Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

ভক্তির মুচলেকা কংগ্রেস বিধায়কদের

জোট তো রক্ষা করতে হবেই। রক্ষা করতে হবে দলকেও! দলত্যাগ আটকাতে এ বার তাই অভিনব কৌশল নিল কংগ্রেস। সদ্যনির্বাচিত ৪৪ জন বিধায়ককেই স্ট্যাম্প পেপারে সই করে মুচলেকা দিয়ে দলকে জানাতে হল, কোনও অবস্থাতেই তাঁরা কংগ্রেস ছেড়ে যাবেন না!

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ মে ২০১৬ ০৩:২৯
Share: Save:

জোট তো রক্ষা করতে হবেই। রক্ষা করতে হবে দলকেও! দলত্যাগ আটকাতে এ বার তাই অভিনব কৌশল নিল কংগ্রেস। সদ্যনির্বাচিত ৪৪ জন বিধায়ককেই স্ট্যাম্প পেপারে সই করে মুচলেকা দিয়ে দলকে জানাতে হল, কোনও অবস্থাতেই তাঁরা কংগ্রেস ছেড়ে যাবেন না!

তৃণমূলের সঙ্গে জোট বেঁধে ২০১১ সালে কংগ্রেস পেয়েছিল ৪২ জন বিধায়ক। পরের পাঁচ বছরে দল ছেড়ে মোট ১১ জন বিধায়ক তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন। এ বার বামেদের সঙ্গে জোট করে কংগ্রেস ৪৪টি আসন জিতেছে। তৃণমূল ২১১টি আসন পেয়ে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে। কিন্তু তার পরেও কংগ্রেসের কিছু বিধায়ককে দলে টানার জন্য তৃণমূলের তরফে টোপ দেওয়া শুরু হয়েছে বলে কংগ্রেস সূত্রের খবর। এই প্রেক্ষিতে মঙ্গলবার দলের জয়ী ও পরাজিত প্রার্থী এবং জেলা সভাপতিদের নিয়ে বৈঠকে বিধায়কদের কাছ থেকে দল না ছাড়ার শপথ আদায় করেছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভিপতি অধীর চৌধুরী। ১০০ টাকার নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প পেপারের যে ঘোষণাপত্রে বিধায়কেরা সই করেছন, তাতে বলা আছে, তাঁদের প্রশ্নহীন আনুগত্য কংগ্রেসের প্রতি। দল-বিরোধী কোনও কাজ বা বিবৃতিতে তাঁরা জড়াবেন না। দলের বিরুদ্ধাচরণ করতে হলে বিধায়ক পদে ইস্তফা দিয়ে করবেন।

দলীয় সূত্রে খবর, ৩৯ জন বিধায়ক স্ট্যাম্প পেপারে সই করেছেন। আগে বেরিয়ে যাওয়ায় যে ক’জনের সই হয়নি, তাঁদেরকেও শপথের বয়ান পড়িয়ে নেওয়া হয়েছে। দলের একটি সূত্রের খবর, ভোটের ঠিক আগেই তৃণমূল ছেড়়ে কংগ্রেসে যোগ দিয়ে জয়ী হয়েছেন এমন এক প্রার্থী বৈঠকে বলেছেন, তাঁদের নিয়ে নানা জল্পনা উড়ছে। কিন্তু কঠিন পরিস্থিতিতে কংগ্রেসে যোগ দেওয়ার পর ছেড়ে দেওয়ার বান্দা তিনি নন। যদিও তৃণমূল সূত্রের দাবি, স্ট্যাম্প পেপারে সই করলেও কংগ্রেস বিধায়কদের কেউ কেউ শাসক শিবিরে যোগাযোগ করছেন!

বৈঠকের পরে অধীর বলেন, ‘‘সব বিধায়কদের দিয়েই দল না ছাড়ার শপথ করানো হয়েছে। আমাদের প্রস্তাবে রাজি হয়ে সকলেই স্বেচ্ছায় সই করেছেন।’’ তবে স্ট্যাম্প পেপারে সই হয়ে থাকলেও দলবদল একেবারে রুখে দেওয়া যে এ ভাবে সম্ভব নয়, সেটাও কংগ্রেস নেতারা জানেন। এক বর্ষীয়ান বিধায়কের কথায়, ‘‘এটা কোনও আইনি রক্ষাকবচ নয়। স্বেচ্ছায় একটা নৈতিক অবস্থান নেওয়া হয়েছে।’’

দলের মনোবল ধরে রাখতেই এ দিন জয়ীদের পাশাপাশি পরাজিত প্রার্থীদেরও সংবর্ধনা দিয়েছেন অধীর। সংখ্যালঘু শাখার নেতা খালেদ এবাদুল্লা বৈঠকে প্রস্তাব দিয়েছেন, বামেদের সঙ্গে জোটকে আরও পাকাপোক্ত করতে জেলায় জেলায় সমন্বয় কমিটি গড়া হোক। প্রস্তাব মেনে নিয়েছেন অধীর। সিপিএমের রাজ্য নেতৃত্বেরও এতে আপত্তি নেই। সন্ত্রাসের (বেলেঘাটার সিপিএম প্রার্থী রাজীব বিশ্বাসের বাড়িতে এ দিনই হামলার অভিযোগ উঠেছে) প্রতিবাদে আজ, বুধবার থেকে ধর্মতলায় কলকাতা জেলা বামফ্রন্টের যে দু’দিনের অবস্থান শুরু হচ্ছে, তাতে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন স্বয়ং অধীর-সহ কংগ্রেস নেতারা। আবার শুক্রবার একই জায়গায় কংগ্রেসের অবস্থানে ডাকা হবে বামেদের। অধীর বলেন, ‘‘সন্ত্রাসের প্রতিবাদেই মন্ত্রিসভার শপথ অনুষ্ঠান বয়কট করছি আমরা। বিরোধী পক্ষ হিসাবে যা যা করার দরকার, জোট বেঁধে আমরা তা-ই করব।’’

ঘটনাচক্রে, সিপিআইয়ের রাজ্য পরিষদের সিদ্ধান্ত জানাতে গিয়ে এ দিনই দলের রাজ্য সম্পাদক প্রবোধ পণ্ডা বলেছেন, কংগ্রেসের সঙ্গে বামেদের আসন সমঝোতা না জোট, তা নিয়ে বিভ্রান্তির প্রভাব ভোটে পড়েছে। আবার আরএসপি-র রাজ্য কমিটির বৈঠকে জোটের নামে সিপিএমের বিরুদ্ধে অন্তর্ঘাতের অভিযোগ উঠেছে! তবে এত কিছুর পরেও রাজ্যে কংগ্রেসের সঙ্গে হাত মিলিয়েই তৃণমূলের বিরোধিতার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিপিআই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

congress assembly election 2016
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE