Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

পাঁচ বছরেই দুর্গাপুর হাতছাড়া তৃণমূলের

পাঁচ বছরেই পাল্টে গেল পাশা। দুর্গাপুর হাতছাড়া হয়ে গেল তৃণমূলের। গত বিধানসভা ভোটে দুর্গাপুর পূর্বে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট বেঁধে তৃণমূল প্রার্থী নিখিল বন্দ্যোপাধ্যায় পেয়েছিলেন ৫১ শতাংশ ভোট, সিপিএমের থেকে ৬ শতাংশ বেশি।

জয়ের উচ্ছ্বাস বিশ্বনাথ পাড়িয়ালের।

জয়ের উচ্ছ্বাস বিশ্বনাথ পাড়িয়ালের।

সুব্রত সীট
দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ২০ মে ২০১৬ ০১:৫৬
Share: Save:

পাঁচ বছরেই পাল্টে গেল পাশা। দুর্গাপুর হাতছাড়া হয়ে গেল তৃণমূলের।

গত বিধানসভা ভোটে দুর্গাপুর পূর্বে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট বেঁধে তৃণমূল প্রার্থী নিখিল বন্দ্যোপাধ্যায় পেয়েছিলেন ৫১ শতাংশ ভোট, সিপিএমের থেকে ৬ শতাংশ বেশি। বিজেপি পেয়েছিল ৪ শতাংশ ভোট। অথচ, ২০১৪-র লোকসভা ভোটে আলাদা লড়ে তৃণমূল পেয়েছিল ৩৬ শতাংশেরও কম ভোট। সিপিএমের সঙ্গে ব্যবধান ছিল এক শতাংশেরও নীচে। কংগ্রেস পায় সাড়ে ৪ শতাংশ ভোট। এ বার কংগ্রেসের সঙ্গে জোট হওয়ায় আশাবাদী ছিল সিপিএম। ইস্পাতনগরীতে সিপিএমের এগিয়ে থাকার সম্ভাবনা থাকলেও কাঁকসার মলানদিঘি, আমলাজোড়া ও গোপালপুর পঞ্চায়েত এলাকায় ভাল ‘লিড’ আসবে, ভেবেছিলেন তৃণমূল নেতৃত্ব। কিন্তু তা হয়নি। প্রায় শুরু থেকে শেষ পর্যন্তই এগিয়ে থেকে জিতে গেলেন সিপিএম প্রার্থী সন্তোষ দেবরায়।

এ বার এই কেন্দ্রে তৃণমূলের প্রার্থী ছিলেন প্রাক্তন আমলা, কলকাতার প্রদীপ মজুমদার। দলের একাংশ নিখিলবাবুকেই ফের প্রার্থী হিসেবে চেয়েছিলেন। এমনকী, নিখিলবাবুর প্রার্থিপদের সমর্থনে দেওয়াল লিখন হয়, পোস্টারও পড়ে। দলের নেতারা প্রকাশ্যে একে ‘সিপিএমের কারসাজি’ বলে উড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলেও শেষরক্ষা হয়নি। এ দিন হারের পরে প্রদীপবাবু বলেন, ‘‘এখানে মানুষের কাছে স্থানীয় বিষয় গুরুত্ব পেয়েছে। তাছাড়া দলের নেতাদের মধ্যে অন্তর্দ্বন্দ্বও দেখেছি। মানুষের রাগ আছে কিছু নেতার উপরে। সব মিলিয়ে এই ফল।’’

পুরসভার ১১ থেকে ২২ এবং ২৯ থেকে ৪৩ নম্বর— মোট ২৭টি ওয়ার্ড নিয়ে দুর্গাপুর পশ্চিম বিধানসভা কেন্দ্র। পুরোটাই শহর এলাকা। গত বার এই কেন্দ্র বামেদের হাত থেকে ছিনিয়ে নিয়েছিল তৃণমূল। সে বার তৃণমূল-কংগ্রেস জোট পেয়েছিল প্রায় ৫২ শতাংশ ভোট। সিপিএম এবং বিজেপি পায় যথাক্রমে ৪২ ও ৩ শতাংশ ভোট। পরের বছর দুর্গাপুর পুরসভাও বামেদের থেকে ছিনিয়ে নেয় তৃণমূল। ২০১৪-র লোকসভা ভোটে এখানে তারা পায় ৬৩ হাজার ৮১৮। দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসে বিজেপি। তারা পায় ৫৫ হাজার ৫৩১টি ভোট। সিপিএমের ঝুলিতে আসে ৫৫ হাজার ৪৩৪টি ভোট। কংগ্রেস পেয়েছিল হাজার আটেকের সামান্য বেশি ভোট। এ বার ভোটে দল ফের প্রার্থী করে বিদায়ী বিধায়ক মেয়র অপূর্ব মুখোপাধ্যায়কে। গত বিধানসভার তুলনায় ২০১২-র পুরভোটে ৯টি ওয়ার্ডে ভোট বেড়েছিল তৃণমূলের। কিন্তু ভোট কমে যায় ১৮টি ওয়ার্ডে। আবার পুরভোটের তুলনায় ২০১৪-র লোকসভা ভোটে একটি ওয়ার্ড বাদে সব ক’টিতেই ১০-২০ শতাংশ করে ভোট কমে তৃণমূলের।

ট বৈতরণী পেরোতে এ বার তৃণমূল বাজি রেখেছিল শহরের উন্নয়ন। তাদের আশা ছিল, পুর-প্রশাসনে অপূর্ববাবুর সাফল্য তাঁর পক্ষে যাবে। সিপিএমের অবশ্য অভিযোগ ছিল, নাগরিক পরিষেবা বেহাল হয়ে পড়েছে। সিপিএমের তরফে গণস্বাক্ষর সংগ্রহ করে পুরসভা অভিযানের কর্মসূচি নেওয়া হয়। তবু খুব একটা উদ্বিগ্ন ছিলেন না তৃণমূল নেতৃত্ব। কিন্তু ভোটের ঠিক আগে দলের পনেরো বছরের পুরনো কাউন্সিলর বিশ্বনাথ পাড়িয়াল দল ছেড়ে বাম সমর্থিত কংগ্রেসের প্রার্থী হয়ে যাওয়ায় লড়াই কঠিন হয়ে পড়ে অপূর্ববাবুর।

বিশ্বনাথবাবু প্রচারে বারবার দাবি করেছেন, মেয়র হিসেবে অপূর্ববাবু ব্যর্থ। তিনি দুপুরের পরে আর পুরসভায় থাকেন না। তিনি জয়ী হলে দুর্গাপুরের সার্বিক উন্নয়নে জোর দেবেন। প্রায় ৪৪ হাজার ভোটে জেতার পরে তিনি বলেন, ‘‘এ বার আমার লক্ষ্য ২০১৭ সালের পুরভোট। দুর্গাপুরের উন্নয়ন করতে গেলে পুরসভার দায়িত্ব পেতেই হবে।’’ অপূর্ববাবু শুধু বলেন, ‘‘কেন এমন ফল দল নিশ্চয়ই তা পর্যালোচনা করবে।’’

—নিজস্ব চিত্র।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

assembly election 2016 TMC CPM
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE