Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

প্রতীক্ষার অবসান, ময়দানে মদন-ধর্নার ইতি টানা হল

সাত দিনে ত্রাহি রব উঠেছিল! আট দিনে অব্যহতি মিলল! ময়দানে গোষ্ট পালের মূর্তির পাদদেশে যাঁরা ক্রীড়মন্ত্রী মদন মিত্রের গ্রেফতারের প্রতিবাদে ধর্না মঞ্চের আয়োজন করেছিলেন, সেই উদ্যোক্তাদের অনেকেই হাফ ছেড়ে বাঁচলেন শনিবারের বার বেলায়। যিনি এই ধর্নায় বসার নির্দেশ দিয়েছিলেন, সেই দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আলোচনা করেই ময়দানে ধর্নার ইতি টানলেন উদ্যোক্তরা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২০ ডিসেম্বর ২০১৪ ২১:৪৩
Share: Save:

সাত দিনে ত্রাহি রব উঠেছিল! আট দিনে অব্যহতি মিলল!

ময়দানে গোষ্ট পালের মূর্তির পাদদেশে যাঁরা ক্রীড়মন্ত্রী মদন মিত্রের গ্রেফতারের প্রতিবাদে ধর্না মঞ্চের আয়োজন করেছিলেন, সেই উদ্যোক্তাদের অনেকেই হাফ ছেড়ে বাঁচলেন শনিবারের বার বেলায়। যিনি এই ধর্নায় বসার নির্দেশ দিয়েছিলেন, সেই দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আলোচনা করেই ময়দানে ধর্নার ইতি টানলেন উদ্যোক্তরা। এ দিন ময়দানে ধর্নার সমাপ্তি আনুষ্ঠানিক ভাবে ঘোষণা করলেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। মঞ্চের অদূরে চেয়ারে বসে থাকা এক তৃণমূল নেতা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বলে উঠলেন, “ওঃ, বড়দিনের ছুটি তাহলে মিলল!”

আটদিন ব্যাপী এই ধর্না কর্মসূচির দ্বিতীয় দিন থেকেই উসখুস শুরু হয়েছিল তৃণমূল অন্দরে। কথা ছিল, যতদিন না ক্রীড়ামন্ত্রীকে মুক্তি দেওয়া হচ্ছে ততদিন ধর্না চলবে। ধর্না কর্মসূচির আয়োজক ছিলেন তৃণমূল-ঘনিষ্ঠ ক্রীড়াবিদরা। কিন্তু গত শনিবার ধর্নার শুরুতেই দলনেত্রী থেকে শুরু করে শীর্ষ নেতারা বুঝে যান, কর্মসূচি চালাতে গেলে তৃণমূল ও দলের শাখা সংগঠনকেই দায়িত্ব নিতে হবে। এই দায়িত্ব নিতে এগিয়ে আসতে হয়েছে দলের ছাত্র, যুব, মহিলা তো বটেই, দলের আইনজীবীদেরও। কিন্তু সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত মঞ্চ আগলে সভা করার বক্তা মিললেও, শ্রোতার আকাল চলছিল। বাস, ম্যাটাডোর করে কলকাতা ও আশপাশ থেকে লোক এনেও, ধর্নার আসর জমানো যাচ্ছিল না।

নেতারা বিষয়টি নিয়ে দলের অভ্যন্তরে আলাপ আলোচনা চালাচ্ছিলেন। কিন্তু শুক্রবার আদালতে জামিন পাননি মদন। তাঁকে জেলে পাঠানোর নির্দেশ দেয় আদালত। প্রমাদ গোনেন তাঁর দলের নেতারা। অনেক নেতাই দুশ্চিন্তায় পড়েন। তাঁদের অনেকেই বলেন, “আর কতদিন ধর্নার বোঝা টানতে হবে?” দলের ছাত্র ও যুব নেতাদের কেউ কেউ জানান, সামনে বড়দিন। নিউ ইয়ার। মানুষ উৎসবের মেজাজে। এই অবস্থায় ধর্নার রাশ টেনে রাখাই সমস্যা হলে তাঁরা দলের শীর্ষ নেতাদের কাছে বলতে শুরু করেছিলেন।

এই পরিস্থিতিতেই এ দিন বিকেলে ময়দানে ধর্নার সমাপ্তির কথা ঘোষণা করেন পার্থবাবু। তার আগে ধর্না মঞ্চ থেকে ফুটবলার গৌতম সরকার বলেন, “আজই ধর্নার শেষ দিন। এরপর ক্রীড়ামন্ত্রীর গ্রেফতারের প্রতিবাদ ছড়িয়ে পড়বে জেলায় জেলায়।” ধর্না ওঠার ইঙ্গিত মিলতেই, মঞ্চের নীচে বসা তৃণমূলের বিভিন্ন শাখা সংগঠনের নেতা-কর্মীদের কেউ কেউ বলে ফেললেন, “বাঁচা গেল!” আর এই ঘোষণার মিনিট দশেকের মধ্যেই ধর্না মঞ্চ জনশূন্য হয়েও গেল!

পার্থবাবু অবশ্য বলেছেন, “গোষ্ঠ পালের মূর্তির পাদদেশে ধর্না হবে না। তার মানে এই নয় যে আমরা আর প্রতিবাদ করছি না। উপরন্তু এখন ক্রীড়াবিদদের মধ্যে দিয়ে এই প্রতিবাদ ছড়িয়ে পড়বে জেলায় জেলায়।” পার্থবাবু জানান, প্রতিটি জেলা থেকে ক্রীড়াবিদেরা এই ঘটনার প্রতিবাদ জানানোর জন্য অনুমোদন চেয়েছিলেন। তাই এই পদক্ষেপ। তবে মদনকে অন্যায় ভাবে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে প্রতিবাদ জানাতে ময়দানে যেমন ধর্নার কর্মসূচি তাঁরা নিয়েছিলেন, তেমনই এই বিষয়ে কথা বলতে ২৪ ঘণ্টা আগে পার্থবাবু, সুব্রত মুখোপাধ্যায়-সহ পাঁচ মন্ত্রী রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠীর কাছে দরবারও করেছেন। তবে মদন সহজে যে মুক্তি পাবেন না এটা বুঝে গিয়েই এ দিনই ময়দানে ধর্নায় যবনিকা টানার সিদ্ধান্ত নেন তৃণমূল নেতৃত্ব।

তবে শাসক দলের ছত্রছায়ায় কার্যত ‘ফ্লপ’ হওয়া আটদিনের ধর্না নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়েননি সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য মহম্মদ সেলিম। তাঁর কথায়, “গোষ্ঠ পাল এ বার সসম্মানে থাকতে পারবেন! এই রকম একটা ধর্নায় ক্রীড়াজগতের অসম্মান হচ্ছিল।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

moidan dharna
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE