বন্ধ খড়দহের ‘ন্যাশনাল জুট ম্যানুফাকচারার্স কর্পোরেশন’ (এনজেএমসি)।
সকালে কারখানার গেটে ঝোলানো হয়েছিল সাময়িক ভাবে সাসপেনশন অফ ওয়ার্কের নোটিস। শুরু হয় শ্রমিক বিক্ষোভ। সোমবার বেলার দিকে শাসকদল এবং প্রশাসনিক হস্তক্ষেপে ফের কারখানা খোলার আশ্বাস মেলে। ঘটনাস্থল খড়দহের ‘ন্যাশনাল জুট ম্যানুফাকচারার্স কর্পোরেশন’ (এনজেএমসি)। সরকারি আওতাধীন থাকার সময় থেকেই এই কারখানাটি খড়দহ জুটমিল নামেই পরিচিত। এ দিন সকালে কারখানা বন্ধের এই নোটিস দেখে ক্ষুব্ধ হন শ্রমিকেরা। কর্তৃপক্ষের এমন হঠাত্-সিদ্ধান্তে বিক্ষোভ শুরু হয় কারখানার সামনে। একটু বেলার দিকে সেই শ্রমিক অসন্তোষ গিয়ে পৌঁছয় বিটি রোডের উপর। রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন শ্রমিকেরা।
খড়দহের এই সরকারি চটকলটি দীর্ঘ দিন ধরে বন্ধ ছিল। প্রায় আট বছর পরে বছরখানেক আগে এক বেসরকারি ঠিকাদারকে এই কারখানার দায়িত্ব দেওয়া হয়। তার পর কারখানা খোলে। শ্রমিকেরা জানিয়েছেন, প্রতি দিন প্রায় ১৮ টন পণ্য উত্পাদন হত এই কারখানায়। কিন্তু হঠাত্ কেন চটকলটি বন্ধ করে দেওয়া হল, সে ব্যাপারে তাঁদের কোনও ধারণা নেই বলে শ্রমিকেরা জানিয়েছেন। গত এক বছর ধরে যে ঠিকাদার এই চটকলটি চালাচ্ছিলেন, সেই বাসু মল্লিক এ দিন সকাল থেকে ফোন ধরেননি বলে অভিযোগ। এ দিন সকালে কারখানার সামনে শ্রমিক বিক্ষোভে অংশ নেন প্রদেশ কংগ্রেসের সম্পাদক সম্রাট তপাদার। তিনি বলেন, “খোদ শিল্পমন্ত্রীর বিধানসভা এলাকায় শিল্প বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। আর উনি সিঙ্গাপুর যাচ্ছেন নতুন শিল্প আনতে!”
কী হয়েছিল এ দিন?
সকালে কাজ করতে এসে কারখানার গেটে ঝোলানো নোটিস দেখে প্রথমে বিশ্বাসই করতে পারছিলেন না শ্রমিকেরা। সাময়িক ভাবে কারখানা বন্ধের এই নোটিস পুজোর মুখে স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলিয়ে প্রায় এক হাজার শ্রমিককে কর্মহীন করে দেয়। প্রাথমিক ধাক্কা কাটিয়ে, শ্রমিকেরা দলমত নির্বিশেষে কারখানার গেটের সামনে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। সিটু, এআইটিইউসি, এআইটিটিইউসি সব সংগঠনের শ্রমিকেরাই সেই বিক্ষোভে অংশ নেন। কর্মী অসন্তোষ ঠেকাতে মাঠে নামেন শাসকদলের শ্রমিক সংগঠনের নেতারা। টিটাগড় পুরসভার চেয়ারম্যান তথা এআইটিটিইইসি-র ওই কারখানার নেতা প্রশান্ত চৌধুরী ঘটনাস্থলে পৌঁছে শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলেন। কিন্তু তাঁর কথায় আমল দেননি কর্মীরা। এর পরে শ্রমিক অসন্তোষ উঠে আসে বিটি রোডে।
বিটি রোড অবরোধ শ্রমিকদের।
বিটি রোডে টাটা গেটের সামনে সকাল প্রায় সাতটা থেকে অবরোধ শুরু হয়। পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝে সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ এলাকায় বিশাল পুলিশ বাহিনীর পাশাপাশি মোতায়েন করা হয় র্যাফ। কাঁদানে গ্যাস নিয়ে হাজির হয় কমব্যাট ফোর্সও। ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের ডিসি ট্র্যাফিক দেবাশিস বেজ নিজে ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন। ক্ষুব্ধ শ্রমিকদের বোঝাতে হিমশিম খেতে হয় পুলিশকর্তাদের।
এর পরেই মোড় নেয় ঘটনা।
অবরোধ শুরু হওয়ার ঘণ্টাখানেক পরে মিল-ঠিকাদার বাসু মল্লিকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন আইটিটিইউসি-র নেতা প্রশান্ত চৌধুরী। পুলিশ এবং শ্রমিকদের সামনেই কথোপকথন শুরু হয় মোবাইলের স্পিকার চালু করে। সেখানে ওই ঠিকাদার জানিয়েছেন, তিন-চার দিনের মধ্যেই কারখানা খোলার সব রকম চেষ্টা করা হবে। এর পরেই উঠে যায় অবরোধ। প্রশান্তবাবু বলেন, “উত্পাদন ঠিক থাকা সত্ত্বেও কেন কারখানা বন্ধ করে দিলেন ওই ঠিকাদার, সে বিষয়ে খবর নেওয়া হবে।” অন্য দিকে, পুলিশের তরফে ব্যারাকপুরের মহকুমাশাসক পূর্ণেন্দু মাজিকে ঘটনার কথা জানানো হয়। এর পরেই প্রশাসনিক ভাবে জুট কমিশনার সুব্রত গুপ্তের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। চটকল কর্মীদের সঙ্গে কথা বলতে মঙ্গলবার এনজেএমসি-তে সুব্রতবাবু আসবেন বলে প্রশাসনিক সূত্রে খবর।
সরকারি আওয়াধীন চটকল বন্ধ হওয়ার ঘটনা এ রাজ্যে নতুন নয়। কেন্দ্রীয় সরকারের সংস্থা এনএমজিসি-র আওতাধীন টেনিসন জুটমিলও সম্প্রতি বন্ধ হয়ে গিয়েছে। দ্বিতীয় ইউপিএ সরকারের আমলে তিন বছরের জন্য এক ঠিকাদারকে লিজে দেওয়া হয় ওই চটকল। কিন্তু মেয়াদ ফুরিয়ে যাওয়ায় নতুন করে ওই ঠিকাদার আর লিজ পুনর্নবিকরণ করেননি। অন্য কোনও ঠিকাদারও এগিয়ে না আসায় বন্ধ হয়ে যায় টেনিসন। একই ভাবে বন্ধ রয়েছে আলেকজান্ডার জুটমিলও। তবে খড়দহ জুটমিলের ক্ষেত্রে লিজের মেয়াদ এখনও এক বছরও পেরোয়নি। তার মধ্যেই এমন ঘটনায় হতবাক সকলেই। এর আগে রবিবার শ্রমিকদের কর্মবিরতিতে কাজ বন্ধ হয়ে যায় কাঁকিনাড়ার নফরচাঁদ জুটমিলে। গত সপ্তাহেই বন্ধ হয়ে গিয়েছিল হাওড়ার ডেল্টা জুটমিল। পুজোর আগে একের পর এক চটকল বন্ধ হওয়া শ্রমিকদের কাছে এক অশনিসঙ্কেত।
ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy