নেপালের দরবার স্কোয়ারের বাইরে অপেক্ষমান মানুষেরা। ছবি: এপি।
সময় যত গড়াচ্ছে মৃতের সংখ্যা হু হু করে বাড়ছে। রবিবার বিকেল পর্যন্ত নেপালে মৃতের সংখ্যা ২ হাজার ছাড়িয়ে গিয়েছে। আহতের সংখ্যা ৫ হাজারেরও বেশি। এরই মধ্যে এ দিন দুপুর ১২টা ৩৯ মিনিটে ফের আফটার-শকে কেঁপে ওঠে নেপাল ও সংলগ্ন দেশগুলি। প্রভাব পড়েছে ভারতেও। দিল্লি, হরিয়ানা, পঞ্জাব, উত্তরপ্রদেশ, অসম, রাজস্থান ও পশ্চিমবঙ্গে এই কম্পন অনুভূত হয়েছে। এ দিন কম্পনের উত্সস্থল ছিল নেপালের কোডারি থেকে ১৭ কিলোমিটার দক্ষিণে। রিখটার স্কেলে কম্পনের তীব্রতা ছিল ৬.৭। নতুন করে কম্পন হওয়ায় কাঠমান্ডুতে বিকেল ৪টে পর্যন্ত উদ্ধারকাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়। নেপালের মৌসম ভবন সূত্রে জানানো হয়েছে, আরও আফটার-শক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ দিন ধরহরা মিনারের ধ্বংসস্তূপ থেকে ২০০টি দেহ উদ্ধার করা হয়েছে। শনিবার রাত থেকেই আফটার-শকে মাঝে মাঝে কেঁপে উঠছে নেপাল। আতঙ্কে মানুষ ঘর-বাড়ি ছেড়ে খোলা জায়গায় অস্থায়ী শিবির করে রাত কাটাচ্ছেন। কাঠমান্ডুর চিত্রটা পুরো বদলে গিয়েছে। দেখে মনে হচ্ছে শহরের বুকের উপর দিয়ে বুলডোজার চালানো হয়েছে। সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গিয়েছে কাষ্ঠমণ্ডপ, পাঁচতালে বসন্তপুর দরবার, দশাবতার এবং কৃষ্ণ মন্দির। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পশুপতিনাথ মন্দিরও।
শুধু কাঠমান্ডু শহরেই মৃত্যু হয়েছে ১ হাজারেরও বেশি মানুষের। প্রশাসন সূত্রে খবর, সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে গোর্খা, ধারিং, রাসুয়া, সিন্ধুপালচক, কাভরেপালানচক এবং ঢোলাকা জেলা। উদ্ধার করা হয়েছে ১৭ জন পর্বাতারোহীর দেহ। এ দিন নতুন করে তুষার ধস নেমেছে মাউন্ট এভারেস্টে। নেপালের পর্যটন মন্ত্রক জানিয়েছে, ভূমিকম্পের সময় প্রায় এক হাজার পর্বতারোহী এভারেস্টের বিভিন্ন বেসক্যাম্পে ছিলেন।
এ দিন সকালে নেপালে আটকে পড়া প্রায় ৫৫০ জন ভারতীয়কে উদ্ধার করে দেশে ফিরিয়ে এনেছে ভারতীয় বায়ু সেনা। শনিবার থেকেই উদ্ধারকাজে নামানো হয়েছে বায়ুসেনার বিমান এবং হেলিকপ্টার। ওই দিন রাত থেকে রবিবার সকাল পর্যন্ত পর পর তিন দফায় ভারতীয়দের উদ্ধার করে নিয়ে আসা হয়েছে। তবে ভারতীয় মহিলা ফুটবলের অনুর্ধ্ব ১৪ দলের ১৮ জন সদস্য আটকে পড়ার খবর পাওয়া গিয়েছে। বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ এ দিন টুইট করেন, “ওই ফুটবল দলকে উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।”
এয়ার মার্শাল অরূপ রাহা জানিয়েছেন, আরও ১০টি বড় উদ্ধারকারী বিমান নেপালে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিপর্যয়ের পরই নেপালে উদ্ধারকাজে দ্রুত নামানো ভারতীয় সেনাকে। যে সব ভারতীয় পর্যটকরা এখনও আটকে রয়েছেন শহরের বিভিন্ন প্রান্তে তাঁদের দ্রুত উদ্ধার করার জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে একটি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। ওই বৈঠকে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর(এনডিআরএফ) আরও ৩০০ কর্মীকে নেপালে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। শনিবারেই উদ্ধারকাজের জন্য ৪৬০ জন এনডিআরএফ কর্মীকে পাঠানো হয়। পর্যটকদের সহায়তার জন্য ইন্দো-নেপাল সীমান্তেও সীমা সুরক্ষা বল (এসএসবি)-এর চিকিত্সা শিবির তৈরি করা হয়েছে।
অন্য দিকে, ইজরায়েলও একটি প্রতিনিধি দল পাঠিয়েছে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে নেপাল সরকারকে যাবতীয় সহযোগিতা করার জন্য।
চিনের এক সংবাদ সংস্থা সূত্রে খবর, তিব্বতেও মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭। অন্য দিকে, ভারতেও মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৩। আহতের সংখ্যা প্রায় আড়াইশো। এর মধ্যে বিহারেই মৃত্যু হয়েছে ৪২ জনের। আহত হয়েছেন ১৫৬ জন। মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার মৃতদের পরিবারকে ৪ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন। উত্তরপ্রদেশে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy