কলকাতায় বামেদের বিরাট মিছিল। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক
মহাজাতি সদন থেকে রবীন্দ্র সদন— সাম্প্রতিক অতীতে লাল ঝান্ডা নিয়ে এত বড় মিছিল দেখেনি কলকাতা।
মিছিল শেষে অ্যাকাডেমির সামনে দাঁড়িয়ে ১৭ পার্টির নেতারা একে অন্যকে জড়িয়ে ধরে প্রশ্ন করছেন— কত লোক হবে? প্রশ্নকর্তাদের মধ্যে যেমন আছেন সিপিএমের মানব মুখোপাধ্যায়, সিপিআইয়ের মঞ্জুকুমার মজুমদার, তেমনই সিপিআই (এমএল) লিবারেশনের পার্থ ঘোষ, এসইউসি-র দেবপ্রসাদ সরকার। বক্তাদের দীর্ঘ তালিকায় তাঁকে রাখা যাচ্ছে না, রবীন দেব এ কথা আরসিপিআইয়ের মিহির বাইনকে জানানো মাত্রই তাঁর প্রতিক্রিয়া, “দূর, এত বড় মিছিল! তার পরে আর বলার কী আছে?” সভা শেষে বিমান বসুর মুখে তৃপ্ত হাসি। এতটা পথ হেঁটে বক্তৃতা করার ক্লান্তি উধাও! কাঁধের খাটো টাওয়েলে মুখ মুছে বিমানবাবু বললেন, “খবর পাচ্ছিলাম, ভাল ভিড় হবে। কিন্তু এত হবে ভাবিনি।”
মিছিলে কত মানুষ হেঁটেছেন? বিমানবাবু বললেন, “প্রথমে ভেবেছিলাম, ২০ হাজার হবে। কিন্তু দু’দিন আগে বুঝলাম সে হিসাব ছাড়িয়ে যাবে। ৪০ হাজার পেরিয়ে যাবে।” মিছিলের মানুষ মাপার যন্ত্র নেই। তবে, লাগাতার প্রায় ৪ কিমি ভিড়ে ঠাসা মানুষ হেঁটেছে। সেই তুলনায় ধর্মতলায় গাঁধী মূর্তির সামনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভায় লোক হয়েছিল নেহাতই কম। তৃণমূলের সভার সঙ্গে তাঁদের মিছিলের তুলনা টানেননি বাম নেতারা। সাংবাদিকদের কাছে এই নেতাদের জিজ্ঞাসা ছিল— সাত দিন আগে বিজেপি সভাপতি অমিত শাহের সভা থেকে এ দিন মানুষ বেশি হয়েছিল কি না? বিজেপির বাড়বাড়ন্তে দ্বিতীয় স্থান ধরে রাখাই এখন বামেদের সামনে চ্যালেঞ্জ।
এগোচ্ছে বাম মিছিল। ছবি: দেশকল্যান চৌধুরী
কিন্তু ভিড় আর ভোট কি এক? ভিড় বাড়ছে। ভোট বাড়ছে কি? ২০০১, ২০০৬ সালে মমতাও কলকাতার বুকে বিরাট বিরাট মিছিল করেছেন। কিন্তু জেতার মতো ভোট কখনও পাননি। কলকাতা জেলা সিপিএমের যুব নেতাদের একাংশ স্বীকার করছেন, তৃণমূল-বিরোধী ভোট ভাগে সুবিধা তৃণমূলেরই। আগামী দিনে কলকাতা পুরভোটে যা দেখা যাবে।
বস্তুত, সাম্প্রদায়িকতা-বিরোধী মিছিলকে সামনে রেখে শহরের বুকে এ দিন বামেরা প্রমাণ করতে চাইল— বিজেপি নয়, তারাই তৃণমূলের প্রধান প্রতিপক্ষ। কিন্তু তৃণমূল শিবিরের একাংশ বামেদের মিছিলের এই বহর দেখে হাসছে। তাদের মতে, এতে তৃণমূল-বিরোধী ভোট ভাগাভাগি হবে। যা শেষ পর্যন্ত তৃণমূলকেই রাজনৈতিক সুবিধা পাইয়ে দেবে।
মহাজাতি সদন থেকে রবীন্দ্র সদন পর্যন্ত মিছিলের নেতৃত্বে বিমান বসু। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক
তৃণমূলই তাঁদের প্রধান প্রতিপক্ষ, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য এ বার্তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন। সাম্প্রদায়িকতা-বিরোধী মিছিল শেষে বিমানবাবুও তৃণমূলকে কড়া আক্রমণ করেন। তিনি বলেন, “তৃণমূল গণতন্ত্রকে ধ্বংস করছে। গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে লড়াই করা যায় না।” তৃণমূলের সভার প্রসঙ্গ তুলে বিমানবাবু বলেন, “আজ একটা দল গাঁধী মূর্তির পাদদেশে সভা করছে। ওখানে মুখ্যমন্ত্রী বক্তৃতা করেছেন। করুন। কিন্তু তার জন্য কেন আমাদের মিছিলকে আটকানো হবে?” মিছিলের শুরুতে এবং যাত্রাপথে বামেদের মিছিল তিন বার আটকায় পুলিশ। আটকানোর কারণ, ধর্মতলায় মুখ্যমন্ত্রীর সভা। পথে যাতে বাম-তৃণমূল কর্মী-সমর্থকরা মুখোমুখি না হন! এ নিয়ে পুলিশের সঙ্গে বাম নেতাদের কথা কাটাকাটিও হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy