কোচবিহারের গোসাঁইহাটে নির্বাচনী জনসভায় সূর্যকান্ত মিশ্র। হিমাংশুরঞ্জন দেবের তোলা ছবি।
ফলাফল ঘোষণার পরে যাতে কোনও তৃণমূল কর্মীর গায়ে আঁচড় না পড়ে সে জন্য কর্মীদের ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে নজর রাখার পরামর্শ দিলেন জোটের নেতা সূর্যকান্ত মিশ্র।
বৃহস্পতিবার শীতলখুচির গোঁসাইয়ের হাট স্কুলের মাঠে জনসভায় যোগ দেন তিনি। ওই সভায় তিনি দাবি করেন, ১৯ মে গণনা শুরু হওয়ার পর থেকেই জানা যাবে তৃণমূল হারছে। ভবানীপুরে মুখ্যমন্ত্রী পিছিয়ে আছেন। তিনি কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, “আপনারা বিজয় মিছিল করবেন। কিন্তু অতি উৎসাহে কোনও ভুল সিদ্ধান্ত নেবেন না। যারা আপনাদের জ্বালিয়েছে, এমনকি ভোটের লাইনেও উত্যক্ত করেছে তাঁদের উপরেও রাগ করে থাকবেন না। মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন তিনি ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে বুঝে নেবেন। আমরা বলছি আপনাদের ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে নজর রাখতে হবে যাতে কোনও তৃণমূল কর্মীর গায়ে কোনও আঁচড় না পড়ে।”
শীতলখুচিতে বাম গণতান্ত্রিক জোটের প্রার্থী নমদীপ্তি অধিকারীর সমর্থনে জনসভায় এ দিন শুরু থেকেই আক্রমনাত্বক ছিলেন সূর্যকান্তবাবু। তিনি দাবি করেন, তৃণমূল ভাঙতে শুরু করেছে। বহু তৃণমূল কর্মী জোটে যোগ দিয়েছে। অনেকেই তৃণমূলের ভিতর থেকেই তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন।
তিনি বলেন, “ভিতর থেকে যারা যোগাযোগ রাখছেন তাঁদের অনেকেই জানতে চেয়েছেন এখনই বেরিয়ে আসবেন কি না। আমি তাঁদেরই সিদ্ধান্ত নিতে বলেছি। অনেকেই ইতিমধ্যে তৃণমূলের ভিতরে থেকেই গণেশ উল্টে দিয়েছেন।” তিনি দাবি করেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভায় এখন আর লোক হচ্ছে না। হেলিকপ্টার দেখতে কিছু লোক ভিড় করছেন। হেলিকপ্টার দেখেই তাঁরা ফিরে যাচ্ছেন। তাঁর দাবি, জোট ২০০ আসনের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করবে। তিনি কটাক্ষ করে বলেন, “আমরা লক্ষ্যমাত্রার কথা বলেছি। মুখ্যমন্ত্রী বিভিন্ন জায়গায় বলছেন তাঁরা ২০০ আসন পেয়ে গিয়েছেন। মেয়ের জন্ম না দিয়েই অন্নপ্রাশন করে ফেললেন।” তৃণমূলের সবাই চোর নয় বলেও তিনি এদিন দাবি করেন। তিনি বলেন, “আমাদের অনেকেই মিছিলে বলেন ওয়ান-টু-থ্রি-ফোর/তৃণমূলের সবাই চোর। এটা বলবেন না। তৃণমূলের সবাই চোর নন। সবাই ঘুষখোর নন। যারা চুরি করেছেন, ঘুষ খেয়েছেন তাঁরা মোটা হয়েছেন। ঠিকমতো চলাফেরা করতে পাচ্ছেন না। বীরভূমের ওই লোকটার মতো।” তাঁর দাবি, এখন নানা ধরনের চুরি হচ্ছে। এক লোহা চোর বিধানসভায় বসে রয়েছেন বলেও তাঁর দাবি। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতর, শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ি উন্নয়ন দফতরেও কোটি কোটিও টাকা দুর্নীতি হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি। এর পরেই সূর্যবাবু হুঁশিয়ারির সুরে বলেন, “কান ধরে টানতে হবে। তাহলেই মাথা আসবে। লক্ষ লক্ষ কোটি কোটি টাকা যা লুঠ হয়ে হয়েছে তা উদ্ধার করা সম্ভব হবে। এটা একমাত্র জোট সরকার পারবে।”
তিনি প্রশ্ন তোলেন, তৃণমূলের যে বিধায়ক, মন্ত্রীরা পাঁচ বছর আগেও লক্ষ টাকার মালিক ছিলেন তাঁরা কোটি কোটি টাকার মালিক হলেন কিভাবে। কৃষক, চা চাষিদের নিয়ে এই সরকার কিছু করেননি বলেও অভিযোগ তুলেছেন তিনি। তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীরও সমালোচনা করেন। কেন ‘চিটফান্ড’ নিয়ে তিনি কিছু করতে পারেননি সে প্রশ্ন তোলেন। বিদেশ থেকে কালো টাকার ফিরিয়ে আনার যে প্রতিশ্রুতি প্রধানমন্ত্রী দিয়েছিলেন তা নিয়েও বিঁধেছেন সূর্যবাবু। তিনি বলেন, “বিদেশ থেকে কালো টাকা আনার বদলে প্রধানমন্ত্রী নিজেই বিদেশে গিয়ে থাকছেন বেশিরভাগ সময়। তাঁর বিমান ভাড়া এখনও পর্যন্ত প্রায় ১৩৭ কোটি টাকা হয়ে গিয়েছে।” সূর্যবাবু কর্মীদের বুথে বুথে থাকার নির্দেশ দেন। সন্ত্রাস বা হামলা হলে সর্বশক্তি দিয়ে তাদের রুখে দেওয়ারও ডাক দেন তিনি।
তিনি বলেন, “হালিশহরের সাড়ে তিন বছরের ওই শিশুটি যাকে তৃণমূল মারধর করেছে, সকাল হলেই আতঙ্কে ওই শিশু তাঁর মায়ের কাছে জানতে চাইছেন আবার মারধর করতে কেউ আসবে না তো? ওই শিশুর মা বলেছেন ‘আমি মরে গেলেও ভোট দেব।’ এই ঘটনার কথা মনে রাখবেন।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy