জোট-নিজস্বী। সল্টলেকের কর্মিসভায় কংগ্রেস নেতা অরুণাভ ঘোষ ও সিপিএম নেতা গৌতম দেব। রবিবার শৌভিক দে-র তোলা ছবি।
তৃণমূলের বিরুদ্ধে সার্বিক বোঝাপড়া মসৃণ করতে শেষ মুহূর্তে আরও রফাসূত্র তৈরি করল বামফ্রন্ট। লক্ষ্য একটাই। রাজ্যের ২৯৪টি আসনেই বাম, কংগ্রেস-সহ গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ শক্তির তরফে যেন এক জন করেই প্রার্থী ময়দানে থাকেন।
এখনও পর্যন্ত দফায় দফায় বিভিন্ন আসনের প্রার্থী ঘোষণা করেছে বাম ও কংগ্রেস। পূর্ব ঘোষণামতো এখনও শ্রীরামপুর বা চৌরঙ্গির মতো কংগ্রেসের কয়েকটি আসনে প্রার্থী ঘোষণা বাকি। দফায় দফায় ঘোষণা করতে গিয়ে কিছু আসনে দু’পক্ষই প্রার্থী ঘোষণা করে ফেলেছে। যদিও নিচু তলায় দুই শিবিরের কর্মীদের সমঝোতা অনেক মসৃণ। সার্বিক বোঝাপড়া বজায় রাখতে চেয়ে সিপিএমের কৌশল, তৃণমূলের সুবিধা হয়ে যাচ্ছে বুঝলে কোনও এক পক্ষকে শেষ পর্যন্ত লড়াই থেকে সরে দাঁড়াতে হবে। এই লক্ষ্য মাথায় রেখেই বামফ্রন্ট এখন চাইছে এমন রফায় পৌঁছতে, যাতে আদৌ ‘বন্ধুত্বপূর্ণ লড়াই’য়ের জায়গাই না থাকে।
কলকাতায় ঝটিকা সফরে এসে রবিবার সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি তেমন পরামর্শই দিয়ে গিয়েছেন। মুশির্দাবাদের কর্মিসভায় সূর্যকান্ত মিশ্রও সমঝোতা বাড়ানোর উপরেই জোর দিয়েছেন।
বিশদ তালিকা হাতে নিয়ে এ দিন আলিমুদ্দিনে বামফ্রন্টের বৈঠকে কাটাছেঁড়ায় উঠে এসেছে, এখনও পর্যন্ত ২২টি আসন এমন আছে যেখানে বাম ও কংগ্রেসের ঘোষিত প্রার্থী আছে। এর মধ্যে আরএসপি-র ৯টি, সিপিএমের ৭টি, ফরওয়ার্ড ব্লকের ৫টি এবং আরসিপিআইয়ের শান্তিপুর আসন পড়ছে। বোঝাই যাচ্ছে দু’পক্ষই আসনের দাবি ছাড়তে নারাজ বলে কিছু ক্ষেত্রে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। তাই বামফ্রন্টের বৈঠকে ঠিক হয়েছে, তাদের তরফে কংগ্রেসের কাছে আর্জি জানানো হবে, তারা অন্তত ওই আসনগুলির মধ্যে ৫০%-এর দাবি ছেড়ে দিক। তা হলে বামেরাও বাকি অংশে পিছিয়ে আসতে পারবে এবং টানাপড়েনও কেটে যাবে।
বৈঠকের পরে বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু এ দিন বলেছেন, ‘‘আগামী ৪ ও ১১ এপ্রিল যেখানে ভোট আছে, সে সব জায়গায় কোনও সমস্যাই নেই। অন্যত্র এখনও মনোনয়ন জমা দেওয়াই শুরু হয়নি। তাই তাদের মধ্যে কাউকে প্রত্যাহার করা হবে না, এটা এখনই বলারও জায়গা নেই।’’ বিমানবাবু জানিয়েছেন, ধর্মনিরপেক্ষ শক্তির ঐক্যের মধ্যে দিয়ে ‘মানুষের জোট’কে শক্তিশালী করার সব রকম চেষ্টা তাঁরা করছেন। প্রবীণ এই বাম নেতার কথায়, ‘‘আমরা তো একস্তরীয় দল নই! অনেককে নিয়ে চলতে হয়। তাই একটু হলেও সমস্যা এখনও থেকে যাচ্ছে।’’ প্রায় একই সুরে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীও বলেছেন, ‘‘আমরা তো বলেইছি, তৃণমূলকে হারানোই লক্ষ্য। সমঝোতা থাকবে অন্তত ৯৫% আসনে। তেমন হলে বাকি আসনে বন্ধুত্বপূর্ণ লড়াই হতে পারে।’’ অধীরের যুক্তি, দলের কর্মীদের বক্তব্য মাথায় রেখেই কিছু আসন থেকে দাবি প্রত্যাহার করা যাচ্ছে না।
বোঝাপড়ার মাঝে সামান্য সমস্যাও যাতে শাসক দলের সুবিধা করে না দেয়, সে জন্য শেষ লগ্নে এখন চেষ্টা চালাচ্ছে সিপিএম। সেই তাগিদেই কোনও ঘোষিত কর্মসূচি না থাকলেও ভুবনেশ্বর থেকে শনিবার রাতে আলিমুদ্দিনে চলে আসেন ইয়েচুরি। দলীয় মহলে সিপিএমের সাধারণ সম্পাদকের বক্তব্য, যথেষ্ট ধৈর্য দেখিয়ে বোঝাপড়ার ক্ষেত্রে পদক্ষেপ করছে সিপিএম। কংগ্রেসকেও তার সদিচ্ছার পরিধি আরও একটু বাড়াতে হবে। প্রয়োজনে দিল্লিতে রাহুল গাঁধী, অহমেদ পটেল বা সি পি জোশীদের সঙ্গে আবার কথা বলবেন ইয়েচুরি।
সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্রও এ দিন বহরমপুরে কর্মিসভা করার ফাঁকে মুর্শিদাবাদ জেলা নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলেছেন। ‘বন্ধুত্বপূর্ণ লড়াই’য়ের তত্ত্ব থেকে যাতে সিপিএম, বাম শরিক এবং কংগ্রেস— সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকেই নিরস্ত করা যায়, তা দেখার চেষ্টা করছেন সূর্যবাবু। তাঁর স্পষ্ট কথা, ‘‘বোঝাপড়ায় কোনও ঘাটতি আছে বলে আমি মনে করি না। কিন্তু কোথাও যদি দেখা যায় বন্ধুত্বপূর্ণ লড়াইয়ে তৃণমূল এবং বিজেপি-র সুবিধা হচ্ছে, সে ক্ষেত্রে আমাদের কর্মীদের বসে যেতে হবে।’’ কমির্সভার আগে সূর্যবাবু আরও বলেছেন, ‘‘জট তো সব ব্যাপারেই হয়। একটু চিরুনি দিয়ে আঁচড়ালেই ছেড়ে যাবে! এতে দুশ্চিন্তার কারণ নেই। যাঁরা আশায় আশায় দিন গুনছেন কখন জট পাকাবে, তাঁদের হতাশ হতে হবে!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy