Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

মাখড়ায় স্বাভাবিক অবস্থা ফেরাতে প্রশাসনকে সাত দিন সময় দিলেন অধীর

সাত দিনের মধ্যে এলাকায় স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরে না এলে মাখড়ায় গণ প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে বলে চৌমণ্ডলপুরে দাঁড়িয়ে প্রশাসনকে হুমকি দিলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। শনিবার দুপুরে অধীরবাবুর নেতৃত্বাধীন কংগ্রেসের এক প্রতিনিধি দলকে পুলিশ মাখড়া যাওয়ার পথে চৌমণ্ডলপুরে আটকে দেয়।

চৌমণ্ডলপুরে পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তিতে কংগ্রেস কর্মীরা। ছবি: বিশ্বজিত্ রায়চৌধুরী।

চৌমণ্ডলপুরে পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তিতে কংগ্রেস কর্মীরা। ছবি: বিশ্বজিত্ রায়চৌধুরী।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০১ নভেম্বর ২০১৪ ১৫:০৬
Share: Save:

সাত দিনের মধ্যে এলাকায় স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরে না এলে মাখড়ায় গণ প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে বলে চৌমণ্ডলপুরে দাঁড়িয়ে প্রশাসনকে হুমকি দিলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। শনিবার দুপুরে অধীরবাবুর নেতৃত্বাধীন কংগ্রেসের এক প্রতিনিধি দলকে পুলিশ মাখড়া যাওয়ার পথে চৌমণ্ডলপুরে আটকে দেয়। এর পর পুলিশি ব্যারিকেড ভাঙা, পুলিশ কর্মীদের সঙ্গে ধস্তাধস্তি এবং অবস্থান বিক্ষোভে সামিল হন ওই প্রতিনিধি দলের সদস্যেরা। ঘণ্টা দেড়েকের এই আন্দোলন শেষে চৌমণ্ডলপুর ছাড়েন তাঁরা। ফিরে যাওয়ার আগে অধীরবাবু বলেন, “সাত দিনের মধ্যে মাখড়া এলাকা থেকে ১৪৪ ধারা না তুললে প্রশাসনের বিরুদ্ধে গণ প্রতিরোধ করা হবে।”

মাখড়ার এ দিনের ঘটনা প্রসঙ্গে তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনবেন আর বিরোধীরা বিশৃঙ্খলা তৈরি করবে এটা রাজ্যের মানুষ মেনে নেবে না।” পাশাপাশি তাঁর মন্তব্য, “অধীরবাবুর কথা বাংলার মানুষ যত কম শুনবেন ততই ভাল।”

এ দিন দুপুর সওয়া ২টো নাগাদ অধীর চৌধুরীর নেতৃত্বে কংগ্রেসের এক প্রতিনিধি দল মাখড়ায় যান। কিন্তু গ্রামে ঢোকার বেশ কিছুটা আগেই চৌমণ্ডলপুরে পুলিশ তাঁদের আটকে দেয়। গ্রামে ১৪৪ ধারা জারি আছে, সেই যুক্তি দেখিয়ে পুলিশ আগের মতোই মাখড়ায় রাজনৈতিক দলের প্রবেশ রুখে দেয়। গত বুধবার রাজ্যের তিন বিরোধী রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি দলকেই ১৪৪ ধারার কারণ দেখিয়ে গ্রামে ঢুকতে দেয়নি পুলিশ। গ্রেফতার করা হয় বাম প্রতিনিধি দলের সদস্যদের। তার ঠিক পরের দিন ফের বিজেপি-র কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দলের সদস্যদেরও গ্রেফতার করা হয়। এ দিন কংগ্রেস প্রতিনিধি দলকে আটকানোর পর তাদের সঙ্গে ধস্তাধস্তি শুরু হয় পুলিশের। শেষে চৌমণ্ডলপুরেই অবস্থান বিক্ষোভ শুরু করেন দলীয় সদস্যেরা।

এ দিন দুপুরে কংগ্রেসের ওই প্রতিনিধি দল মাখড়ার বেশ খানিকটা আগে চৌমণ্ডলপুর পৌঁছতেই পুলিশ সক্রিয় হয়ে ওঠে। এলাকায় ১৪৪ ধারা রয়েছে বলে তাঁদের আটকে দেওয়া হয়। এর পরে পুলিশের প্রথম ব্যারিকেডটি ভেঙে ফেলেন কংগ্রেস কর্মীরা। সেই সময় পুলিশের সঙ্গে একপ্রস্থ ধস্তাধস্তি হয় তাঁদের। কিন্তু পুলিশি ঘেরাটোপ পেরিয়ে তাঁরা আর এগোতে পারেননি। কোনও জায়গায় ১৪৪ ধারা জারি থাকলে সেখানে একসঙ্গে সর্বাধিক চার জন যেতে পারে, এই যুক্তিতে অধীরবাবু পুলিশের কাছে তাঁদের চার জন প্রতিনিধিকে গ্রামে ঢোকার আবেদন জানান। তিনি জানান, প্রতিনিধি দলে একাধিক সাংসদ এবং বিধায়ক রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে থেকে চার জনকে গ্রামে ঢুকতে দেওয়া হোক। কিন্তু তাও নাকচ করে দেওয়া হয়। এর পর সেখানেই অধীরবাবুর নির্দেশে অবস্থান বিক্ষোভে বসে পড়েন দলীয় কর্মী-সমর্থকেরা। কবে ওই গ্রামে স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরবে দলের তরফে প্রশাসনের কাছে তা জানতে চাওয়া হয়। কিন্তু তারও কোনও সদুত্তর মেলেনি বলে কংগ্রেসের অভিযোগ।

বিক্ষোভ চলাকালীন অধীর বলেন, “একটি গ্রামে অনির্দিষ্ট কাল ১৪৪ ধারা জারি থাকতে পারে না। প্রশাসনের কাছে জানতে চেয়েছি, কবে স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরবে? তাঁরা কোনও উত্তর দিতে পারেননি।” এর পরই তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে উদ্দেশ্য করে বলেন, “আমি মুখ্যমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। এসে দেখে যান, কেমন ভাবে দিন কাটাচ্ছে মাখড়া। আমাদের কাছে অনেক মহিলাই অভিযোগ করেছেন, শরীরের এমন জায়গায় তাঁদের মারধর করা হয়েছে যা তাঁরা অন্যকে দেখাতেও লজ্জা পাচ্ছেন। আপনি তো মহিলা মুখ্যমন্ত্রী। আপনার দেখা উচিত।”

এ দিন অধীরবাবু অভিযোগ করেন, নিরাপত্তার নামে সাধারণ মানুষের জীবন ওষ্ঠাগত হয়ে উঠছে। গ্রামের লোক দীর্ঘ দিন ধরেই খাবার এবং জল পাচ্ছেন না। ১৪৪ ধারার নামে পুলিশি রাজত্ব চলছে। তাঁরা এই সমস্যার সমাধান চেয়েই গ্রামে যেতে চেয়েছিলেন বলে তাঁর দাবি। চৌমণ্ডলপুরে আটকে দেওয়ার পর অধীর প্রশাসনকে হুমকি দেন, “আলোচনার জন্য কোনও পুলিশকর্তাকে না পাঠানো হলে আমরা আইন ভেঙেই গ্রামে ঢুকব।”

প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর পাশাপাশি এ দিন কংগ্রেসের ওই প্রতিনিধি দলে ছিলেন দলের পরিষদীয় নেতা মহম্মদ সোহরাব-সহ ১১ জন বিধায়ক। ছিলেন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের পুত্র অভিজিত্‌ মুখোপাধ্যায়। গত বুধবারও অভিজিত্‌বাবুর নেতৃত্বাধীন এক প্রতিনিধি দলকে হাঁসড়া মোড়ে আটকে দেয় পুলিশ। কিছু ক্ষণ অবস্থান বিক্ষোভের পর তাঁরা ফিরে গিয়েছিলেন। ওই দিনেই বোলপুরের প্রাক্তন সাংসদ রামচন্দ্র ডোম এবং রাজ্যসভার সাংসদ ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ এক বাম প্রতিনিধি দলকে মাখড়া ঢোকার চেষ্টার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়। পরে তাঁদের যদিও ব্যক্তিগত জামিনে ছেড়ে দেওয়া হয়। এর পরে গত বৃহস্পতিবার মুক্তার আব্বাস নকভি, কীর্তি আজাদের মতো বিজেপি-র কেন্দ্রীয় নেতাদেরও গ্রেফতার করা হয়। পরে তাঁদেরও ছেড়ে দেওয়া হয়।

গত সোমবার দুপুরে বীরভূমের পাড়ুই থানার মাখড়া গ্রামে প্রায় দু’ঘণ্টা ধরে তাণ্ডব চালানোর অভিযোগ ওঠে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীদের দিকে। এই ঘটনায় ওই দিন তিন জন নিহত হন। তাঁদের মধ্যে দু’জন তৃণমূল কর্মী এবং এক জন বিজেপি সমর্থকের ছেলে। এর আগে চৌমণ্ডলপুরে বোমার আঘাতে গুরুতর জখম হন পাড়ুই থানার তত্‌কালীন ওসি প্রসেনজিত্‌ দত্ত। মাখড়ার ঘটনায় পুলিশ ১৭ জনকে গ্রেফতার করে। যদিও সেই গ্রেফতারি নিয়েও আদালতের কড়া ভর্ত্‌সনার মুখে পড়েন পাড়ুই থানার ওসি কার্তিকমোহন ঘোষ। একই ব্যক্তিকে দু’বার গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতের কাছে তাকে পুলিশি হেফাজতে রাখার আবেদন জানানোর জন্য বিচারক জেলা পুলিশকে ভর্ত্‌সনা করেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

makhra adhir chowdhury congress
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE