Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

গৃহযুদ্ধ চাইছে না জোট, তবে লড়াই পথে নেমে

মুখ্যমন্ত্রী শপথ নেওয়ার আগেই পথে নেমে পড়ে বিরোধী জোট জানিয়ে দিল, সরকারের বিরুদ্ধে আগামী পাঁচ বছর এ ভাবেই লড়াই হবে। শাসক দলের সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে বিরোধীদের আরও ঘোষণা— রাজ্যে তারা গৃহযুদ্ধ চায় না।

পাশে আছি। বাম ধর্নায় বিমান বসু ও আব্দুল মান্নান। বুধবার ধর্মতলায়। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।

পাশে আছি। বাম ধর্নায় বিমান বসু ও আব্দুল মান্নান। বুধবার ধর্মতলায়। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ মে ২০১৬ ০৩:৪৮
Share: Save:

মুখ্যমন্ত্রী শপথ নেওয়ার আগেই পথে নেমে পড়ে বিরোধী জোট জানিয়ে দিল, সরকারের বিরুদ্ধে আগামী পাঁচ বছর এ ভাবেই লড়াই হবে। শাসক দলের সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে বিরোধীদের আরও ঘোষণা— রাজ্যে তারা গৃহযুদ্ধ চায় না।

ভোটের ফলপ্রকাশের পরে কলকাতা-সহ রাজ্যের নানা প্রান্তে যে আক্রমণ চলছে, তার প্রতিবাদে বুধবার থেকে দু’দিনের অবস্থান-বিক্ষোভ শুরু করেছে কলকাতা জেলা বামফ্রন্ট। অবস্থানে যোগ দিয়ে আব্দুল মান্নান, মনোজ চক্রবর্তী, ওমপ্রকাশ মিশ্রের মতো কংগ্রেস নেতারাও বামেদের সঙ্গে একযোগে সরকারকে রাজধর্ম পালনের আহ্বান জানিয়েছেন। কর্মসূচির শেষ দিনে আজ, বৃহস্পতিবার অবস্থান-মঞ্চে যাওয়ার কথা সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র ও প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর। ভোটে হেরে যাওয়ার মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যে বিরোধীদের এ দিনের কর্মসূচিতে কিন্তু ভিড় হয়েছিল ভালই। পাঁচ বছর আগে ভোটের ফলপ্রকাশের বেশ কিছু দিন পরে প্রথম রাস্তায় বেরিয়ে বামেদের যে অভিজ্ঞতা হয়েছিল, এ বারের ছবি ছিল তার চেয়ে আলাদা।

ভোট মিটতে না মিটতেই রাজ্যের নানা জায়গায় বিরোধী দলের কর্মী-সমর্থকদের উপরে হামলার অভিযোগ উঠছে শাসক দলের বিরুদ্ধে। বিরোধী শিবিরের প্রার্থী, এজেন্ট, সমর্থকদের বাড়িতে হামলা হচ্ছে, দলীয় কার্যালয় ভাঙচুর ও দখল হচ্ছে, আর্থিক জরিমানা করা হচ্ছে (অধীর ও বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু যাকে বলছেন ‘জিজিয়া কর’)। পরিস্থিতি সামলাতে রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী তদারকি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি দিয়েছেন। বাম ও কংগ্রেস নেতারা জানিয়েছেন, তাণ্ডবের প্রতিবাদে এ বার জেলায় জেলায় কর্মসূচি নেওয়া হবে। ঘরছাড়াদের নিয়ে কোচবিহার জেলা বামফ্রন্ট অনির্দিষ্ট কালের অবস্থান শুরু করেছে। প্রতিবাদের বাকি রূপরেখা ঠিক করতে আজ, বৃহস্পতিবারই রাজ্য বামফ্রন্টের বৈঠক বসছে।

বাম ও কংগ্রেস নেতারা বুঝে নিয়েছেন, জোট বেঁধে থাকাই তাঁদের ভরসা। অবস্থান-মঞ্চ থেকে বিমানবাবু বলেছেন, ‘‘যা চলছে, গণতন্ত্রে এ জিনিস হতে পারে না! গণতন্ত্র রক্ষা করতেই মানুষের জোট তৈরির কথা বলা হয়েছিল। মানুষের জোটের সেই লড়াই চলবে। কংগ্রেসও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার কর্মসূচি অব্যাহত রাখবে।’’ কংগ্রেস নেতা ওমপ্রকাশ একই কথা বলেন। একইদিনে নদিয়ায় জেলা কমিটির বৈঠকে যোগ দিতে গিয়ে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র ফের জানিয়েছেন— মানুষের জোট ছিল, আছে, থাকবে।

সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিম উল্লেখ করেছেন, পাড়ায় পাড়ায় যে ভাবে ৪০-৫০ জনের তৃণমূল বাহিনী দল বেঁধে হামলা চালাচ্ছে, তার বিরুদ্ধে কিছু লোক বিরোধীরাও জড়ো করতে পারে। কিন্তু তাতে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হবে। সেলিমের কথায়, ‘‘আমরা রাজ্যে গৃহযুদ্ধ চাইছি না। গণতন্ত্রে মানুষের রায় মাথা পেতে নিয়েছি। দেখা যাচ্ছে, তৃণমূলই মানুষের রায় মানছে না! তৃণমূলকে যাঁরা ভোট দিয়েছেন, তাঁদেরও বড় অংশ নিশ্চয়ই গুন্ডারাজ চান না।’’ তবে একই সঙ্গে সিপিএম সাংসদ মনে করিয়ে দিয়েছেন, ‘‘জুলুম চলতেই থাকবে আর আমরা দেখতেই থাকব, এটা হতে পারে না! এ ভাবে আমাদের শেষ করা যাবে না! রাস্তায় নেমে শপথ নিচ্ছি, আগামী পাঁচ বছর রাস্তায় থেকেই বিরোধিতা করব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

CPM congress alliance
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE