভাবে? আমি জানতেই পারছি না, আমার সম্পর্কে ঠিক কী কী তথ্য হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে। আমি জানতেই পারছি না, আমার সম্পর্কে যে সব তথ্য বেহাত হয়েছে, সে সব ঠিক কী ভাবে, কার দ্বারা এবং কী উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হবে। এই পরিস্থিতি উদ্বেগের জন্ম না দিয়ে যায় কোথায়!

সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

উদ্বেগ শুধু ফেসবুককে নিয়ে বা সোশ্যাল মিডিয়াকে নিয়ে নয় আর। উদ্বেগ এখন আধারকে নিয়েও। যে সব তথ্য সোশ্যাল মিডিয়ায় জমা রয়েছে আমার বিষয়ে, তার চেয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ এবং গোপনীয় তথ্য আমি আধার কর্তৃপক্ষকে দিয়েছি। ই-দুনিয়ায় জমা পড়া অন্যান্য তথ্যের মতো, এই তথ্যও কি অসুরক্ষিত? আধার সংক্রান্ত তথ্য কি অনাকাঙ্খিত হাতে পৌঁছয় এবং যদি তার অপব্যবহার হয়, তাহলে ঠিক কতটা সমস্যায় পড়তে পারি আমি? তথ্য হাতিয়ে আমাকে কি কেউ বিপদে ফেলতে পারে? নিজের অজান্তেই কোনও চক্রান্তের অংশীদার হয়ে যাচ্ছি না তো, আধার থেকে তথ্য হাতিয়ে ভারতের নির্বাচনকে অনৈতিকভাবে প্রভাবিত করার কোনও চেষ্টা হবে না তো? স্বাভাবিক ভাবেই গুচ্ছ প্রশ্ন ভিড় জমিয়েছে।

আরও পড়ুন: আধার যাচাইয়ে ত্রুটির সম্ভাবনা, মানলেন কর্তাই

সরকার আশ্বাস দিচ্ছে, আধার সম্পূর্ণ নিরাপদ। আধারে সমন্বিত তথ্য কঠোর নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে রয়েছে বলে কেন্দ্রীয় সরকার দাবি করছে। কিন্তু ফেসবুক-কাণ্ডের পর সেই দাবিতে কতখানি ভরসা রাখা যায়, সে প্রশ্ন থাকছেই।

আরও পড়ুন: দুঃখিত, সব দায় আমারই, ক্ষমা চাইলেন মার্ক

আমাদের তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রক দাবি করছে, অত্যন্ত কঠোর সাইবার আইন রয়েছে এ দেশে। নিজেদের সাইবার আইনকে কাজে লাগিয়ে মার্ক জুকেরবার্গকে এ দেশে তলব করা যেতে পারে বলেও মন্ত্রী সদর্পে জানাচ্ছেন। কিন্তু ভারতের সাইবার আইন সম্পর্কে বিশদে খোঁজ নিলেই যে কেউ জানতে পারবেন, আইনটি ১০ বছরের পুরনো। গত ১০ বছরে অনেকটা রাস্তা অতিক্রম করে ফেলেছে সাইবার দুনিয়া, অনেক কিছু বদলে গিয়েছে। তার সঙ্গে তাল মেলাতে ভারতের সাইবার আইনে যে সব পরিবর্ধন ও পরিমার্জন জরুরি ছিল, তা হয়নি। অতএব সাইবার নিরাপত্তার বিষয়ে আমাদের সরকার কতটা যত্নবান, সে আর বুঝতে বাকি থাকছে না।

শুধু কথায় আর আশ্বাসে উদ্বেগ দূর হবে না, বুঝতে হবে রবিশঙ্করপ্রসাদকে, বুঝতে হবে সরকারকে। সাইবার দুনিয়ায় জমা পড়া তথ্য যে যথেষ্ট নিরাপদ , সে কথা আরও ১০০ বার বলেও কোনও লাভ নেই। হাতে-কলমে প্রমাণ দেওয়া জরুরি এখন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE