Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

শিশুকে বেধড়ক মারধরের অভিযোগ গৃহশিক্ষিকার বিরুদ্ধে

সাড়ে তিন বছরের এক শিশুকে এলোপাথাড়ি মারধরের অভিযোগ উঠল তার গৃহশিক্ষিকার বিরুদ্ধে। শিশুটির বাবা-মায়ের অভিযোগের ভিত্তিতে লেকটাউন থানার পুলিশ অভিযুক্ত পূজা সিংহের খোঁজে তল্লাশি শুরু করছে। বাগুইআটির যে ঠিকানার কথা বলে সে পড়ানোর কাজে ঢুকেছিল, পুলিশ জানিয়েছে সেটি ভুয়ো। তার স্বামী রাকেশকেও খুঁজছে পুলিশ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৩ জুলাই ২০১৪ ১৭:০৭
Share: Save:

সাড়ে তিন বছরের এক শিশুকে এলোপাথাড়ি মারধরের অভিযোগ উঠল তার গৃহশিক্ষিকার বিরুদ্ধে। শিশুটির বাবা-মায়ের অভিযোগের ভিত্তিতে লেকটাউন থানার পুলিশ অভিযুক্ত পূজা সিংহের খোঁজে তল্লাশি শুরু করছে। বাগুইআটির যে ঠিকানার কথা বলে সে পড়ানোর কাজে ঢুকেছিল, পুলিশ জানিয়েছে সেটি ভুয়ো। তার স্বামী রাকেশকেও খুঁজছে পুলিশ।

দক্ষিণদাঁড়ির ওই আক্রান্ত শিশুর নাম বংশ অগ্রবাল। সে মৌলালির কাছে সেন্ট জেমস স্কুলে নার্সারিতে পড়ে। তাঁর বাবা সঞ্জয় অগ্রবাল আমদানি-রফতানির ব্যবসা করেন। তিনি এবং তাঁর স্ত্রী শালিনী বুধবার সকালে পুলিশের কাছে অভিযোগে জানিয়েছেন, গত ১৫ জুলাই বাগুইআটির বাসিন্দা পূজাকে গৃহশিক্ষিকা হিসেবে নিয়োগ করা হয়। মঙ্গলবার দুপুরে সেইমতো বংশকে পড়াতে আসে ওই মহিলা। এর আগে দু’দিন পড়িয়ে গিয়েছে সে। দু’দিনই শালিনীদেবী তাঁর সন্তানের পাশে বসেছিলেন।

মা পাশে বসে থাকলে বংশ মোটেও পড়াশোনা করতে চায় না এই কারণ দেখিয়ে তৃতীয় দিন দুপুরে ওই গৃহশিক্ষিকা তাঁকে পাশের ঘরে যেতে বলেন। শালিনীদেবী বাইরে যেতেই ওই ঘরের দরজা বন্ধ করে দেয় পূজা। এর কিছু সময় পর ছেলের লাগাতার কান্নার আওয়াজ পেয়ে তিনি ওই গৃহশিক্ষিকাকে দরজা খুলতে বলেন। জানতে চান, বংশের কী হয়েছে? উত্তরে ওই মহিলা জানায়, মা তাকে না বলে বাজারে চলে যেতে পারে, এই আশঙ্কায় সে কাঁদছে। এমন উত্তরে সন্তুষ্ট হতে পারেনি মায়ের মন। ওই ঘরে একটি সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো আছে। পাশের ঘরের কম্পিউটারে সেই ক্যামেরার ছবি দেখে আঁতকে ওঠেন তিনি।

কী দেখেছিলেন তিনি?

দেখেন তাঁর সন্তানকে এলোপাথাড়ি মারধরের পাশাপাশি তাকে আছড়ে ফেলে দিচ্ছে ওই গৃহশিক্ষিকা। বুকে-পেটে-পিঠে লাথিও মারা হচ্ছে। আতঙ্কিত শালিনীদেবী এর পরেই তাঁর স্বামীকে ফোন করেন। তিনি তখন পেশাগত কাজে রাশিয়া যাবেন বলে বিমানবন্দরে ছিলেন। স্ত্রীর ফোন পেয়ে তড়িঘড়ি বাড়ি চলে আসেন। ঘরের দরজা ধাক্কাধাক্কি করে ভেঙে ভিতরে ঢুকে তাঁরা দেখেন বিছানার উপর নেতিয়ে শুয়ে রয়েছে বংশ। ছেলের দিকে মনোনিবেশ করার ফাঁকেই সেখান থেকে চম্পট দেয় ওই মহিলা।

এর পর ওই দিন সন্ধ্যায় তাঁদের বাড়িতে আসেন রাকেশ সিংহ নামের এক ব্যক্তি। অভিযোগ, নিজেকে পূজার স্বামী পরিচয় দিয়ে তিনি হুমকি দেন, এই ঘটনার কথা পুলিশে জানানো হলে ফল ভাল হবে না। ছেলেকে নিয়ে সন্ত্রস্ত ওই দম্পতি চাপের মুখে কাউকেই এ বিষয়ে কিছু আর জানাননি। কিন্তু রাত দশটা নাগাদ এক আত্মীয়কে ফোন করে ঘটনার কথা বলায় তিনি বিষয়টি পুলিশকে জানানোর পরামর্শ দেন। সেইমতো এ দিন সকালে লেকটাউন থানায় অভিযোগ করেন অগ্রবাল দম্পতি। এর পরে বংশকে আরজিকর মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যাওয়া হয়। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, তার মুখে-পেটে-বুকে-পিঠে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। ঘটনায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন অগ্রবাল দম্পতি। শিশুটির বাবা সঞ্জয় এ দিন বলেন, “আমার ছেলেটাকে যে ভাবে মেরেছে জন্তুজানোয়ারদেরও মানুষ এ ভাবে পেটায় না!” বংশ নিজেও ভীষণ আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। এমনকী, নিজের বাবা-মাকে দেখেও কেঁপে কেঁপে উঠছে।

অভিযোগ পেয়ে পুলিশ অগ্রবাল দম্পতির দেওয়া পূজার বাগুইআটির ঠিকানায় পৌঁছে দেখে, ওই নামে কেউ সেখানে থাকে না। এমনকী, রাকেশ সিংহেরও কোনও হদিশ সেখানে পাননি পুলিশ কর্মীরা। বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেটের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, অভিযুক্তদের খোঁজে তল্লাশি চলছে।

এ দিন অগ্রবাল দম্পতির বাড়িতে গিয়েছিলেন স্থানীয় বিধায়ক সুজিত বসু। তাঁর মন্তব্য, ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক। অন্য দিকে, ওয়েস্টবেঙ্গল স্টেট কমিশন ফর প্রোটেকশন অফ চাইল্ড রাইট-এর সদস্যেরা ওই পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন। কমিশনের চেয়ারম্যান অশকেন্দু সেনগুপ্ত বলেন, “শিশুর অধিকার এ ক্ষেত্রে লঙ্ঘিত হয়েছে। বিষয়টি যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ভাবে বিবেচনা করা হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE