মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশ ছিল, সিপিএমকে মাটিতে মিশিয়ে দিতে হবে। কিন্তু সিপিএম নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে নিজে থেকেই মাটির তলায় (আন্ডারগ্রাউন্ড) চলে গিয়েছিল। আনন্দবাজার ওয়েবসাইটের জন্য অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে অনেকটা এমনই বললেন মহম্মদ সেলিম। সিপিএম নেতার দাবি, ঝান্ডা লুকিয়ে লড়েছেন কমরেডরা। তাই কাদের শেষ করবেন, খুঁজেই পাননি মমতা।
হাওয়া উঠেছে বাম-কংগ্রেস জোটের পক্ষে। দাবি জোট নেতাদের। তৃণমূল নেতারা বলছেন, তর্কের খাতিরে যদি মেনেও নেওয়া হয় যে হাওয়া উঠেছে, তা হলেও কি তৃণমূলকে হারানো সম্ভব জোটের পক্ষে? শুধু হাওয়ায় কি ভোট হয়? সংগঠন দরকার হয় না? সেলিম মানলেন, সংগঠন ছাড়া ভোট হয় না। কিন্তু সিপিএমের সংগঠন আর নেই, এ কথা নস্যাৎ করে দিলেন দলের পলিটব্যুরো সদস্য। তাঁর দাবি, ইচ্ছাকৃতই সংগঠন বা জনভিত্তিকে দৃষ্টির বাইরে নিয়ে গিয়েছিল সিপিএম। কারণ? মহম্মদ সেলিমের কথায়, ‘‘বাস্তবতার নিরিখে আমাদের বিভিন্ন সময় বিভিন্ন নীতি নিতে হয়। যেখানে ঝান্ডা লাগাতে গেলে ঘর বা দোকান পুড়িয়ে দেবে, ভেঙে দেবে, বাড়িছাড়া করে দেবে, জরিমানা করবে, মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে দেবে, যেখানে বাড়িতে ঢুকে রেপ করে দেব বলে হুমকি দেবে, সেখানে কৌশলগতভাবেই আমাকে বলতে হবে, ঝান্ডা লাগিও না। আমাকে দেখতে হবে, তাঁর হৃদয়ে, তাঁর মগজে সিপিএম রইল কি না।’’
সিপিএম-এর এই কৌশল কি আদৌ সফল হয়েছে? সত্যিই কি টিকিয়ে রাখা গিয়েছে সংগঠন? সেলিম বললেন, ‘‘হ্যাটস্ অফ টু মাই কমরেডস। তাঁরা কিন্তু বামপন্থায় বিশ্বাসী মানুষের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে গিয়েছেন। যে এলাকাকে দেখে আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে সিপিএম নেই, সেখানেও কিন্তু সিপিএম রয়েছে। প্রকাশ্যে নয়। কিছুটা গোপনে সবাই যোগাযোগ রেখে গিয়েছেন নিজেদের মধ্যে। কোথাও হয়তো বাম সমর্থক ঘরছাড়া। কিন্তু ঘরছাড়া থেকেও তিনি সিপিএমের সঙ্গে যোগাযোগটা রেখেছেন, সিপিএম-ও চেষ্টা করেছে সব সময় তাঁর সঙ্গে যোগাযোগটা রাখতে।’’
দেখুন ভিডিও:
জনভিত্তি ধরে রাখার জন্য গোপনে যোগাযোগ রাখার এই প্রক্রিয়া শুধু মাত্র দলের সাংগঠনিক কাঠামোর মাধ্যমে হয়নি। জানালেন লোকসভায় সিপিএমের দলনেতা। বললেন, ‘‘শুধু জেলা কমিটি, জোন কমিটি, লোকাল কমিটির মাধ্যমে কিন্তু এই যোগাযোগ রক্ষার কাজটা সম্ভব হয়নি। তার বাইরে একটা বিকল্প নেটওয়ার্ক আমরা গড়ে তুলেছিলাম। সেই নেটওয়ার্কই সবাইকে এক সূত্রে গেঁথে রেখেছিল।’’ অর্থাৎ, দলের নিজস্ব কাঠামোর মাধ্যমে যোগাযোগ রাখতে গেলে, শাসক সহজেই চিহ্নিত করে ফেলত, ঠিক কারা কারা এখনও রয়েছেন বামেদের দিকে। সেই সুযোগ না দিয়ে বিকল্প নেটওয়ার্ক কাজে লাগানো হয়েছে, যে নেটওয়ার্ককে আপাতদৃষ্টিতে অরাজনৈতিকও মনে হতে পারে।
আরও পড়ুন:
মমতার বদলে ‘ভাইপো’! কী বলতে চাইলেন সেলিম?
নির্বাচনের আগে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট হয়েছে বামেদের। বিভিন্ন মাধ্যম থেকে খবর এসেছে, হাওয়া লাগছে জোটের পালে। সেই আঁচ পেয়েই আবার হই হই করে সবাই প্রকাশ্যে। দাবি সেলিমের। হাসি চওড়া করে সিপিএম সাংসদের উচ্চারণ, ‘‘এ বার তোর মরা গাঙে বান এসেছে, জয় মা বলে ভাসা তরী।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy