Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

ঝাড়খণ্ডে সরকার গড়ার পথে, উপত্যকায় সব পথ খোলা বিজেপি-র

বুথফেরত সমীক্ষার সঙ্গেই প্রায় মিলে গেল চূড়ান্ত ফল। মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত জম্মু-কাশ্মীর এবং ঝাড়খণ্ডে ভোটগণনার চিত্র অন্তত সে কথাই বলছে। সর্বশেষ যা চিত্র, তাতে ঝাড়খণ্ডে সরকার গঠনের পথে বিজেপি। এ দিন সন্ধ্যায় পদত্যাগ করে বিদায়ী মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন দাবি করলেন, “রাজ্যে সাহসের সঙ্গে লড়েছে দল, ফলও যথেষ্ট ভাল হয়েছে। জনগণের রায় মাথা পেতে নিচ্ছি।” জম্মু-কাশ্মীরে ম্যাজিক সংখ্যা কোনও দলই একক ভাবে ছুঁতে পারেনি। সে ক্ষেত্রে কোন দল কী ভাবে সেখানে সরকার গঠন করবে তা নিয়ে জোর জল্পনা শুরু হয়েছে।

নির্বাচনী ফল ঘোষণার পর রাঁচির হারমুতে বিজেপির কর্মী-সমর্থকরা। ছবি: পিটিআই।

নির্বাচনী ফল ঘোষণার পর রাঁচির হারমুতে বিজেপির কর্মী-সমর্থকরা। ছবি: পিটিআই।

সংবাদ সংস্থা
শেষ আপডেট: ২৩ ডিসেম্বর ২০১৪ ২২:০০
Share: Save:

বুথফেরত সমীক্ষার সঙ্গেই প্রায় মিলে গেল চূড়ান্ত ফল। মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত জম্মু-কাশ্মীর এবং ঝাড়খণ্ডে ভোটগণনার চিত্র অন্তত সে কথাই বলছে। সর্বশেষ যা চিত্র, তাতে ঝাড়খণ্ডে সরকার গঠনের পথে বিজেপি। এ দিন সন্ধ্যায় পদত্যাগ করে বিদায়ী মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন দাবি করলেন, “রাজ্যে সাহসের সঙ্গে লড়েছে দল, ফলও যথেষ্ট ভাল হয়েছে। জনগণের রায় মাথা পেতে নিচ্ছি।” জম্মু-কাশ্মীরে ম্যাজিক সংখ্যা কোনও দলই একক ভাবে ছুঁতে পারেনি। সে ক্ষেত্রে কোন দল কী ভাবে সেখানে সরকার গঠন করবে তা নিয়ে জোর জল্পনা শুরু হয়েছে।

সবচেয়ে বেশি আসন পাওয়া পিডিপি যদিও জম্মু-কাশ্মীরে সরকার গঠনে বিজেপি-র হাত ধরার একটা বার্তা দিয়েছে। কিন্তু, এ দিন বিকেলে দিল্লিতে দলীয় সদর দফতরে সাংবাদিক বৈঠকে বিজেপি-র সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ জানিয়ে দিয়েছেন, জম্মু-কাশ্মীরে সরকার গঠনে সব রকম সম্ভাবনার পথ খোলা রয়েছে। কিন্তু সেই সম্ভাবনাগুলি ঠিক কী তা নিয়ে প্রকাশ্যে কিছু বলেননি তিনি।

গত ২০ ডিসেম্বর দুই রাজ্যে শেষ দফার ভোটগ্রহণ শেষে বিভিন্ন সংস্থা তাদের বুথফেরত সমীক্ষায় জানিয়েছিল, জম্মু-কাশ্মীরে গরিষ্ঠতা না পেলেও পিডিপি বৃহত্তম দল হিসেবে উঠে আসবে। তারা ৩০-এর উপরে আসন পাবে বলে সমীক্ষায় জানানো হয়। সে ক্ষেত্রে দ্বিতীয় বৃহত্তম দল হবে বিজেপি। ২৭-২৮টি আসন পেতে পারে তারা। যা পরিস্থিতি, তাতে ফল সে দিকেই মোড় নিয়েছে। কেননা, নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, পিডিপি ২৮টি আসনে এবং বিজেপি ২৫টি আসনে জয়ী হয়েছে। পাশাপাশি, কংগ্রেস ১২টি এবং ন্যাশনাল কনফারেন্স ১৫টি আসনে জয়ী হয়েছে। উল্লেখযোগ্য ভাবে সোনাওয়ার-এ ন্যাশনাল কনফারেন্স নেতা তথা রাজ্যের বিদায়ী মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা প্রায় ৪৭০০ ভোটে হেরে গিয়েছেন। সে ক্ষেত্রে ভূস্বর্গে সরকার গড়বে কারা, তা নিয়েও শুরু হয়েছে জল্পনা। পিডিপি-র তরফে বিজেপি-র হাত ধরার একটা ইঙ্গিত দেওয়া হয়। কিন্তু অমিত শাহ সে বিষয়ে কিছুই স্পষ্ট করেননি। রাষ্ট্রপতি শাসনের প্রসঙ্গ উড়িয়ে দিয়ে এ দিন তিনি বলেন, “কাশ্মীরে গণতান্ত্রিক এবং জনপ্রিয় সরকারই গঠিত হবে।” তাঁর কথায়, “আমরা ওই রাজ্যে খুবই ভাল ফল করেছি। সরকার গঠনের সমস্ত পথ খোলা রয়েছে।”

পাশাপাশি, ঝাড়খণ্ডের বুথফেরত সমীক্ষায় জানানো হয়েছিল, বিজেপি এখানে একক ভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে পারে। এ দিন রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত ভোটগণনার চিত্রও সে সমীক্ষাকেই সত্যি করেছে। নির্বাচন কমিশনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী বিজেপি এই রাজ্যে ৩৭টি আসনে জয়ী হয়েছে। তাদের পরেই ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চার স্থান। ১৯টি আসনে জয়ী হয়েছে তারা। অন্য রাজনৈতিক দলগুলি দুই অঙ্কের সংখ্যায় উত্তীর্ণ হতে পারেনি। ঝাড়খণ্ড বিকাশ মোর্চা জয়ী হয়েছে ৮টি আসনে। শেষ দফার নির্বাচন শেষে বুথফেরত সমীক্ষা জানিয়েছিল, আজসু-র সঙ্গে জোট বেঁধে রাজ্যে ৪৫-৫০টি আসন পেতে পারে বিজেপি। পরিস্থিতি সে দিকেই এগোচ্ছে বলে বিজেপি আশাপ্রকাশ করেছে। অমিত শাহ বলেন, “আগামী কাল সংসদীয় দলের বৈঠক। সেখানেই পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা হবে।”

গত ২৫ নভেম্বর জম্মু-কাশ্মীর এবং ঝাড়খণ্ডে শুরু হয় পাঁচ দফার ভোটগ্রহণ। ২০ ডিসেম্বর পঞ্চম দফা শেষে দেখা যায়, দুই রাজ্যেই ভোট পড়ার হার গত নির্বাচনের থেকে বেশ কয়েক শতাংশ বেড়েছে। ভোটের আগে থেকেই জম্মু-কাশ্মীরে বিভিন্ন বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন নির্বাচন বয়কটের ডাক দেয়। শুধু তাই নয়, ভোট চলাকালীন রাজ্যের কয়েকটি জায়গায় জঙ্গি হামলাও চালানো হয়। তাতে নিহত হন নিরাপত্তা বাহিনীর কর্মীরা ছাড়াও বেশ কয়েক জন সাধারণ মানুষ। পাল্টা আক্রমণে কয়েক জন জঙ্গিও মারা যায়। এমন পরিস্থিতিতেও রাজ্যে রেকর্ড সংখ্যক ভোট পড়ে। উপত্যকার পাশাপাশি ঝাড়খণ্ডেও মানুষ স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে ভোট দেয়। নির্বাচন কমিশনের হিসেব অনুযায়ী, দুই রাজ্যে প্রায় ৬৫ শতাংশের উপরে ভোট পড়ে।

কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসার পর বিভিন্ন রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনকে পাখির চোখ করে বিজেপি। শুরুতেই কয়েকটি রাজ্যে উপনির্বাচনে লড়ে বিশেষ সুবিধা করতে পারেনি তারা। এর পরেই হরিয়ানা এবং মহারাষ্ট্রে বিধানসভা নির্বাচনে সর্বশক্তি দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে মোদী-অমিত জুড়ি। ফলও মেলে হাতে হাতে। দুই রাজ্যেই সরকার গঠন করে বিজেপি। এরই মধ্যে উপত্যকা এবং ঝাড়খণ্ডে নির্বাচন চলে আসে। এখানেও মাঠে নামেন স্বয়ং মোদী। শ্রীনগরে বিজেপি-র প্রথম জনসভা করার পাশাপাশি নরেন্দ্র মোদী উপত্যকায় মোট আটটি নির্বাচনী সভা করেন। রাজ্যে উন্নয়নের বন্যা বইয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দেন তিনি। এর বেশ কিছু দিন আগে বন্যায় ভেসে যায় উপত্যকার জনজীবন। সে সময়ে দুর্গতদের পাশে দাঁড়ায় কেন্দ্রীয় সরকার। তবে রাজ্যে সরকার গড়লে কে সেই সরকারের প্রধান হবেন সে বিষয়ে নীরব ছিলেন মোদী। কার্যত নির্বাচনে বিজেপি-র মুখ ছিলেন তিনিই।

ঠিক একই নীতি বিজেপি নেয় ঝাড়খণ্ডের ক্ষেত্রেও। সেখানেও মোদী বেশ কয়েকটি নির্বাচনী সভা করেন। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থীর নাম কোনও ভাবেই মুখে আনেননি তিনি। বরং উন্নয়ন তত্ত্বকেই সামনে এনেছেন বার বার। রাজ্যকে দেশের মধ্যে এক নম্বরে নিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতিও দেন তিনি। তবে শর্ত ছিল। মোদী রাজ্যবাসীকে অনুরোধ করেছিলেন, স্থায়ী সরকার গড়ে তুলুন। তবেই তাঁর পক্ষে প্রতিশ্রুতি রাখা সম্ভব হবে। মোদী এ কথা বলেছিলেন কারণ, ২০০০-এ নতুন রাজ্য হিসেবে আত্মপ্রকাশ করার পর গত ১৪ বছরে ঝাড়খণ্ড নয় বার নতুন সরকার এবং তিন বার রাষ্ট্রপতি শাসনের মুখ দেখেছে। রাজনৈতিক পালাবদলের অস্থিরতা নিয়ে কোনও সরকারই যে কাজ করতে পারে না মোদী সেই বার্তাই দিতে চেয়েছিলেন। বুথফেরত সমীক্ষার পর দেখা যায়, রাজ্যের মানুষ মোদীর কথায় সায় দিয়েছে। ভোটগণনার অভিমুখও সেই দিকেই যাচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

vote
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE