ধ্বংসস্তুপের মাঝে জীবনের দাবি। গাজায়। ছবি: রয়টার্স।
পুরোদমে চলছে ইজরায়েলের গাজা অভিযান। জবাবে হামাসের রকেট হামলাও অব্যাহত। সংঘর্ষে প্যালেস্তাইনে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৪৯। মারা গিয়েছেন ৩১ জন ইজরায়েলিও। এরই পাশাপাশি, সংঘর্ষ থামাতে জোরদার কূটনৈতিক আলোচনাও চলছে। তবে এখনও কোনও সমাধানসূত্র মেলেনি।
মঙ্গলবার হামাসের ছোড়া একটি রকেট ইজরায়েলের তেল আভিভে, বেন গুরিয়ন বিমানবন্দরের কাছে আঘাত হানে। এর পরে আগামী ২৪ ঘণ্টার জন্য ইজরায়েলে বিমানযাত্রার উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করে আমেরিকার ‘ফেডারেল এভিয়েশন অথরিটি’ (এফএএ)। যদিও আমেরিকার বেশ কয়েকটি বিমান সংস্থা জানিয়েছে, ২৪ ঘণ্টা পরেও তারা ইজরায়েলে বিমান নিয়ে যেতে আগ্রহী নন। ইউরোপের বেশ কিছু বিমান সংস্থাও একই কথা জানিয়েছে। ইজরায়েল এই নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদ করেছে। এই নিষেধাজ্ঞা যুদ্ধের কারণে মন্দায় চলা ইজরায়েলের পর্যটন শিল্পকে প্রভাবিত করবে বলে ইজরায়েলের অভিযোগ।
ইজরায়েলি সেনা সূত্রে খবর, তারা বুধবার উত্তর গাজার বেইট হানোউন-এর আরও গভীরে প্রবেশ করছে। এখানে বেশ কয়েকটি বাগান নষ্ট করা হয়েছে। পাওয়া গিয়েছে বেশ কিছু সুড়ঙ্গের সন্ধানও। সেখানে তাদের প্রতিরোধের সম্মুখীন হতে হচ্ছে বলে খবর। দক্ষিণ গাজার খান ইয়নুসের কাছে কৃষিক্ষেত্রে তীব্র লড়াই চলছে। চলছে বিমান, ড্রোন থেকে আক্রমণ। বজায় আছে গোলাবর্ষণও। এ দিনের অভিযানে আরও ১০ জন জঙ্গিকে হত্যা করা হয়েছে বলে ইজরায়েলি সেনার দাবি। সব মিলিয়ে তারা ২১০ জন জঙ্গিকে হত্যা করছে বলে জানিয়েছে। এ দিন হামাসের এক স্নাইপার-এর গুলিতে এক ইজরায়েলি সেনার মৃত্যু হয়েছে। আর হামাসের রকেটে দু’জন সাধারণ ইজরায়েলির মৃত্যু হয়েছে। সুড়ঙ্গপথে হামাস তাদের উপরে আক্রমণের চেষ্টা করছে বলে ইজরায়েলি সেনাকর্তারা জানিয়েছেন। কয়েকটি জায়গায় এতই তীব্র লড়াই হচ্ছে যে আহত-নিহতদের উদ্ধারের জন্য অ্যাম্বুল্যান্সও যেতে পারছে না। এই সব জায়গায় সংবাদ মাধ্যমের প্রবেশের উপরেও ইজরায়েল নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। ইজরায়েলি সেনা জানিয়েছে, এখনও পর্যন্ত তাঁরা হামাসের ৪০০০ রকেট ধ্বংস করেছে। তবে হামাসের হাতে আরও ৫০০০ রকেট রয়েছে বলে তাদের দাবি।
অন্য দিকে হামাস জানিয়েছে, তাদের মনোবল এখনও অটুট আছে। হামাসের জঙ্গিরা ইজরায়েলি সেনার সাঁজোয়া গাড়ির উপরে হামলা চালিয়ে বেশ কয়েক জন সেনাকে হত্যা করেছে বলে দাবি। ইজরায়েলের তরফে এখনও এ বিষয়ে কিছু জানান হয়নি। দু’পক্ষের এই একগুয়ে মনোভাবের মাঝে পড়ে প্রাণ হারাচ্ছেন নিরীহ গাজাবাসী। এর মধ্যে গাজায় ৪৭৫টি বাড়ি সম্পূর্ণ ভাবে এবং ২৬৪৪টি বাড়ি আংশিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে প্যালেস্তাইন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন। ধ্বংস হয়েছে ৪৬টি স্কুল, ৫৬টি মসজিদও। বেশ কয়েকটি হাসপাতালও আক্রন্ত হয়েছে। এ দিন ওয়াফা হাসপাতালে হামলা হয়েছে বলে খবর। সব ক্ষেত্রেই হামাসের জঙ্গি বা অস্ত্রের ঘাঁটি লক্ষ্য করেই অভিযান চলেছে বলে ইজরায়েল জানিয়েছে। অভিযানের আগে বাসিন্দাদের সতর্কও করা হচ্ছে বলে ইজরায়েল জানিয়েছে। তবে সতর্ক করার পরেও হামাস বাসিন্দাদের বাড়ি ছাড়তে বাধা দিচ্ছে বলে ইজরায়েলের অভিযোগ। হামাস এ অভিযোগ নস্যাৎ করে দিয়েছে। রাষ্ট্রসঙ্ঘ জানিয়েছে, গাজার ৪৩ শতাংশ অঞ্চলে যুদ্ধের প্রভাব পড়েছে। তাদের আশ্রয় শিবিরে ১ লক্ষ ১৮ হাজার ৩০০ জন আশ্রয় নিয়েছেন। নাগরিক পরিষেবা সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত। রাষ্ট্রসঙ্ঘের মানবাধিকার কমিশনার নভি পিল্লাই-এর অভিযোগ, এই হামলা চালিয়ে ইজরায়েল আন্তর্জাতিক আইন ভঙ্গ করছে।
বুধবার মার্কিন বিদেশ সচিব জন কেরি ইজরায়েল পৌঁছেছেন। ইজরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানেয়াহু ছাড়াও প্যালেস্তাইনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের সঙ্গে তাঁর আলোচনা হবে। মঙ্গলবার কেরির সঙ্গে মিশরের প্রেসিডেন্ট আল-সিস ছাড়াও কাতার ও তুর্কির বিদেশমন্ত্রীর আলোচনা হয়। ইজরায়েলে রয়েছেন রাষ্ট্রসঙ্ঘের মহাসচিব বান কি মুন-ও। তাঁর সঙ্গে ইজরায়েলের প্রেসিডেন্ট সিমন পেরেজের আলোচনা হয়েছে। প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস যুদ্ধ বিরতির জন্য হামাসের দাবিকে সমর্থন করেছেন। সাত বছর ধরে চলা ইজরায়েলি অবরোধ এবং মিশর রাফা সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়ায় গাজার অর্থনীতি ভেঙে পড়েছে বলে তিনি জানান। হামাস যুদ্ধবিরতির প্রাথমিক শর্ত হিসেবে সীমান্ত দিয়ে মানুষ ও পণ্যের অবাধ চলাচলের দাবি করেছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy