আদালত চত্বরে মদন মিত্র। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক।
জামিন পেলেন না মদন মিত্র। সারদা কাণ্ডে ধৃত পরিবহণমন্ত্রীকে ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দিল আদালত। দ্বিতীয় দফায় তিন দিনের সিবিআই হেফাজত শেষে শুক্রবার তাঁকে আদালতে পেশ করা হয়। নিজেদের হেফাজতে না চাইলেও তাঁর জামিনের বিরোধিতা করে সিবিআই। সিবিআই কৌঁসুলিরা আদালতে বলেন, “মদন মিত্র অত্যন্ত প্রভাবশালী। তিনি জামিনে ছাড়া পেলে নথি এবং প্রমাণ নষ্ট হতে পারে।” সিবিআইয়ের আবেদনে সাড়া দিয়ে পরিবহণমন্ত্রীর জেল হেফাজতের নির্দেশ দিলেন আলিপুর আদালতের অতিরিক্ত বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট হারাধন মুখোপাধ্যায়। আগামী ২ জানুয়ারি পর্যন্ত তাঁর ‘ঠিকানা’ আলিপুর সেন্ট্রাল জেল।
আদালতে স্পষ্টতই বিধ্বস্ত দেখিয়েছে পরিবহণমন্ত্রীকে। ঘিয়ে রঙের হাফ হাতা পাঞ্জাবি, চোস্ত এবং স্নিকার্স পরা মদনবাবু এ দিনও বিচারকের কাছে সিবিআইয়ের বিরুদ্ধে তাঁকে মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ আনেন। আদালতে তিনি বলেন, “আমার উপর অকথ্য মানসিক অত্যাচার চালিয়েছে সিবিআই। আমার ভয়েস রেকর্ডিং করতে বলা হয়েছিল, আমি রাজি হইনি। আমাকে সিবিআই বলে, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে ভয়েস রেকর্ডিংয়ে আমি বাধ্য। আমি জানাই, সুপ্রিম কোর্ট আমি বুঝি না। আমার কোর্ট আমাকে এটা না দিতে বলেছে। তখন আমাকে বলা হয়, তা হলে সুপ্রিম কোর্ট আপনার বিরুদ্ধে যাবে। আমি বলি, বিরুদ্ধে গেলেও এ ক্ষেত্রে আমার কিছু করার নেই।” সিবিআইয়ের বিরুদ্ধে ভয় দেখানোর অভিযোগ করে তিনি বলেন: “আমাকে বলা হয়, সারদার অনুষ্ঠানে আমার ভাষণ শুনে ২৮ লক্ষ মানুষ প্রভাবিত হয়ে সারদায় টাকা রেখেছেন। আমি বলি, তা হলে এক জন ‘প্রভাবিত’ও কেন কোনও অভিযোগ করল না?”
তিন দিনের হেফাজতের শেষে এ দিন দুপুর দেড়টা নাগাদ পরিবহণমন্ত্রীকে নিয়ে সিজিও কমপ্লেক্স থেকে রওনা হন সিবিআই অফিসাররা। এ দিন আদালত চত্বরে ভিড় থাকলেও গত দু’দিনের তুলনায় তা ছিল তুলনায় কম। পুলিশি ব্যবস্থাও গত দিনের তুলনায় কিছুটা কম ছিল। যদিও তাঁর সমর্থনে এ দিনও জনতা স্লোগান দেয়, গাড়ি লক্ষ করে ফুলও ছোড়া হয়।
সিবিআইকে যে বেশ কয়েক জন সিপিএম নেতার নাম তিনি বলেছেন, বৃহস্পতিবারই তা জানিয়েছিলেন পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র। আর এ বার মদনবাণে সরাসরি বিদ্ধ হলেন সিপিএমের তিন হেভিওয়েট নেতা। তৃতীয় দফায় আলিপুর আদালতে নিয়ে যাওয়ার সময়ে মন্ত্রী দাবি করেন, সিপিএম সাংসদ মহম্মদ সেলিম, প্রাক্তন বিধায়ক রবীন দেব এবং প্রাক্তন সাংসদ সুজন চক্রবর্তীর সারদা কাণ্ডে জড়িত থাকার বিষয়টি তিনি কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাটিকে জানিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার রাতে সিবিআই অফিস থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পথে মদনবাবু প্রশ্ন তোলেন, তিনি অনেক সিপিএম নেতার নাম বলেছেন। সিবিআই তাঁদের ডাকছে না কেন? এ দিনও একই দাবি করেন পরিবহণমন্ত্রী। এবং এ বার সরাসরি আঙুল তুললেন রবীন-সেলিম-সুজনের বিরুদ্ধে। মন্ত্রী আরও অভিযোগ করেন, এঁদের নামে সরাসরি অভিযোগ করলেও সিবিআই তাঁদের জেরা করছে না। কিন্তু ঠিক কী ভাবে সারদা কাণ্ডে জড়িত এই নেতারা? কেনই বা রাজ্যের গঠিত সিট এঁদের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেনি? এই প্রশ্নের অবশ্য কোনও উত্তর দেননি তিনি। সিবিআই অবশ্য তাদের বিরুদ্ধে তোলা মন্ত্রীর অভিযোগকে বিশেষ আমল দয়নি। “তাঁর দাবি তিনি করেছেন। যাঁদের নাম তিনি করেছেন, যথেষ্ট প্রমাণ পাওয়া গেলে অবশ্যই তাঁদের ডাকা হবে। আমরা সব দিক খতিয়ে দেখছি।”— দাবি সিবিআইয়ের এক আধিকারিকের।
যদিও সিপিএমের তিন নেতাই মদনবাবুর অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন। তাঁদে মতে, মদন মিত্র সিবিআইয়ের কাছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং মুকুল রায়ের নাম করেছেন। বাইরে তাঁদে নাম করে দৃষ্টি ঘোরাতে চাইছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy