খুবই প্রাসঙ্গিক একটা সময়ে সামনে এল রিপোর্টটা। দূষণে অকালমৃত্যুর করাল ছায়া গোটা পৃথিবীকে ঘিরে, আর সে ছায়াপাত সবচেয়ে গাঢ় ভারতের উপরে। দূষণের মেঘ যে এতখানি ঘনিয়ে উঠেছে আকাশ জুড়ে, দ্য ল্যানসেট মেডিক্যাল জার্নালে দূষণজনিত অকালমৃত্যুর প্রতিবেদন প্রকাশিত না হলে তা সম্ভবত অনেকেই উপলব্ধি করতেন না। সদ্য দীপাবলি উদ্যাপিত হয়েছে দেশ জুড়ে। বাজি পোড়ানোয় রাশ টানার চেষ্টা হয়েছিল। তীব্র বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন অনেকেই। বিধিনিষেধ উড়িয়ে বাজির দাপট বুঝিয়ে দিয়েছেন এই ‘প্রতিবাদীরা’ রাত বাড়তেই। তাতে যে আসলে উদ্যত এক চিররাত্রির আবাহানই নিহিত, সে কথা বুঝতে পারেননি সম্ভবত কেউই।
ক্রমশ বাড়ছে দূষণ, বাড়ছে দূষণজনিত অসুস্থতা, বাড়ছে দূষণজনিত অকালমৃত্যু। শুধু ২০১৫ সালেই পৃথিবী জুড়ে দূষণজনিত অকালমৃত্যু প্রায় ৯০ লক্ষ। তার প্রায় ২৫ লক্ষই ভারতে।
কয়েকটা সংখ্যার সমাহার কিন্তু নয় এই তথ্য। এই তথ্য আসলে উদ্বেগের সমাহার। আমাদের দেশে দূষণ এবং দূষণজনিত অসুস্থতা এই মাত্রায় পৌঁছে গিয়েছে! দূষণের জেরে সবচেয়ে বেশি নাগরিকের অকালমৃত্যু আমাদের দেশেই হয়! সাদা চোখে হয়তো বোঝা যায় না, পরিস্থিতি এত ভয়াবহ হয়ে উঠেছে ক্রমে ক্রমে পৃথিবীর এই প্রান্তে। কিন্তু অনেকগুলো শিবির থেকেই বিপদঘণ্টা বাজিয়ে সকলকে সতর্ক করে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছিল অনেক দিন ধরে। আমাদের মধ্যে অধিকাংশই ভেবে নিয়েছিলেন, ওই সব সতর্কবার্তায় খুব একটা গুরুত্ব না দিলেও চলে। বিপর্যয় যে এত কাছে দাঁড়িয়ে রয়েছে, আমাদের অনেকেই বুঝতে চাননি সে কথা। দ্য ল্যানসেট-এর রিপোর্টের কথা কানে যেতেই চোখ খুলতে বাধ্য হয়েছেন কেউ কেউ। চোখ খুলেই তাঁরা দেখছেন, একেবারে খাদের কিনারায় দাঁড়িয়ে রয়েছে গোটা অস্তিত্ব যেন।
দীপাবলিতে বাজি পোড়ানোয় সামান্য সংযম দেখতে চেয়েছিল দেশের সর্বোচ্চ আদালত। শুধু জাতীয় রাজধানী অঞ্চলে বাজি বিক্রির উপর সাময়িক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিল। ভারতের নাগরিকরা ভারতের বিচার বিভাগকে বুঝিয়ে দিয়েছেন, ওই সামান্য নিষেধাজ্ঞাও ভারত মানবে না, পরিবেশের স্বার্থে মানতে বলা হলেও মানবে না। দীপাবলির রাত গভীর হতেই ক্রমশ গভীর হয়েছে কান ফাটানো শব্দ, বারুদ পোড়া ধোঁয়ায় ক্রমশ ঘন হয়েছে বাতাস। আর দীপাবলির পরের সকালে দিল্লিকে ঘিরে জমে ওঠা ধোঁয়াশার আস্তরণ দেখে মনে হয়েছে, নতুন সকালটা আসতেই চাইছে না যেন। দৃশ্যপটটা যে ভীষণ ভাবে প্রতীকী, অনিচ্ছুক সকালটাই যে এখন ঘোর বাস্তব, অকালমৃত্যুর প্রতিবেদন প্রকাশ্যে আসতেই তা আরও স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে।
এই প্রচণ্ড দূষণের জন্য শুধু দীপাবলির বাজিই দায়ী, এমন কিন্তু নয়। আমাদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রাতেই দূষণের অনন্ত উপাদান। তার জেরেই এমন ভয়াবহ খাদের ধারে পৌঁছে গিয়েছি সবাই মিলে। এমনই এক প্রেক্ষাপটে দীপাবলি বড় প্রতীকী হয়ে ধরা দিল। আলোর উৎসবের নামে পরিবেশের উপর অসহনীয় অত্যাচার এক শ্রেণির। আলোর উৎসব যেন দুঃস্বপ্নে পরিণত তার জেরে। পরবর্তী সকালটাই যেন পা-ই রাখতে চাইছে না আর। পরবর্তী বছরগুলোতেও কি আলোর উৎসবে মাতার সুযোগ পাব আমরা? নাকি দুঃস্বপ্নের বাতাস ঘিরে ধরবে আমাদের ক্রমে ক্রমে? ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করতে হবে আমাদেরই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy