Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

রায়ের পরে মার

ভোট পরবর্তী সমীক্ষায় ক্ষমতায় ফেরার ইঙ্গিত মিলতেই বিরোধীদের উপরে হামলার অভিযোগ উঠেছিল শাসক দলের বিরুদ্ধে। বৃহস্পতিবার ফল প্রকাশের পরেও সেই রেশ চলল। কোথাও বিরোধীরা, কোথাও আবার তৃণমূলের হাতে আক্রান্ত হলেন দলের কর্মীরাই।

মেমারিতে বিরোধী কার্যালয়ে ভাঙচুর। ছবি: উদিত সিংহ।

মেমারিতে বিরোধী কার্যালয়ে ভাঙচুর। ছবি: উদিত সিংহ।

সৌমেন দত্ত ও সুশান্ত বণিক
বর্ধমান শেষ আপডেট: ২০ মে ২০১৬ ০১:৫৩
Share: Save:

ভোট পরবর্তী সমীক্ষায় ক্ষমতায় ফেরার ইঙ্গিত মিলতেই বিরোধীদের উপরে হামলার অভিযোগ উঠেছিল শাসক দলের বিরুদ্ধে। বৃহস্পতিবার ফল প্রকাশের পরেও সেই রেশ চলল। কোথাও বিরোধীরা, কোথাও আবার তৃণমূলের হাতে আক্রান্ত হলেন দলের কর্মীরাই।

প্রথম ঘটনা আসানসোলে। দুপুর সওয়া ১২টা নাগাদ আসানসোল উত্তরের তৃণমূল প্রার্থী মলয় ঘটকের বড় ব্যবধানে এগিয়ে থাকার খবর মিলতেই হামলা শুরু হয় বলে অভিযোগ সিপিএমের। তাদের দাবি, আইএনটিটিইউসি অনুমোদিত পরিবহণ কর্মীদের সংগঠনের সদস্যরা আসানসোল সিটি বাসস্ট্যান্ডে সিটু-র সাংগঠনিক অফিসে চড়াও হয়। কার্যালয়ে আইএনটিটিইউসি-র পতাকা উড়িয়ে দেওয়া হয়। যদিও আইএনটিটিইউসি অনুমোদিত মোটর ট্রান্সপোর্ট ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের নেতা রাজু অহলুওয়ালিয়ার বক্তব্য, ‘‘সংগঠনের সদস্যরা নন, পরিবহণ কর্মীরা ভাঙচুর চালিয়েছেন। তাঁরাই কার্যালয় দখল নিয়েছেন।’’

আসানসোলের শ্রীপল্লিতেও সিপিএমের একটি আঞ্চলিক অফিসে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। সিপিএমের বর্ধমান জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য পার্থ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘রায় ঘোষণার পরেই এক দল অত্যুৎসাহী আমাদের কার্যালয়ে ভাঙচুর চালান। এটা আসানসোলের সংস্কৃতি নয়। তৃণমূল নেতৃত্বের কাছে ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদন জানিয়েছি।’’ তৃণমূল নেতৃত্বের তরফে যদিও দাবি করা হয়েছে, ওই সময় তাঁদের দলের নেতা-কর্মীরা গণনাকেন্দ্রে ছিলেন।

বারাবনি ও কুলটিতেও বামেদের কার্যালয়ে ভাঙচুর ও পতাকা ছিঁড়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। বারাবনির পাঁচগাছিয়ার ভুরাডাঙা আঞ্চলিক অফিসে ভাঙচুর চালানো হয় বলে অভিযোগ। ভাঙচুরের অভিযোগ স্বীকার করে তৃণমূল নেতা পাপ্পু উপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘খবর পাওয়া মাত্রই এলাকায় গিয়েছি। উন্মত্ত জনতাকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।’’ বিকেল ৪টে নাগাদ কুলটির রামনগরের সিটু অনুমোদিত কোলিয়ারি শ্রমিক সংগঠনের কার্যালয়েও ভাঙচুর চলে। সংগঠনের তরফে সুজিত ভট্টাচার্যের অভিযোগ, ‘‘প্রচুর নথি নষ্ট করে অফিসে তালা ঝোলানো হয়েছে।’’

‘ভোটের হানা’ থেকে বাদ পড়েনি দুর্গাপুর, কাঁকসাও। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বিকেলে পানাগড় গ্রামে বিজয় উল্লাসকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ বাধে তৃণমূল-সিপিএমে। ভাঙচুর চলে দু’টি বাড়িতে। পুলিশ জানিয়েছে, দু’পক্ষের চার জন জখম হয়েছেন। বনকাটি, দুর্গাপুরের বেনাচিতি, কালীগঞ্জ এলাকাতেও দলীয় কর্মী-সমর্থকদের বাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ সিপিএমের। কালীগঞ্জে তাদের একটি কার্যালয়ে ভাঙচুর চালানো হয়েছে বলেও বাম নেতাদের দাবি।

সন্ধে গড়াতে সামনে আসে গ্রামীণ এলাকার নানা গোলমালও। মাধবডিহির কামালবেড়িয়ায় সিপিএমের প্রাক্তন জেলা সভাধিপতি উদয় সরকার ও মেমারির পাল্লা রোডে সিপিএমের এক প্রাক্তন পঞ্চায়েত সদস্যের বাড়িতে হামলা চালানোর অভিযোগ ওঠে। রায়নার বহরমপুর, দলুইবাজার, চাঁদপুর, বৈদ্যডাঙা, রাজপুর, আউশগ্রামের অমরপুর, বর্ধমানেক কাঞ্চননগর, বর্ধমান শহর, ভাতার, মঙ্গলকোট, কেতুগ্রামের বিভিন্ন এলাকা থেকেও গোলমালের খবর মেলে। বর্ধমানের ছোট বেলুনে সিপিএম-তৃণমূলের সংঘর্ষ চলাকালীন পুলিশের গাড়িতে ভাঙচুর হয়। ভাতারের মোহনপুর গ্রামে সিপিএম-তৃণমূল সংঘর্ষ থামাতে গিয়েও এক পুলিশকর্মী জখম হন বলে জানা গিয়েছে। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের বাম কর্মচারী ইউনিয়নের অফিসেও ভাঙচুর চলে।

সিপিএম নেতা বংশগোপাল চৌধুরীর অভিযোগ, ‘‘জেলার বিভিন্ন জায়গায় একের পর এক হামলা, ভাঙচুর চলছে। সরকার গড়ার রায় পেয়ে এমন হামলা কাঙ্খিত নয়।’’ যদিও তৃণমূল নেতা মলয়বাবুর দাবি, ‘‘গত পাঁচ বছরে কোনও সিপিএম কর্মীর গায়ে আঁচড় পড়েনি। এ বারেও তা হবে না।’’

তবে শুধু বিরোধীরাই নয়, তৃণমূলের হামলা থেকে রেয়াত মেলেনি দলের কর্মীদেরও। গণনা চলাকালীন ভিড়িঙ্গিতে দলীয় কার্যালয়ের ভিতরেই নিজেদের তিন কর্মীকে মারধরের অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। তিন জনকেই দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। হাসপাতালের বেডে শুয়ে সুমন নায়েক নামে এক তৃণমূল সমর্থক বলেন, ‘‘আচমকা দেখি দাদাকে মারধর করছে দলের লোকেরা। দাদাকে বাঁচাতে গেলে আমাকেও রড-লাঠি দিয়ে মারধর করা হয়।’’ তৃণমূল সূত্রে খবর, দুর্গাপুরের দু’টি কেন্দ্রেই আশানুরূপ না হওয়ায় তেতে ছিলেন দলের কর্মীরা। আচমকা বচসা শুরু হয়। দলের কর্মীদের হাতে আক্রান্ত হওয়ার অভিযোগ উঠেছে কালনার সুলতানপুরেও। সাদেক শেখ নামে এক তৃণমূল কর্মী অভিযোগ করেন, দলের কর্মীদের একাংশ তাঁর বাড়িতে ভাঙচুর চালিয়েছে। তছনছ করা হয়েছে ঘরের আসবাবপত্রও। যদিও দলের দুর্গাপুর জেলা শিল্পাঞ্চল সভাপতি উত্তম মুখোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘দলের কোনও কর্মী আক্রান্ত হয়েছেন, এমন খবর মেলেনি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

assembly election 2016
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE