Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
পরে যা হওয়ার হবে, বলে গেলেন বুথফেরতা ভোটার

ঝেঁটিয়ে ভূত ভাগাল পুলিশ

ভূতেরা নয়, এ বার ক্যানিং পূর্বে ভোট দিলেন সাধারণ ভোটারেরাই।নিজের ভোট নিজে দিয়ে তাই অবাক ক্যানিং তামুলডা ১-এর মৌখালি গ্রামের বাসিন্দা অরূপ মণ্ডল। সকাল সাড়ে ৮টা নাগাদ মৌখালি জুনিয়র হাইস্কুলের সামনে বিশাল লাইন দেখে অবাক হয়ে গিয়েছিলেন তিনি।

বাসন্তীর কাঁঠালবেড়িয়ায় গোলমাল ঠেকাতে তৎপর পুলিশ, কেন্দ্রীয় বাহিনী। ছবি:সামসুল হুদা।

বাসন্তীর কাঁঠালবেড়িয়ায় গোলমাল ঠেকাতে তৎপর পুলিশ, কেন্দ্রীয় বাহিনী। ছবি:সামসুল হুদা।

আর্যভট্ট খান
ক্যানিং শেষ আপডেট: ০১ মে ২০১৬ ০৩:০৫
Share: Save:

ভূতেরা নয়, এ বার ক্যানিং পূর্বে ভোট দিলেন সাধারণ ভোটারেরাই।

নিজের ভোট নিজে দিয়ে তাই অবাক ক্যানিং তামুলডা ১-এর মৌখালি গ্রামের বাসিন্দা অরূপ মণ্ডল। সকাল সাড়ে ৮টা নাগাদ মৌখালি জুনিয়র হাইস্কুলের সামনে বিশাল লাইন দেখে অবাক হয়ে গিয়েছিলেন তিনি। নিজে ভোট দিয়ে বেরিয়ে এসে তিনি বললেন, ‘‘এত বড় লাইন তো এখানে আগে কখনও দেখিনি।’’ অরূপবাবু গতবার লোকসভা ভোটে নিজের ভোট নিজে দিতেই পারেননি। সকাল ১১টা বুথে এসে দেখেন, ভোট ততক্ষণে শেষ হয়ে গিয়েছে। এ বার কিন্তু লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে নিজের ভোট নিজে দিলেন।

অরূপ একা নন, ওই স্কুলে লাইনে দাঁড়ানো মানুষজন নিজেদের ভোটারকার্ড দেখিয়ে জানালেন, গত লোকসভা ভোটে শাসক দলের হুমকির ভয়ে অনেকেই গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করতে পারেননি। অভিযোগ, অবাধে চলেছে ছাপ্পা ভোট। এ বার অবশ্য উল্টো চিত্র।

গত লোকসভা ভোটে যে এ সব বুথে যে ভূতের উপদ্রব ছিল, তা ভোটের ফল বেরোনোর পরে কয়েকটা পরিসংখ্যান থেকেই স্পষ্ট। জীবনতলার মৌখালি জুনিয়র হাইস্কুলের ২২১ নম্বর বুথে দেখা যায়, এই বুথে তৃণমূল পেয়েছে ৬৫১টি ভোট, সিপিএম পেয়েছে মাত্র ২টি ভোট। কংগ্রেস পেয়েছে সাকুল্যে ৩টি!

এই স্কুলের পাশের ২২৪ নম্বর বুথে তৃণমূল পেয়েছিল ৮৫২টি ভোট। সিপিএম পেয়েছিল ১৫টি। কংগ্রেসের নামে ভোট পড়েছিল মাত্র ৫টি।

জীবনতলার মঠেরদিঘি এলাকার ২২৪ নম্বর বুথে তৃণমূল পেয়েছিল ৯১০টি ভোট। সিপিএমের দৌড় থেমেছিল ৩টি ভোট পেয়ে!

ক্যানিং পূর্বের গোবিন্দনগর গ্রামের বাসিন্দা অরিন্দম মল্লিক সিপিএম করেন। তাঁর বাবা অমল মল্লিক পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য। অরিন্দমবাবু বলেন, ‘‘গতবারের লোকসভার ওই সব বুথে এই ফল কখনও সম্ভব? ওই বুথগুলির পরিসংখ্যান দেখেই বুঝতে পারছেন, কেমন ছিল ভূতের তাণ্ডব।’’ অরিন্দমবাবুর কথায়, ‘‘আমি এজেন্ট হতে চেয়েছিলাম বলে আমাদের বাড়িতে ভাঙচুর চালানো হয়। এ বারও সেই হুমকি এসেছিল। কিন্তু আমরা বলেছি, যেনতেন ভাবে বুথ পর্যন্ত পৌঁছতেই হবে। তারপর আর ভয় নেই।’’ কেন? জবাব মেলে, ‘‘এ বার কেন্দ্রীয় বাহিনী, পুলিশ অনেক বেশি তৎপর।’’

সব দেখেশুনে উল্টো সুর শোনা যাচ্ছে ঘাসফুল শিবিরের নেতাদের মুখেও। তৃণমূল প্রার্থী সওকত মোল্লা বলেন, ‘‘জীবনতলায় কেন্দ্রীয় বাহিনী অযথা দাপাদাপি করেছে। আমাদের তিন এজেন্টকে কারণ ছাড়াই মারধর করে মাথা ফাটিয়ে দিয়েছে। আমরা কেন্দ্রীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছি।’’

সওকত সাহেব যাই বলুন না কেন, সাধারণ মানুষ কিন্তু বাহিনীর ভূমিকার তারিফ করছেন খোলা মনে। এমনকী, বিরোধী দলের ক্ষেত্রেও পুলিশ-বাহিনী একই রকম কড়া আচরণ করেছে। যা দেখে আরওই থতমত খেয়ে গিয়েছে শাসক শিবির।

জীবনতলার সারাঙ্গাবাদ ২ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গলির সামনে দাঁড়িয়েছিলেন তৃণমূলের বুথ কমিটির সভাপতি নাসিরুদ্দিন নস্কর। ভোট দিতে আসা কয়েকজন কর্তব্যরত জওয়ান অভিযোগ করেন, নাসিরুদ্দিন তাঁদেরকে ইশারায় দু’টি আঙুল দেখিয়ে দু’নম্বর বোতাম টেপার জন্য বলছেন। কারণ, ইভিএমে দু’নম্বরে রয়েছে তৃণমূল প্রার্থীর নাম। এই অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে কেন্দ্রীয় বাহিনী নাসিরুদ্দিনকে ওই চত্বর থেকে বের করে দেয়। নাসিরুদ্দিন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, ‘‘আমি মোটেই গোলমাল পাকাতে আসিনি। ভোট কেমন হচ্ছে দেখতে এসেই এই হয়রানি।’’

সিপিএম প্রার্থী আজিজুর রহমান মোল্লার অবশ্য দাবি, ‘‘ওঁরা স্রেফ ভোট দেখতে এসেছেন, এই যুক্তিটা মানা যাচ্ছে না। এসেছিল ভোটারদের ভয় দেখাতে।’’ তাঁর আরও অভিযোগ, তৃণমূলের বাহিনী গত কয়েক দিন ধরে গ্রামে গ্রামে গিয়ে ভোটারদের বলেছে, কেন্দ্রীয় বাহিনী তো দু’দিনের অতিথি। তারপর কী হবে?’’ ভোটাররা অবশ্য এ দিন বুঝিয়ে দিয়েছেন, পরে যা হওয়ার হবে, ভোট তাঁরা দেবেনই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

assembly election 2016 central forces
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE