আক্রমণের প্রস্তুতি কুর্দ যোদ্ধাদের। জালাওলা শহরের কাছে। ছবি: এএফপি।
ইসলামিক স্টেটের (আইএস) জঙ্গিদের হাত থেকে উত্তর ইরাকের আমেরলি শহরের বাসিন্দাদের রক্ষার জন্য আবেদন করল রাষ্ট্রপুঞ্জ। পাশাপাশি শনিবার বাগদাদে গোয়েন্দাদের সদর দফতরে আত্মঘাতী হামলায় আট জন প্রাণ হারিয়েছেন।
শনিবার ইরাকে রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিবের বিশেষ প্রতিনিধি নিকোলাই মলদেনোভ জানান, আমেরলি শহরকে আইএস জঙ্গিরা ঘিরে রেখেছে। এই শহরের বিদ্যুত্ ও জল সরবরাহ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছে। দ্রুত খাদ্য ফুরিয়ে আসছে। শহরটিতে প্রধানত তুর্কমেন শিয়ারা বাস করেন। আইএস জঙ্গিরা এঁদের বিধর্মী বলে মনে করে। মলদেনোভ জানিয়েছেন, বাসিন্দার নিজেরাই আইএস জঙ্গিদের প্রতিরোধ করছেন। কিন্তু ইরাক সরকারের সাহায্য ছাড়া তাঁদের পক্ষে বেশি দিন আইএস জঙ্গিদের ঠেকিয়ে রাখা সম্ভব হবে না। আইএস জঙ্গিদের হাতে শহরটির পতন হলে গণহত্যা ঘটতে পারে বলে রাষ্ট্রপুঞ্জের আশঙ্কা।
এই অবস্থায় অবিলম্বে বাসিন্দাদের সুরক্ষার ব্যবস্থা করার জন্য ইরাক সরকারের কাছে আবেদন করেছে রাষ্ট্রপুঞ্জ। প্রয়োজনে বাসিন্দাদের উদ্ধারের ব্যবস্থা করতেও অনুরোধ করা হয়েছে। ইরাকে শিয়াদের প্রধান ধর্মগুরু আলি আল-সিস্তানিও আমেরলিতে শিয়াদের অবস্থা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। আমেরলি-র বাসিন্দাদের সুরক্ষা ব্যবস্থা করার জন্য তিনিও আবদন করেছেন।
এ দিকে আইএস-কে বর্তমানে আমেরিকার সুরক্ষার পক্ষে সবচেয়ে বড় সমস্যা বলে মনে করছে মার্কিন প্রশাসন। মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিব চাক হেগেল জানান, সামরিক, আর্থিক ক্ষমতা এবং দক্ষতায় আপাতত আইএস-এর সমকক্ষ কোনও সংগঠন নেই। পূর্বের কোনও জঙ্গি সংগঠনের থেকে এরা অনেক বেশি ক্ষমতাশালী। ইরাকের বাইরেও সংগঠনটি আঘাত হানতে পারে বলে চাক হেগেলের আশঙ্কা।
আইএস-এর হয়ে পাশ্চাত্য থেকে অনেকে লড়াই করতে আসছেন। এদের নিয়ে পশ্চিমী বিশ্বের ভয় রয়েছে। সাংবাদিক জেমস ফোলির হত্যার পরে এই সংগঠনটির বিরুদ্ধে লড়াই আরও জোরদার হবে বলে জানিয়েছেন মার্কিন সেনার চিফ অফ স্টাফ জেনারেল মার্টিন ডেম্পসি। তবে তাঁর মতে, আইএস-কে দুর্বল করতে হলে এর মূল কেন্দ্র সিরিয়ায় আঘাত হানতে হবে। মার্কিন সরকার সে রকম কোনও পরিকল্পনা করছে কি না সে বিষয়ে জেনারেল ডেম্পসি অবশ্য স্পষ্ট করে কিছু জানাননি। তবে কুর্দ ও ইরাকি সেনাকে আইএস-এর বিরুদ্ধে অভিযান চালাতে আপাতত মার্কিন বায়ুসেনা সাহায্য করে যাবে বলে তিনি জানান। এর মধ্যে ইরাকে ৯০ বার হামলা চালানো হয়েছে বলে তিনি জানান।
এরই পাশাপাশি, জালাওলা শহরের দিকে এগিয়ে চলেছে ইরাকি ও কুর্দদের যৌথবাহিনী। মার্কিন বায়ুসেনা তাদের সাহায্য করছে। শুক্রবার মার্কিন বায়ুসেনার হামলায় তাদের ৫০ জন জঙ্গি প্রাণ হারিয়েছে বলে আইএস তাদের ট্যুইটার অ্যাকাউন্টে জানিয়েছে। এর প্রতিশোধ নেওয়া হবে বলে তারা হুমকিও দিয়েছে।
শনিবার বাগদাদে ইরাকি গোয়েন্দা দফতরে আত্মঘাতী হামলায় আট জনের প্রাণ গিয়েছে। বাকুবা থেকে ৫০ মাইল উত্তরে দিয়ালা প্রদেশের বানি ওয়েইস গ্রামে একটি মসজিদে শিয়া মিলিশিয়া প্রায় ৬০ জন সুন্নিকে হত্যা করেছে। এর জবাবেই গোয়েন্দা দফতরে হামলা হয় বলে অনেকে মনে করছেন। এর ফলে ইরাকে আবার সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ বাড়বে বলে আশঙ্কা। এর প্রতিবাদে এর মধ্যেই ইরাকি পার্লামেন্টের নির্বাচিত সুন্নি সদস্যরা নতুন সরকার গঠনের আলোচনা থেকে নিজেদের সরিয়ে নিয়েছেন। এই ঘটনায় জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি তুলেছেন তাঁরা। নতুন প্রধানমন্ত্রী হায়দার আল-আবদি-র পক্ষে নতুন সরকার গঠনের প্রক্রিয়া কঠিন হয়ে পড়ল বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy