স্টিভেন হত্যার এই ছবি প্রকাশ্যে এসেছে। ছবি: এপি।
কথা রাখল আইএস (ইসলামিক স্টেট) জঙ্গি সংগঠন। আমেরিকাকে কড়া বার্তা দিতে ফের সাংবাদিকের মুণ্ডচ্ছেদ করল তারা। জেমস ফোলির পর এ বার স্টিভেন সটলভ। মঙ্গলবার আইএস-এর জঙ্গিরা ২০১৩ সালে অপহৃত সাংবাদিক স্টিভেনের মুণ্ডচ্ছেদের ভিডিওটি পোস্ট করে। গত ১৯ অগস্ট একই কায়দায় এই জঙ্গি সংগঠন মার্কিন সাংবাদিক জেমস ফোলির মুণ্ডচ্ছেদের একটি ভিডিও পোস্ট করেছিল। সেই ভিডিওতে ওই জঙ্গি সংগঠনের পক্ষ থেকে হুমকি দেওয়া হয়, ফোলি হত্যার পরেও ইরাক ও সিরিয়ায় আইএস-এর উপর আমেরিকা আক্রমণ বন্ধ না করলে স্টিভেনেরও একই দশা হবে। সেই হুমকিকে বাস্তবায়িত করল জঙ্গিরা। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা স্টিভেন-এর হত্যার বিচারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘আমরা অনেক দূর যেতে পারি। সুবিচার হবেই।’’ পাশাপাশি স্টিভেনের মৃত্যুর পরেও ইরাক ও সিরিয়ায় মার্কিন অভিযান বন্ধ হবে না বলে তিনি জানান।
ফোলি হত্যার ভিডিওটির সঙ্গে এ বারের পোস্টের অনেক মিল রয়েছে। সেই একই মরুভূমি, একই ধরনের কমলা জোব্বা পরা আইএস-জঙ্গি, সামনে হাঁটু ভাঁজ করে ফোলির মতো একই ভঙ্গিমায় বসে স্টিভ। ভিডিও-র শুরুতে আমেরিকার ‘একগুঁয়ে’ আন্তর্জাতিক নীতির সমালোচনা করা হয়েছে। ইরাকের আমেরলি, মসুল, জুমার-এ বার বার মার্কিন হামলা চালানোই যে স্টিভেনের মৃত্যুর কারণ সে কথা ওই ভিডিও-বার্তায় জানানো হয়। পাশাপাশি, আমেরিকার সঙ্গে ‘শয়তানের অক্ষে’ যোগ দিতে বারণ করা হয় ব্রিটেনকে। কারণ, ব্রিটেনের নাগরিক ডেভিড হাইনেস তাদের কাছে বন্দি আছেন। এ ভাবে চললে ডেভিড-এরও একই দশা হতে পারে বলে ভিডিওতে হুমকি দিয়েছে ওই জঙ্গি সংগঠন।
সাংবাদিকদের মুখোমুখি ওবামা। ছবি: এএফপি।
স্টিভেনের বেঁচে থাকা যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার পরবর্তী সিদ্ধান্তের উপরে নির্ভরশীল, সে কথা আগের ভিডিওতে জানানো হয়েছিল। যদিও এর পরেও ইরাকে সীমিত বিমান হানায় রাশ টানেনি আমেরিকা। মার্কিন বিমান হানা এবং কুর্দ, ইরাকি সেনা ও শিয়া মিলিশিয়াদের ত্রিমুখী আক্রমণে ইরাকে একের পর এক জায়গা আইএস জঙ্গিদের হাতছাড়া হয়। মসুল বাঁধের পর দখল মুক্ত হয়েছে আমেরলি শহরও। এমনকী, সিরিয়ার উপরে বিমানে নজরদারি শুরু করে আমেরিকা। প্রধানত আইএস-এর শীর্ষ নেতাদের গতিবিধি জানতে এই নজরদারি বলে পেন্টাগন সূত্রে জানানো হয়। এর পরেই মার্কিন সাংবাদিক স্টিভেনের মুণ্ডচ্ছেদ করে আইএস প্রতিশোধ নেওয়ার চেষ্টা করে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।
‘আরব বসন্ত’-এর বিষয়ে আগ্রহী স্টিভেন বেশ কয়েক বছর ওই অঞ্চলে কাজ করছিলেন। লিবিয়ার বেনগাজিতে মার্কিন কনস্যুলেট-এ আক্রমণের পরে স্টিভেন সেখানে গিয়েছিলেন। ২০১২ সালের নভেম্বরে তিনি উত্তর সিরিয়ায় কাজ করতে যান। এখানে সক্রিয় অপহরণ চক্র সম্বন্ধে তিনি জানতেন। কোন প্রতিকূল পরিস্থিতিতে স্টিভেন সংবাদ সংগ্রহ করতেন, তার নমুনা পাওয়া যায় সহকর্মীদের উদ্দেশে লেখা তাঁরই এক ই-মেল বার্তায়। সেখানে তিনি লিখছেন, ‘‘এক সপ্তাহের উপরে আছি এখানে। অপহরণের ভয়ে কেউ ফ্রিল্যান্স সংবাদ সংগ্রহের কাজ করতে চাইছেন না। খুব খারাপ অবস্থা। কয়েক দিন ধরে যুদ্ধক্ষেত্রেই ট্যাঙ্কের ভিতর লুকিয়ে ঘুমোচ্ছি। তেষ্টা মেটাচ্ছি বৃষ্টির জলে।’’ সূত্রের খবর, গত বছরের অগস্টে তুরস্কের সীমানা পেরিয়ে স্টিভেন ফের উত্তর
স্টিভেন সটলভ
সিরিয়ায় ঢুকে পড়েন। সেখানে কোনও দুষ্কৃতীদল তাঁকে অপহরণ করে বলে স্টিভেনের পরিবারের ধারণা। পরে মোটা অর্থের বিনিময়ে তাঁকে আইএস জঙ্গিদের হাতে তুলে দেওয়া হয়। ফোলি হত্যার ভিডিও প্রাকশ্যে আসার পরে গত বুধবার স্টিভেনের মা শিরলেই এক ভিডিও-বার্তায় আইএস-এর স্বঘোষিত প্রধান আবু বকর আল-বাগদাদির কাছে তাঁর সন্তানের প্রাণভিক্ষা চেয়েছিলেন। এ দিন স্টিভেনের পরিবারের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, তাঁরা হত্যার ভিডিওটি সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। তাঁদের ধারণা ভিডিওটি সত্য।
স্টিভেনের হত্যার কারণ হিসেবে ওই ভিডিওতে কমলা জোব্বা পরা জঙ্গিটি জানিয়েছে, ‘‘তোমাদের ক্ষেপণাস্ত্র আমাদের জনগণকে যেমন ভাবে আঘাত করছে, তেমনিই আমাদের ছোরাও তোমাদের নাগরিকের গলা কাটছে।’’ পাশাপাশি ‘আ সেকেন্ড ম্যাসেজ টু আমেরিকা’ শীর্ষক ওই ভিডিও-য় আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে ওবামার ঔদ্ধত্যকেই স্টিভেনের হত্যার জন্য দায়ী করা হয়েছে। প্রাথমিক ভাবে বিশেষজ্ঞদের ধারণা, যে ব্যক্তি ফোলিকে হত্যা করেছিল, এ ভিডিও-য় সেই একই ব্যক্তি রয়েছে। মার্কিন স্বরাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র জেন পেস্কি বলেন, ‘‘ভিডিওটি সত্য হলে এই নৃসংশ হত্যাকাণ্ড আমাদের অসুস্থ করে তুলছে।’’ হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র জোস আর্নেস্ট জানান, মার্কিন আধিকারিকরা ভিডিওটির সত্যতা যাচাই করে দেখছেন। তিনি আরও বলেন, ‘‘তাঁর পরিবার ও সহকর্মীদের প্রতি আমাদের সহানুভূতি রয়েছে।’’ প্রেসিডেন্ট ওবামা জানিয়েছেন, আইএস নির্মূল করার জন্য অভিযান জারি থাকবে। এর জন্য একাধিক দেশের সঙ্গে মিলিত ভাবে অভিযান চালানো হবে। তবে এর জন্য দীর্ঘ সময় প্রয়োজন বলেও তিনি জানান। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন বলেন, ‘‘এটি সম্পূর্ণ ঘৃণ্য একটি কাজ।’’ ব্রিটিশ সরকার সূত্রে খবর, ডেভিড হাইনেস কে উদ্ধারের জন্য আগে চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু সেই অভিযান ব্যর্থ হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy