Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

দলে বিবর্ণ, দোলে তবু রঙিন মুকুল

কে বলবে তৃণমূলে তাঁর ইনিংস এখন বেরঙিন! দোলের সকালে লাল-সবুজ-হলুদ-গোলাপি আবিরে রাঙানো তাঁকে দেখে কে বলবে, তৃণমূলে তাঁর ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত! নিজের বিধায়ক-পুত্র, পুত্রবধূ, নাতনিকে নিয়ে চুটিয়ে দোল খেললেন। তার পরে পরিবার-পরিজন, ঘনিষ্ঠদের বৃত্ত ছাড়িয়ে কাঁচরাপাড়ায় পাড়া-প্রতিবেশী, অনুগামীদের ভিড়ে রঙে রঙে নিজেকে রাঙিয়ে তুললেন তৃণমূলের প্রাক্তন সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়।

রঙের খেলায় পিতা-পুত্র। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়।

রঙের খেলায় পিতা-পুত্র। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়।

সঞ্জয় সিংহ
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ মার্চ ২০১৫ ২২:১৯
Share: Save:

কে বলবে তৃণমূলে তাঁর ইনিংস এখন বেরঙিন!

দোলের সকালে লাল-সবুজ-হলুদ-গোলাপি আবিরে রাঙানো তাঁকে দেখে কে বলবে, তৃণমূলে তাঁর ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত! নিজের বিধায়ক-পুত্র, পুত্রবধূ, নাতনিকে নিয়ে চুটিয়ে দোল খেললেন। তার পরে পরিবার-পরিজন, ঘনিষ্ঠদের বৃত্ত ছাড়িয়ে কাঁচরাপাড়ায় পাড়া-প্রতিবেশী, অনুগামীদের ভিড়ে রঙে রঙে নিজেকে রাঙিয়ে তুললেন তৃণমূলের প্রাক্তন সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়।

দিল্লি থেকে বুধবারই কাঁচরাপাড়ার বাড়িতে ফিরতে হয়েছিল নাতনি শরণ্যার ‘নির্দেশে’। হাসতে হাসতে মুকুল বলেছিলেন, ‘‘শরণ্যার অর্ডার ছিল, ওর সঙ্গে দোল খেলতে হবে!” তার পরে কি বাড়িতেই থাকবেন? দিল্লি যাওয়ার আগে নিজাম প্যালেসেই জানিয়েছিলেন, দোলের দিন সকালে পাড়ায় বেরোবেন। তার পরে বলেছিলেন, “দোলের দিন পাড়ায় বেরিয়ে রং মাখব না, তার চেয়ে সাংঘাতিক আর কিছুই হতে পারে না!” দোলের সকাল থেকে তাই মুকুল মাতলেন রং খেলায়। নাতনি, পুত্রবধূরা তাঁকে আবির মাখালেন। ছেলে, বীজপুরের বিধায়ক শুভ্রাংশুর গালে মুকুল লাগিয়ে দিলেন আবির।

এর পর ছেলেকে সঙ্গী করে বেরিয়ে পড়লেন পাড়ায়। ভিড় ক্রমশ বাড়ল। কিন্তু ভিড়ে বিরক্ত নন মুকুল। হাসিমুখেই রং মাখছেন। রং মাখার আনন্দ উপভোগ করতে করতে বললেন, “এটা রঙের উৎসব। এখানে কেউ আমার বন্ধু, সহকর্মী, কেউ ভাইয়ের মতো, ছেলের মতো। সবার সঙ্গে আনন্দ ভাগ করে নিতে চাই। আমি চাই, আগামী দিনটা সবাইকে সঙ্গে নিয়ে এমন রঙিন হয়ে উঠুক।”

মুকুল দোলে মাতলেও তৃণমূলের ‘যুবরাজ’ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য রং খেলা থেকে তাঁর পিসি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর মতোই দূরে থেকেছেন। আগেই জানিয়েছিলেন, তিনি রং খেলবেন না। তাঁর রং না খেলার মধ্যেও তৃণমূলের কেউ কেউ অন্য ইঙ্গিত পেয়েছেন। ক’দিন আগেই দিল্লি-যাত্রার বিমানে মুকুলের আসনের পাশেই তাঁর আসন পড়েছে জানতে পেরে অভিষেক সেই উড়ান বাতিল করেছিলেন। দলের এক নেতার সরস মন্তব্য, “আমাদের উদীয়মান তারকা যে ঝরে যাওয়া মুকুল নন, তা দোল না খেলেও বুঝিয়ে দিয়েছেন!” অভিষেক অবশ্য স্পষ্ট বলেছেন, “আমি দোল খেলি না। তাই এ বারও দোল খেলার প্রশ্ন নেই।”

দোলের দিন নাকতলায় বাড়িতেই দলের কাজে ব্যস্ত ছিলেন তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়। রং কেন খেলেননি জানাতে গিয়ে পার্থবাবু বলেন, “দলের অনেক কাজ ছিল। আজ সরকারি সব দফতর বন্ধ। তাই দলের কাজগুলো সেরে ফেললাম।” তবে তাঁর সহকর্মী ফিরহাদ হাকিম প্রতি বারের মতো এ বারও চেতলায় তাঁর এলাকায় দোলের সকাল থেকে দুপুর সাংস্কৃতিক উৎসবে ব্যস্ত ছিলেন। বিধানসভার মুখ্য সরকারি সচেতক শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়ও তাঁর নির্বাচন কেন্দ্র রাসবিহারীর বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে যেমন দোলের আবিরে নিজেকে এবং পরিচিত জনকে রাঙিয়েছেন, তেমনই এক দল বাউলের সঙ্গে রাধা-কৃষ্ণের হোলি খেলা নিয়ে গানও গেয়েছেন। উৎসবে মেতে শোভনদেব বলেছেন, “দোলের দিনে বাইরে রঙের সঙ্গে মনের রংটা মেলানোর চেষ্টা করি।” তাঁর মতোই নিজের এলাকায় দোলের উৎসবে মেতেছেন কলকাতা পুরসভার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়। তিনি এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করে বলেন, “দোল সকলের ভাল কাটুক।” সামনেই পুরভোট। তাই পুরসভার বর্তমান কাউন্সিলরদের অনেকেই জনসংযোগটা নতুন করে এ দিন ঝালিয়ে নিয়েছেন। রঙের উৎসবে মেয়র পারিষদ দেবাশিস কুমারও তাঁর ওয়ার্ড এবং এলাকায় সকালটা কাটিয়েছেন আবিরে রাঙিয়ে, সাংস্কৃতিক উৎসব করে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

mukul rong
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE