আর শুধু রাতটুকুর অপেক্ষা। ৫ মে পঞ্চম দফা তথা ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের শেষ ধাপ। তাই পূর্ব মেদিনীপুরের শেষ প্রচার সেরে ফেললেন সব দলের নেতা-নেত্রীরা।
মঙ্গলবার সকালে হলদিয়া টাউনশিপে স্ত্রী নয়না বন্দ্যোপাধ্যায়কে সঙ্গে নিয়ে দলীয় প্রার্থী মধুরিমা মণ্ডলের সমর্থনে প্রচারে যান সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়ে এ দিন সূদীপ বলেন, ‘‘আমরা কমিশন সম্পর্কে সরাসরি অভিযোগ করতে চাই না। কোথাও কোথাও বাড়াবাড়ি হচ্ছে মানুষ অভিযোগ করছেন। অভিযোগগুলি আমরা মাথায় রাখছি।’’
এ দিন তিনি নির্বাচন কমিশনের দায়বদ্ধতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। তাঁর কথায়, ‘‘কমিশন তো অনেকের খুঁত ধরছে। কিন্তু নির্বাচন কমিশনের দায়বদ্ধতা কার কাছে? তাঁদের সম্বন্ধে অভিযোগ করার কি কোনও স্থান আছে? জানার জন্য লোকসভাতে প্রশ্ন করব। তারা কার কাছ দায়বদ্ধ তা জানার জন্য লোকসভায় বিভিন্ন দলের সঙ্গে আলোচনা করব।”
কেন্দ্রীয় বাহিনী সম্পর্কে সুদীপবাবু বলেন,“মমতা বন্দোপাধ্যায় প্রথম যখন লড়াই শুরু করেছিলেন, তখন থেকেই চেয়েছিলেন কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে ভোট হোক। সিপিএম আমলে তো কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে ভোট হয়নি। এই ধরনের ভোট হলে সিপিএমকে ৩৪ বছর নয়, ১৭বছরও বাংলায় রাজত্ব করতে হত না।’’
নারদ-সারদা নিয়ে তাঁর বক্তব্য, ‘‘ সারদা তো মানুষ ভুলেই গিয়েছিল। চার্জশিট পেশ হয়ে গেল। কিছুই তো পাওয়া যায়নি। নারদারও যখন বিচার হবে তখন দেখা যাবে।’’ অধীর চৌধুরী প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘একসময় ওকে রাজনীতিতে এনেছিলাম। ওকে ভালো করে চিনি ও আমাকে শ্রদ্ধা করে। নিজের জেলাকে বাঁচাতে যেভাবে কংগ্রেসের কাছে বিক্রি করে দিল তার জন্য বাংলার মানুষ ধিক্কার দেবে।’’ এমনকী বাবুল সুপ্রিয়কে গানের জগতে ফিরে যাওয়ার পরামর্শও দেন তিনি।
এ দিন ভগবানপুরে ভোটের প্রচারে ছিলেন অধীর চৌধুরীও। তৃণমূলকে বিঁধে তিনি বলেন, ‘‘আগামী ১৯মে-র পর রাজ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আর মুখ্যমন্ত্রী থাকছেন না। রাজ্যে বাম কংগ্রেস বিরোধী জোটের নতুন সরকার গঠন হবে। এটা বুঝতে পেরেছেন মুখ্যমন্ত্রী নিজেই। তাই তিনি পুলিশের দায়িত্বশীল কাজের প্রতিও আস্থা হারিয়ে নিজেই পুলিশকেই হুমকি দিতে শুরু করেছেন।’’ তাঁর অভিযোগ, ভগবানপুর কেন্দ্রের অর্জুনগড়, বরোজ, কায়েমগেড়িয়াতে মানুষ ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের কর্মীদের উপর সন্ত্রাস তৈরি করে মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নিয়ে ভোটে জিততে চাইছে তৃণমূল। সভায় অধীর চৌধুরী ছাড়া প্রার্থী হিমাংশু শেখর মহাপাত্র বক্তব্য রাখেন। অর্জুননগরের আগে মুগবেড়িয়াতে বিরোধী জোটের কংগ্রেস প্রার্থী হিমাংশু শেখর মহাপাত্রের সমর্থনে একটি পদযাত্রাতেও যোগ দেন অধীর। ছিলেন সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য সুব্রত মহাপাত্র, বিষ্ণুহরি মান্না, কংগ্রেসের ব্লক সভাপতি গোষ্ঠবিহারী দাস প্রমুখ।
উন্নয়নের কথা বলে ভোট চাইলেন রাজ্য যুব তৃণমূল সভাপতি অভিষেক বন্দোপাধ্যায়। মঙ্গলবার দুপুরে মহিষাদলের কাপাসেড়িয়ায় দলীয় প্রার্থীর সমর্থনে এক সভায় এসে অভিষেক বলেন, “গত ৫ বছরে আমরা যা উন্নয়ন করেছি বামেরা ৩৪ বছরে তার ১০শতাংশ কাজ দেখাতে পারলে আমি রাজনীতির আঙিনায় আসব না।’’ আর তৃণমূল নয়,সিপিএমকে ভোট দিতে বলবো।ওরা আমাদের পাচ বছরের কাজের ১০শতাংশের হিসাব দিতে পারবেনা।” রাহুল গাঁধীকে কটাক্ষ করে বলেন, “পার্ক সার্কাসের সভায় দেখলাম বুদ্ধবাবু ও রাহুল গাঁধীকে রজনীগন্ধা ফুলেয়র একই মালায় বরণ করে নেওয়া হল। সাধারনত দেহত্যাগ করলে মানুষ সাদা ফুল ব্যবহার করেন। তাঁদের দলের কর্মীরা সাদা ফুল দিয়ে বরণ করে বুঝিয়ে দিলেন সিপিএম-কংগ্রেস এ রাজ্য থেকে দেহত্যাগ করেছে।” এদিনের সভাতে অভিষেক ছাড়াও ইন্দ্রনীল সেন, প্রার্থী সুদর্শন ঘোষদস্তিদার প্রমুখ হাজির ছিলেন।
অন্যদিকে এ দিনই হলদিয়ার ভবানীপুরের দলীয় সভায় কংগ্রেস সিপিএম নেতাদের কটাক্ষ করে মকুল রায় বলেন,“মানস ভুঁইয়া মঙ্গলকোটে ধুতি হাতে করে দৌড়াচ্ছিলেন। ১৯ তারিখ ফল বেরনোর পর মানস বাবুর সঙ্গে অনেকেও ওভাবে ছুটবেন।’’
এ দিন দক্ষিণ ও উত্তর কাঁথির কেন্দ্রের দুই তৃনমূল প্রার্থী দিব্যেন্দু অধিকারী ও বনশ্রী মাইতির সমর্থনে কাঁথির দারুয়া মাঠে এক নিবার্চনী সভা হয়। বক্তা ছিলেন কাঁথির সাংসদ শিশির অধিকারী। এছাড়াও সভায় উপস্থিত ছিলেন সাংসদ শতাব্দী রায়, হিরণ, ঋত্বিকা প্রমুখ। সভার আগে শহরের আউটডোর হাসপাতালের সামনে থেকে একটি বিশাল মিছিলসভাস্থল পর্যন্ত যায়। খেজুরিতে বিরোধী জোটের প্রার্থী অসীম মণ্ডলে সমর্থনে ঘোলাবাড় থেকে হেঁড়িয়া পর্যন্ত মিছিল হয়। ছিলেন অধীর চৌধুরী, সিপিএম নেতা রবীন দেব ও বাদশা মৈত্র যোগ দেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy