Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

আতঙ্কের দিন ভুলে মাধ্যমিকে সফল গাইঘাটার সেই ছাত্রী

দুঃস্বপ্নের সেই দিনগুলিতে বই ছিল তার প্রেরণা। বেঁচে থাকার হাতিয়ার। গণধর্ষণের শিকার হয়েও ছাত্রীটি ভেঙে পড়েনি। সমাজে মাথা উঁচু করে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর জন্য সে মাধ্যমিক পরীক্ষাকে প্রাথমিক লক্ষ্য হিসেবে বেছে নিয়েছিল। পারিবারিক আর্থিক অনটন বার বার তাকে বাধা দিয়েছে। তবু, সে পড়াশোনা চালিয়ে গিয়েছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
গাইঘাটা শেষ আপডেট: ২২ মে ২০১৫ ২১:১১
Share: Save:

দুঃস্বপ্নের সেই দিনগুলিতে বই ছিল তার প্রেরণা। বেঁচে থাকার হাতিয়ার। গণধর্ষণের শিকার হয়েও ছাত্রীটি ভেঙে পড়েনি। সমাজে মাথা উঁচু করে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর জন্য সে মাধ্যমিক পরীক্ষাকে প্রাথমিক লক্ষ্য হিসেবে বেছে নিয়েছিল। পারিবারিক আর্থিক অনটন বার বার তাকে বাধা দিয়েছে। তবু, সে পড়াশোনা চালিয়ে গিয়েছে।

বাবা পেশায় ভাগচাষী। দুই ছেলে মেয়ের লেখাপড়ার খরচ বহন করতে হিমসিম খেতে হয়েছে মেয়েটির বাবাকে। অভাবের জন্য গৃহশিক্ষককেও ছেড়ে দিতে হয়েছিল। তাতেও দমে যায়নি সে। অদম্য জেদ ও কঠোর পরিশ্রমে সে নিজেকে তৈরি করেছে। এ বার মাধ্যমিকে ২৩৬ নম্বর পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে ওই ছাত্রী। শুক্রবার মেয়েটি বলে, ‘‘জীবনে যতই ঘাত-প্রতিঘাত আসুক, লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়া উচিত। লেখাপড়াই মানুষকে নিজের লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়।’’

সে দিনটা ছিল ১০ জানুয়ারি, ২০১৪।

মেয়েটিকে ওই দিন সন্ধ্যায় বাবা ফোন করে বই কিনে দেওয়ার জন্য বাজারে ডাকেন। বাবার ফোন পেয়ে মেয়েটি ঠাকুরনগর বাজারে যায়। অভিযোগ, বই কিনে বাড়ি ফেরার পথে স্থানীয় দুই যুবক রাস্তায় তার মুখ চেপে ধরে তাকে মোটরবাইকে করে নির্জন জায়গায় নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে। সেখানে আগে থেকেই আরও এক যুবক হাজির ছিল। এর পর মেয়েটির নগ্ন ছবি মোবাইলে তোলা হয় এবং তা ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকিও দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। রাত ১১টা নাগাদ অভিযুক্তরাই মেয়েটিকে বাড়ির কাছে ফেলে রেখে যায়। পর দিন গাইঘাটা থানায় মেয়েটি অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিশ অভিযুক্ত তিন যুবককে গ্রেফতার করে। পরবর্তী সময়ে অবশ্য অভিযুক্ত সকলেই জামিন পেয়েছে। এখন বনগাঁ আদালতে মামলাটির শুনানি চলছে। মেয়েটি এ দিন বলে, ‘‘পরীক্ষার সাফল্য আমার লড়াই করার সাহস আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। দোষিদের সাজা না হওয়া পর্যন্ত আমি লড়াই চালিয়ে যাব।’’

ওই ঘটনার পর থেকেই কার্যত গৃহবন্দি হয়েই দিন কাটছে ছাত্রীটির। তার মা বাবা ও ভাইও বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে বের হন না। মামলা তুলে নেওয়ার জন্য চলছে নানা হুমকি। বাড়িতে ওই ঘটনার পর থেকেই রয়েছে সর্বক্ষণ পুলিশি পাহারা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE