Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
লোকসভার অঙ্ক বজায় থাকলে স্বস্তি শাসকের

দিদির ভরসা মোদীর ভোট

কার্তিকের শুক্লা দ্বিতীয়া আসতে মেলা দেরি। কোন তারিখ, কী বার পঞ্জিকা না-দেখে বলা যাচ্ছে না। কিন্তু দক্ষিণের হাওয়া বলছে, ভাই এ বছর ফোঁটা পাবেন কিনা, সেটা ঠিক হয়ে যাবে আজই!

প্রস্তুতি। ভবানীপুরে শুক্রবার সুমন বল্লভের তোলা ছবি।

প্রস্তুতি। ভবানীপুরে শুক্রবার সুমন বল্লভের তোলা ছবি।

শঙ্খদীপ দাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০১৬ ০৭:০০
Share: Save:

কার্তিকের শুক্লা দ্বিতীয়া আসতে মেলা দেরি। কোন তারিখ, কী বার পঞ্জিকা না-দেখে বলা যাচ্ছে না। কিন্তু দক্ষিণের হাওয়া বলছে, ভাই এ বছর ফোঁটা পাবেন কিনা, সেটা ঠিক হয়ে যাবে আজই!

কেন?

দক্ষিণ ২৪ পরগনার ৩১টি, কলকাতার ৪টি ও হুগলির ১৮টি আসন মিলিয়ে ষষ্ঠ দফায় মোট ৫৩টি আসনে আজ ভোট। গত লোকসভা ভোটের হিসেব বলছে, জোটের তুলনায় এ তল্লাটে দিদির ভোট বেশি ছিল ৩৯টি আসনে। তবে সেটা খণ্ডচিত্র মাত্র। ছবির বাকি অর্ধেকটা বিজেপি-ময়। সে বার তিন জেলার এই আসনগুলিতে বিপুল ভোট পেয়েছিল বিজেপি। ভবানীপুরে ৩৪ শতাংশ তো শ্রীরামপুরে ৩৩। দিদি-বিরোধী ভোটে নরেন্দ্র মোদী থাবা বসানোয় সুবিধা হয়ে গিয়েছিল তৃণমূলের। এই একই ছবি দেখা গিয়েছে বাম জমানাতেও। বিরোধী ভোট ভাগাভাগির সুযোগ নিয়ে বহু বার বহু আসনে তরে গিয়েছে বামফ্রন্ট। পিছিয়ে গিয়েছে পরিবর্তন। শাসকের ‘যম দুয়ারে কাঁটা’ ফেলতে সেই সূত্র এখনও বাস্তব।

সুতরাং লোকসভা ভোটে বাংলায় যে দাপটের ‘ডেবু ইনিংস’ খেলেছিলেন নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদী, সেই পারফরম্যান্সটাই যদি তিনি আজ ধরে রাখতে পারেন তা হলেই হয়ে উঠবেন দিদির রক্ষাকর্তা। এই সরল পাটিগণিতটা দিদির দলের ভাইদের বিলক্ষণ জানা। তাই রাজ্যে মোদীর প্রতিটি সফর, প্রতিটি বক্তৃতার পরে তাঁরা হাততালি দিয়েছেন অলক্ষে।

বলে রাখা ভাল, আজ যে ৫৩টি আসনে ভোট হবে, তার মধ্যে ৪৬টিই এখন তৃণমূলের দখলে। কিন্তু বিরোধী ভোট এককাট্টা হলে দিদির পায়ের তলার মাটি যে ততটা শক্ত নয়, সেটা বোঝা যায় লোকসভা ভোটের অঙ্কের দিকে নজর রাখলেই। বিজেপি বিপুল ভোট পাওয়া সত্ত্বেও যাদবপুর, বালিগঞ্জ, বন্দর, মেটিয়াবুরুজের মতো আসনে জোট এগিয়ে ছিল দিদির থেকে। বিজেপি কাঁটা না-থাকলে আরও আটটি আসন ছিনিয়ে নিতে পারত তারা। অর্থাৎ মোদী অত ভোট না-টানলে দিদির বিপদ বাড়ত বই কমত না!

প্রশ্ন হল, সেই ইনিংসটাই কি মোদী ফের খেলতে পারবেন?

সিদ্ধার্থনাথ সিংহ বা দিলীপ ঘোষের মতো বিজেপি নেতারা প্রত্যয়ী। যদিও জোটের নেতারা তা মানতে রাজি নন। তাঁদের মতে, ২০১৪-র মতো পিচ আর নেই। বিজেপির ভোট যে তখন দুম করে বেড়ে গিয়েছিল, তার একটা কারণ ছিল দেশ জুড়ে মোদী ঝড়। ‘অচ্ছে দিন’-এর স্বপ্ন দেখেছিলেন মধ্যবিত্ত, বিশেষ করে যুব সম্প্রদায়ের একাংশ। মোদী জাদু দেখাবেন, এই আশায় তাঁরা বিজেপির দিকে ঝুঁকেছিলেন। কিন্তু সমাজের এই অংশ অসহিষ্ণুও বটে। প্রত্যাশাপূরণ না হলে তাঁদের মত ঘুরতে সময় নেয় না। মোদী জমানার দু’বছর পরে বিজেপির প্রতি তাঁদের আস্থা আগের মতো অটুট নেই বলেই রাজনীতিকদের অভিমত।

তা ছাড়া, দিদির বিরুদ্ধে প্রতিবাদী ভোটের একাংশ পেয়েছিলেন মোদী। কারণ, কংগ্রেসের ওপর আস্থা হারিয়েছিলেন কিছু মানুষ। তাঁরা মনে করেছিলেন, মোদীই বুঝি পারবেন দিদিকে পর্যুদস্ত করতে। জোটের নেতাদের মতে, ‘মোদীভাই-দিদিভাই’ আঁতাঁত এই মানুষগুলো নিশ্চয়ই দেখছেন। তার হাতে গরম দৃষ্টান্তও রয়েছে। সারদায় সিবিআই তদন্ত থমকে গিয়েছে। নারদ ভিডিও নিয়ে কেন্দ্র নিজে থেকে কোনও তদন্ত শুরু করেনি। বাংলায় শাসক দলের হাজার দুর্নীতি দেখেও চোখ বুজে রয়েছে দিল্লি। বিজেপি-কে ভোট দেওয়া তাই দিদিকে ভোট দেওয়ারই নামান্তর। তুলনায় দিদির প্রধান প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়িয়েছে ‘মানুষের জোট’। তাই প্রতিবাদীর ভোট প্রতিবাদীর ঘরেই যাওয়ার কথা।

মোদীর সঙ্গে আঁতাঁতের তত্ত্ব যদিও শুক্রবারও উড়িয়ে দিয়েছে তৃণমূল। উড়িয়ে দিচ্ছে বিজেপি-ও। আসলে সংসদে বা দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে তৃণমূলের সমঝোতার ব্যাপারটি যে বাংলায় তাঁদের জন্য নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে, তা ভালমতোই টের পাচ্ছিলেন সিদ্ধার্থনাথ সিংহরা। তাঁদের আশঙ্কা ছিল, এই ছবিটা যত পরিষ্কার হবে, তত ভোট কমবে বিজেপির। সিদ্ধার্থদের অনুরোধে শেষমেশ তাই বাংলায় প্রচারে এসে দিদির ‘পরিবর্তন’ নিয়ে ঝাঁঝালো আক্রমণ করেন প্রধানমন্ত্রী। নারদ-কাণ্ড থেকে সিন্ডিকেটের দুর্নীতি নিয়ে দিদির দলের তীব্র সমালোচনা করেন। সারদা-নারদ-গুড় বাতাসার অভিযোগ নিয়ে ভোট বাজারে ঝাঁপিয়ে পড়েন রূপা-লকেটরাও। ভোট অবাধ করার জন্য তাঁরা কমিশনের ওপর চাপ বাড়ান। যাতে ভোট শতাংশ ২০১৪-র মতোই ধরে রাখা যায়।

তাতে কাজ হলে ভাবনা কমবে দিদিরই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

TMC assembly election 2016
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE