ইজরায়েলি হানায় গাজায় নিহত একই পরিবারের পাঁচ সদস্য। ছবি: এএফপি।
সংঘর্ষের তীব্রতা বাড়ছে গাজায়। রাষ্ট্রসঙ্ঘ পরিচালিত স্কুলও রেহাই পেল না ইজরায়েলি হামলার হাত থেকে। বৃহস্পতিবার সেখানে হামলার জেরে মৃত্যু হয়েছে ১৫ জনের। উত্তর গাজার ওই স্কুলে প্যালেস্তিনীয় শরণার্থীরা আশ্রয় নিয়েছিলেন। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রক সূত্রে এ কথা জানানো হয়েছে। ইতিমধ্যেই গাজায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৭১৮-য়। এর মধ্যে ৭০ শতাংশই সাধারণ নাগরিক। নিহতদের মধ্যে রয়েছে ১৬৬ জন শিশুও। প্রাণ হারিয়েছেন ৩২ জন ইজরায়েলিও। তাদের শর্ত মানা না হলে যুদ্ধবিরতি সম্ভব নয় বলে বৃহস্পতিবার হামাস দাবি করেছে।
বৃহস্পতিবার ভোরে গাজায় ইজরায়েলি গোলাবর্ষণে ২৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে একই পরিবারের ছ’জন আছেন। দক্ষিণ গাজার খুজা এবং অবাসন গ্রামে ইজরায়েল হামলা চালায়। এতেও অনেকের মৃত্যু হয়েছে। ধ্বংসস্তূপের মধ্যেও অনেকে চাপা পড়ে আছেন। কিন্তু তীব্র লড়াইয়ে এখনও পর্যন্ত সেখানে চিকিৎসক দল পৌঁছতে পারেনি বলে জানা গিয়েছে।
রাষ্ট্রসঙ্ঘের মানবাধিকার সংক্রান্ত বিষয়ের প্রধান ভ্যালেরি আমস জানিয়েছেন, গাজার অবস্থা খুবই খারাপ। গাজার ৪৪ শতাংশ অঞ্চল বিপজ্জনক বলে ইজরায়েলি সেনা ঘোষণা করেছে। রাষ্ট্রসঙ্ঘের আশ্রয় শিবিরে ভিড় আরও বাড়ছে। সেখানে দ্রুত খাদ্য, পানীয় ফুরিয়ে আসছে। গাজার অধিকাংশ বাসিন্দা পানীয় জলের সঙ্কটে ভুগছেন বলে তিনি জানিয়েছেন। এই অবস্থায় যুদ্ধবিরতির জন্য জোরদার প্রয়াস চলছে। প্যালেস্তাইনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের সঙ্গে আলোচনার পরে মার্কিন বিদেশসচিব জন কেরি আবার কায়রোতে গিয়েছেন। তিনি জানান, আলোচনায় প্রাথমিক ভাবে কিছু অগ্রগতি হলেও এখনও অনেক কাজ বাকি। আমেরিকা যুদ্ধবিরতির জন্য মিশরের মাধ্যমে হামাসের উপরে চাপ সৃষ্টি করছে বলে খবর। হামাসের সঙ্গে আমেরিকা ও ইউরোপের কোনও দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই। মিশরের আশা, ঈদের আগেই যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু হামাসের অন্যতম নেতা খালেদ মেশাল বুধবার কাতার থেকে জানিয়েছেন, ইজরায়েল ও মিশর গাজা থেকে অবরোধ না তোলা পযর্ন্ত যুদ্ধবিরতি সম্ভব নয়। অন্য দিকে, ইজরায়েলও হামাসের সুড়ঙ্গগুলি ধ্বংস না করা পর্যন্ত যুদ্ধবিরতিতে রাজি নয়। এর মধ্যে হামাসের ৩১টি সুড়ঙ্গের খোঁজ পাওয়া গিয়েছে। প্রায় ন’টি সুড়ঙ্গ ধ্বংস করা হয়েছে। এ দিন ১৫০ জন জঙ্গিকে বন্দি করা হয়েছে বলেও ইজরায়েলি সেনা জানিয়েছে।
২০০৬-এ ইজরায়েলি সেনা গিলাদ শালিতের অপহরণের পরে ইজরায়েল গাজায় অবরোধ শুরু করে। আবার মিশরে আল-সিসি সরকার ক্ষমতায় আসার পরে রাফা সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়া হয়। এই দুই অবরোধে গাজার অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ধসে পড়েছে। হামাস বার বার এই অবরোধ তোলার দাবি জানিয়ে আসছে। এ দিকে আমেরিকার ‘ফেডারেল এভিয়েশন অথরিটি’ (এফএএ) ইজরায়েলের উপর থেকে বিমান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নিয়েছে। এই নিষেধাজ্ঞা তাদের পর্যটন শিল্পে প্রভাব ফেলবে বলে ইজরায়েল অভিযোগ জানিয়েছিল। কিন্তু এর পরে বিমান চলাচলের সিদ্ধান্ত বিমান সংস্থাগুলির নেওয়ার কথা। এ বার আমেরিকার বিমান সংস্থাগুলি অবিলম্বে বিমান চলাচল শুরু করবে বলে ইজরায়েলের আশা। কিন্তু ইউরোপীয় বিমান সংস্থাগুলি আরও সময় নেবে বলে ইজরায়েল মনে করছে। আপাতত ইজরায়েলগামী বিমানগুলি সাইপ্রাসের লার্নাকা বিমানবন্দরে নামছে। তার পরে ইজরায়েলি বিমান সংস্থাগুলি যাত্রীদের বেন গুরিয়নে নিয়ে যাচ্ছে।
বুধবার মানবাধিকার কমিশনার নভি পিল্লাই জানিয়েছিলেন, গাজায় ইজরায়েলের হামলা অপরাধের পর্যায়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ নিয়ে কমিশনে ভোটাভুটি হওয়ারও কথা। বৃহস্পতিবার ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানেয়াহু রাষ্ট্রসঙ্ঘের মানবাধিকার কমিশনের এই সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা করেছে। হামাস সাধারণ গাজাবাসীকে ‘হিউম্যান শিল্ড’ হিসেবে ব্যবহার করছে বলে তাঁর অভিযোগ। অন্য দিকে, গাজায় রাষ্ট্রসঙ্ঘের একটি আশ্রয় শিবিরে অস্ত্রের সন্ধান মিলেছে। রাষ্ট্রসঙ্ঘের মহাসচিব বান-কি মুন এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছেন। আপাতত আলোচনার জন্য তিনি জর্ডনে রয়েছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy