কে জিতবে কে জানে! কাটোয়ায় সব দলের প্রতীক এঁকেই বিকোচ্ছে কেক (উপরে)। জোরকদমে প্রস্তুতি চলছে বর্ধমানের ইউআইটি ভবনেও। ছবি: অসিত বন্দ্যোপাধ্যায় ও উদিত সিংহ।
আসব আসব করে এসেই গেল দিনটা।
জেলার আকাশে শুধুই সবুজ আবির উড়বে না কি লাল-সবুজ, জানা যাবে আজই। আত্মবিশ্বাসী শাসক শিবির ইতিমধ্যে আবির, মিষ্টির অর্ডার দিয়েছে। পিছিয়ে নেই বিরোধী শিবিরও। গত বিধানসভা ভোটে লালদুর্গে ধস নামিয়ে এই শিল্পাঞ্চলের কার্যত দখল নিয়েছিল ঘাসফুল। জেলার ২৫টি আসনের মধ্যে ১৫টি গিয়েছিল তৃণমূলের দখলে। কংগ্রেস একটি ও বামেরা ৯টিতে জিতেছিল। লোকসভা ভোটে জেলার বাকি অংশে তৃণমূলের দাপট আরও বাড়লেও আসানসোলে বয়ে গিয়েছিল গেরুয়া-ঝড়। পাঁচটি বিধানসভা এলাকায় বাম ও তৃণমূলকে পেছনে ফেলে দিয়েছিল তারা। গত বছর পুরভোটে আসানসোলে তৃণমূলের দাপট ফিরলেও দু’বছর আগের লোকসভা ভোটের স্মৃতি মনে করিয়ে এ বার সেখানে লড়াইয়ে থাকার ইঙ্গিত দিয়েছে বিজেপিও।
আজ, বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে ভোটগণনা শুরু হবে। বর্ধমানের ইউআইটি ভবনে গণনা হবে আটটি কেন্দ্রের— খণ্ডঘোষ, বর্ধমান দক্ষিণ, রায়না, জামালপুর, মেমারি, বর্ধমান উত্তর, ভাতার ও আউশগ্রাম। রাউন্ডের সংখ্যা ২১ থেকে ২৯-এর মধ্যে। কালনা কলেজে কালনা, পূর্বস্থলী উত্তর ও দক্ষিণ এবং মন্তেশ্বর কেন্দ্রের ভোট গণনা হবে। পূর্বস্থলী উত্তর ১৭ রাউন্ড ও বাকিগুলিতে ১৮ রাউন্ড করে গণনা হবে। কাটোয়া কলেজে গণনা হবে কাটোয়া, কেতুগ্রাম ও মঙ্গলকোট কেন্দ্রের। মহকুমা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, তিনটি কেন্দ্রেরই ১৫ রাউন্ড করে গণনা হবে। কাটোয়া কলেজের এক দিকে মিউনিসিপ্যালিটি মোড় ও অন্য দিকে ঝুপোকালীতলা পর্যন্ত পুলিশ পিকেট থাকবে। ক্যুইক রেসপন্স টিমও রাখা হয়েছে।
শিল্পাঞ্চলের ৯টি আসন এবং গলসি কেন্দ্রের ভোটগণনা হবে আসানসোল ও দুর্গাপুরে। আসানসোলের সেন্ট ভিনসেন্ট স্কুল ও দুর্গাপুর গভর্নমেন্ট স্কুলে গণনাকেন্দ্র হয়েছে। আসানসোলে গণনা হবে আসানসোল উত্তর ও দক্ষিণ, বারাবনি, জামুড়িয়া ও কুলটি কেন্দ্রের ভোট। মহকুমা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, এ বার প্রতিটি বিধানসভা কেন্দ্রের জন্য গণনার ঘর ও টেবিলের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। প্রতিটি কেন্দ্রের জন্য দু’টি করে ঘর থাকছে। আসানসোল উত্তর ও দক্ষিণ কেন্দ্রের জন্য ২৪টি করে গণনার টেবিল থাকছে। সর্বাধিক ১২ রাউন্ড হবে। কুলটি, বারাবনি ও জামুড়িয়ার প্রত্যেকটির জন্য ২০টি করে টেবিল থাকছে। সেগুলির গণনা ১৩ রাউন্ডের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে বলে মনে করছে প্রশাসন।
দুর্গাপুর পূর্ব ও পশ্চিম, পাণ্ডবেশ্বর, গলসি ও রানিগঞ্জ— এই পাঁচটি বিধানসভা কেন্দ্রের ভোট গণনা হবে দুর্গাপুর গভর্নমেন্ট কলেজে। পাণ্ডবেশ্বর বাদে বাকি চার কেন্দ্রের জন্য দু’টি করে ঘরের ব্যবস্থা হয়েছে। দুর্গাপুর পূর্ব ও গলসি ১৫ রাউন্ড, পাণ্ডবেশ্বর ও রানিগঞ্জ ১৪ রাউন্ড ও দুর্গাপুর পশ্চিমের গণনা ১৩ রাউন্ডে শেষ হবে। কমিশন সূত্রে জানা গিয়েছে, সকাল ৮টার মধ্যে যাবতীয় প্রস্তুতি শেষ করে শুরু হয়ে যাবে পোস্টাল ব্যালট গণনার কাজ। সেই সঙ্গে চলবে ইভিএমের গণনাও। পুরো প্রক্রিয়া ভিডিওগ্রাফি করা হবে। এছাড়া সিসি ক্যামেরায় নজরদারি চলবে রিটার্নিং অফিসার ও সহকারী রিটার্নিং অফিসারের ঘরে।
প্রতি বিধানসভা কেন্দ্রের গণনার ঘরে এক জন করে নির্বাচনী পর্যবেক্ষক থাকবেন। গণনার কাজ করবেন শুধু সরকারি কর্মীরাই। প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, এ বার গণনাকেন্দ্রে ত্রিস্তর নিরাপত্তা বলয় থাকছে। প্রথম স্তরে থাকবেন সাধারণ পুলিশকর্মীরা। দ্বিতীয় স্তরে সশস্ত্র পুলিশকর্মী ও শেষ স্তরে কেন্দ্রীয় বাহিনী। আসানসোলের কেন্দ্রে সাড়ে পাঁচশো পুলিশকর্মী ও এক কম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকবে। সকাল ৫টা থেকে এসবি গড়াই রোডে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হবে। দুর্গাপুরের কেন্দ্রে রাজ্য পুলিশের সাড়ে তিনশো জন ও কেন্দ্রীয় বাহিনীর একশো জওয়ান থাকবেন। গণনাকেন্দ্রের একশো মিটারের মধ্যে ১৪৪ ধারা জারি থাকবে। বর্ধমানের জেলাশাসক সৌমিত্র মোহন বুধবার বলেন, ‘‘ত্রিস্তর নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকছে। জেলায় ৬ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী গণনা কেন্দ্রে মজুত থাকছে। ফল বেরনোর পরে সাত দিন যেন কোনও রকম মিছিল না করা হয়, সে জন্য নির্দেশ জারি করা হয়েছে।’’
দুপুরের মধ্যে গণনা শেষ হয়ে যাবে বলে আশা করছে প্রশাসন। প্রহর গোনার পালা তাই শেষ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy