Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
বেশি ভোটের আর্জি শুভেন্দুর

‘যেন বাংলা দাপাতে পারি’

শনিবার নন্দীগ্রামে প্রচারে এসে সে কথাই স্পষ্ট করে দিলেন শুভেন্দু অধিকারী। কর্মিসভায় বললেন, ‘‘আমি আপনাদের বন্ধু, আত্মীয়। আপনাদের কথা দিতে হবে লোকসভার থেকে এ বার আমাকে বেশি ভোট দিতে হবে। যাতে আমি বাংলা দাপাতে পারি।”

-প্রচারে ফাঁকে আদর। নিজস্ব চিত্র।

-প্রচারে ফাঁকে আদর। নিজস্ব চিত্র।

সামসুদ্দিন বিশ্বাস
নন্দীগ্রাম শেষ আপডেট: ০১ মে ২০১৬ ০১:১৮
Share: Save:

জয় নিয়ে মাথাব্যথা নেই। তাঁর লক্ষ্য ব্যবধান।

শনিবার নন্দীগ্রামে প্রচারে এসে সে কথাই স্পষ্ট করে দিলেন শুভেন্দু অধিকারী। কর্মিসভায় বললেন, ‘‘আমি আপনাদের বন্ধু, আত্মীয়। আপনাদের কথা দিতে হবে লোকসভার থেকে এ বার আমাকে বেশি ভোট দিতে হবে। যাতে আমি বাংলা দাপাতে পারি।”

তমলুকের সাংসদ শুভেন্দু এ বার নন্দীগ্রাম বিধানসভা কেন্দ্রে ঘাসফুলের প্রার্থী। রাজ্যে এ বার দলের প্রার্থী হিসেবে প্রথম তাঁর নামই ঘোষণা করেছিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ভোট ঘোষণার ঢের আগে গত ডিসেম্বরে নন্দীগ্রামে সভা করতে গিয়ে মমতা জানিয়ে দিয়েছিলেন, শুভেন্দুকে এ বার এখান থেকে জিতিয়ে মন্ত্রিসভায় নিয়ে যাবেন। সেই প্রসঙ্গ টেনে এ দিন শুভেন্দুও বলেছেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী চান আমি নন্দীগ্রাম থেকে লড়ে তাঁর মন্ত্রিসভার সদস্য হই। নন্দীগ্রামে অনেক কাজ হয়েছে। আরও উন্নয়ন করতে হবে।’’

নন্দীগ্রাম আন্দোলনের হাত ধরেই রাজনীতির দুনিয়ায় শুভেন্দুর উত্থান। তা ছাড়া, তাঁর লোকসভা কেন্দ্র তমলুকের মধ্যেই পড়ে নন্দীগ্রাম বিধানসভা। দু’বারের সাংসদের কাছে নন্দীগ্রামের যুদ্ধক্ষেত্র তাই অচেনা নয়। পার্থক্য শুধু এ বার লড়াইটা লোকসভার নয়, বিধানসভার। তবে এ বার নারদ-কাঁটাও রয়েছে। কারণ, নারদের ভিডিওতে শুভেন্দুকে হাত পেতে টাকা নিতে দেখা গিয়েছে। ভোটে তার প্রভাব পড়বে বলেই বিরোধীদের আশা।

নারদ নিয়ে অবশ্য শুভেন্দুর মুখে কুলুপ। এ দিন প্রচারে এই প্রসঙ্গের ধারপাশ মাড়াননি তিনি। পরে আলাদা করে প্রশ্ন করা হলেও কোনও মন্তব্য করতে চাননি। নন্দীগ্রামে শুভেন্দুর পদযাত্রা বা কর্মিসভাতেও নারদ নিয়ে কোনও প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়নি প্রার্থীকে। উল্টে হাজরাকাটা মোড় থেকে নীলপুর হয়ে মহম্মদপুরের দিকে পদযাত্রা যত এগিয়েছে ততই ধরা পড়েছে স্বতঃস্ফূর্ততার ছবি। পদযাত্রা শেষে মহম্মদপুর বাজার ও নন্দীগ্রামের বিএমটি হাইস্কুলের সভাগৃহে কর্মিসভা করেছেন শুভেন্দু। সেখানেই তাঁকে আরও বেশি ভোটে জেতানোর আর্জি জানিয়েছেন। আব্দারের সুরে বলেছেন, ‘‘আপনারা আমাকে কথা দিন, লোকসভা নির্বাচনে আমাকে যে ভোট দিয়েছিলেন এ বার তাঁর থেকে বেশি ভোটে দিয়ে জেতাবেন।”

২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে নন্দীগ্রাম থেকে তৃণমূলের ফিরোজা বিবি ৪৩,৬৪০ ভোটে জিতেছিলেন। আর ২০১৪-র লোকসভা নির্বাচনে এই কেন্দ্রে শুভেন্দু এগিয়ে ছিলেন ৮৭,৬৮৩ ভোটে। এ বার ঠিক কত ব্যবধানে জয় আশা করছেন? এই প্রশ্নের উত্তরে অবশ্য সরাসরি কিছু বলেননি শুভেন্দু। তাঁর বক্তব্য, ‘‘আমি নন্দীগ্রামের মানুষের কাছে আর্জি জানিয়েছি যাতে তাঁরা আমাকে ভোট দেন। যে সিপিএম গোটা নন্দীগ্রামের বিরুদ্ধে এক সময় যুদ্ধ ঘোষণা করেছিল, তাদের একটাও ভোট নয়, এই আর্জি জানিয়েছি।’’

এ দিন নন্দীগ্রামের বিএমটি হাইস্কুলে শুভেন্দুর কর্মিসভায় তৃণমূলের শ্রমিক, কর্মচারী সংগঠনের সদস্যদের পাশাপাশি বিভিন্ন ক্লাবের প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন। সেখানে শুভেন্দুকেও বলতে শোনা যায়, “ক্লাবের বন্ধুদের বলবো, রাজ্য সরকার গত পাঁচ বছরে ১০ হাজার ক্লাবকে আর্থিক সাহায্য দিয়েছে। আজ যারা ভোট চাইছে, তারা ইমাম ভাতার বিরুদ্ধে হাইকোর্টে গিয়েছে, সিভিক ভলান্টিয়ারদের কাজ বন্ধ করতে হাইকোর্টে গিয়েছে। ক্লাবের টাকা দেওয়ার ক্ষেত্রেও আদালতে গিয়েছে। আদালতে যাওয়ার অধিকার আছে। আমাদেরও মানুষকে পাইয়ে দেওয়ার অধিকার আছে।’’ শুভেন্দু আরও বলেন, ‘‘গত পাঁচ বছরে আমাদের এখানকার বিধায়কের সুপারিশে ৫০টির বেশি ক্লাব রাজ্য সরকারের আর্থিক সাহায্য পেয়েছে। আগামী দিনে এই সংখ্যাটা যাতে দু’শোর উপরে যায় আমি দেখবো।”

এ সব শুনে সরব হচ্ছে বিরোধীরা। নন্দীগ্রামের জোট প্রার্থী সিপিআইয়ের আব্দুল কবীর শেখের অভিযোগ, ‘‘এলাকায় প্রচারে বাধা দেওয়া হচ্ছে, যারা আমাদের এজেন্ট হতে চাইছে তাদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে, ক্লাবগুলিকে নানা টোপ দেওয়া হচ্ছে।’’ ফলে, সুষ্ঠু ভাবে ভোট হবে কিনা, তা নিয়ে সংশয়ে বাম প্রার্থী। নন্দীগ্রামের তৃণমূল নেতা আবু তাহেরের অবশ্য দাবি, ‘‘এ সব অভিযোগ মিথ্যা। উৎসবের মেজাজে মানুষ ভোট দেবেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

assembly election 2016 medinipore shuvendu adhikary
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE