ওয়েবকুটা-র সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। নিজস্ব চিত্র।
রাজ্যে বিজেপি-র উত্থান রুখতে রুখতে কোনও দলই যে এখন তাঁর কাছে অচ্ছুৎ নয়, ইদানীং প্রায় নিয়ম করেই সে কথা বলছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এমনকী, সিপিএম-কেও যে এই ব্যাপারে ব্রাত্য করে রাখার পক্ষপাতী নন, তেমন ইঙ্গিতও দিয়েছেন তিনি।
শনিবার বাম-নেতৃত্বাধীন পশ্চিমবঙ্গ কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি (ওয়েবকুটা)-র রাজ্য সম্মেলনে কার্যত মুখ্যমন্ত্রীর ওই বার্তাই দিলেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। বললেন, “আমাদের পথ ও মত আলাদা হতে পারে। কিন্তু আমাদের লক্ষ্য একটাই, রাজ্য ও দেশে শিক্ষার সামগ্রিক উন্নয়ন। তাই শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে খোলা মনে আবেদন জানাতে এসেছি আসুন সবাই এক জোট হয়ে কাজ করি।” তৃণমূলের বর্ষীয়ান সাংসদ সৌগত রায় বলেন, “কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়নমন্ত্রী যে ভাবে বিশেষ কিছু হিন্দু সংগঠনের দ্বারা প্রভাবিত হচ্ছেন, দীর্ঘক্ষণ কাটাচ্ছেন জ্যোতিষীর সঙ্গে, তাতে ছাত্রছাত্রীদের কাছে ভুল বার্তা পৌঁছচ্ছে।
লড়াইটা যে বিজেপি-র সঙ্গে এবং সেই লড়াইতে বামপন্থী সংখ্যাধিক্যের শিক্ষক সংগঠন ওয়েবকুটাকে পাশে চান তাঁরা, তৃণমূলের মন্ত্রী ও সাংসদের কথায় তারই ইঙ্গিত বলে অনেকেই মনে করছেন। এ দিন সম্মেলনে হাজির ওয়েবকুটা-র অনেক সদস্যেরই মনে হয়েছে, শিক্ষামন্ত্রী এবং তৃণমূলের প্রবীণ সাংসদ মুখ্যমন্ত্রীর সেই বার্তাই তাঁদের কাছে পৌঁছে দিতে চেয়েছেন। সম্ভবত সেই কারণেই ওয়েবকুটা-র বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে সংগঠন ছেড়ে আসা শিক্ষক-নেত্রী কৃষ্ণকলি বসুও এ দিন অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন। ওয়েবকুটা-র নেতৃত্ব এখনও বামপন্থীদেরই হাতে। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সিপিএমের প্রাক্তন বিধায়ক শ্রুতিনাথ প্রহরাজ এবং সভাপতি সিপিআই অনুগামী শুভোদয় দাশগুপ্ত। ওয়েবকুটা ছেড়ে বেরিয়ে আসা কৃষ্ণকলিদেবী এখন শাসক দলের শিক্ষক সংগঠন ওয়েবকুপা-র সভানেত্রী।
নিজেদের বক্তৃতায় পার্থবাবু এবং সৌগতবাবু এ দিন শিক্ষক সংগঠন হিসাবে ওয়েবকুটা সম্পর্কে নানা প্রশংসা বাক্য শুনিয়েছেন। অন্য দিকে, শ্রুতিনাথবাবুও রাজ্য সরকারের সমালোচনায় চোখা চোখা বাক্যবাণ ব্যবহারের বদলে সৌহার্দ্যের কথা বলেছেন। যদিও শিক্ষকদের একাংশের বক্তব্য, নয়া বেতনক্রম কার্যকর হওয়ার পরে তাঁদের মোটা অঙ্কের বেতন বকেয়া রয়েছে। মিষ্টি কথায় সেটা আদায় করে নেওয়াই সংগঠনের নেতৃত্বের মূল উদ্দেশ্য ছিল। সংগঠনের সভাপতি অবশ্য বলেন, “আমাদের তেমন কোনও অভিসন্ধি নেই। আমরা চাই, শিক্ষক আন্দোলন চলুক একটিই ছাতার তলায়।” শ্রুতিনাথবাবুরও একই দাবি।
সম্মেলনের মঞ্চে লাগানো ব্যানারে সাবেক লালের বদলে এ বার যে নীল-সাদাই প্রধান, সেটাও এ দিন হাজির সদস্যদের অনেকের চোখ এড়িয়ে যায়নি। তাঁদের মতে, মনের কথা যা-ই হোক না কেন, সংগঠনও কার্যত সরকারকে বন্ধুত্বের বার্তাই দিতে চেয়েছে। পার্থবাবু, সৌগতবাবু ছাড়াও এ দিন মঞ্চে ছিলেন স্থানীয় বিধায়ক তথা রাজ্যের আইনমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy